রূপপুরে একসঙ্গে কাজ করতে চান রুশ-ইউক্রেনিয়ানরা
গত ১০ দিনে রাশিয়ার হামলায় তছনছ ইউক্রেন। পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হচ্ছে দেশটিতে। প্রতিদিনই নিহতের সংখ্যা বাড়ছে। দেশে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি চললেও বাংলাদেশে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে কর্মরত রাশিয়ান ও ইউক্রেনিয়ানরা যুদ্ধের আঁচ গায়ে লাগাতে চান না।
দফায় দফায় হামলা-বিস্ফোরণে নিজের দেশ তছনছ হয়ে যাচ্ছে, শেষ হয়ে গেছে হাজারো ইউক্রেনীয়র জীবন। এমন পরিস্থিতি তাদের হৃদয় ভেঙে দিলেও বাংলাদেশে রাশিয়ানদের সঙ্গে বন্ধুর মতোই চলছেন ইউক্রেনিয়ানরা।
রূপপুরে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিক, দোকানদার ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা আগের মতোই একসঙ্গে চলাফেরা করছেন। একই সঙ্গে শপিং করছেন, বাজার করছেন, হোটেল-রেস্টুরেন্টে খাওয়া-দাওয়া করছেন। তবে তাদের মধ্যে দেশ ও দেশের মানুষদের নিয়ে উদ্বেগ দেখা গেছে। স্থানীয় দোভাষীদের কাছে পরিবার-পরিজন নিয়ে চিন্তার কথা জানিয়েছেন অনেক ইউক্রেনীয়।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আসিফ জামান ও মারুফ জোয়ার্দার জানান, রাশিয়া-ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হলেও রূপপুর প্রকল্পে কর্মরত রুশ-ইউক্রেনীয় নাগরিকদের মধ্যে কোনো প্রকার সহিংসতার ভাব দেখা যায়নি। একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছেন দুই দেশের কর্মকর্তা ও শ্রমিকরা। হোটেল-রেস্টুরেন্টে তারা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে চলছেন। তবে পরিবার-পরিজন নিয়ে চিন্তিত থাকতে দেখা গেছে তাদের।
রূপপুর প্রকল্পে কর্মরত রাশিয়ান নাগরিক দিমা বলেন, আমাদের দুই দেশে যুদ্ধ চললেও এখানে কোনো প্রভাব নেই। স্বাভাবিক নিয়মেই আমাদের কাজ সম্পাদন করে যাচ্ছি।
ইউক্রেনীয় নাগরিক স্লেভেনি বলেন, আমরা যুদ্ধের পক্ষে নই, শান্তির পক্ষে। যদিও আমরা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছি, আমাদের মন পড়ে আছে আমাদের দেশে। আমি চাই এ যুদ্ধ থেমে যাক। এখানে কোনো প্রভাব না পড়লেও পরিবার নিয়ে চিন্তিত আমরা।
এ বিষয়ে প্রকল্পের সাইট ইনচার্জ রুহুল কুদ্দুস ঢাকা পোস্টকে বলেন, যুদ্ধের প্রভাব তাদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়নি। তবে পরিবার-পরিজন নিয়ে চিন্তা-উদ্বেগ থাকাটা খুবই স্বাভাবিক।
দুই দেশের নাগরিকদের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক থাকলেও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সেখানে তাদের মধ্যে কোনো ধরনের মনোমালিন্য যেন না হয়, সেজন্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে।
সম্প্রতি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পক্ষ থেকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যেন রূপপুর প্রকল্পের ভেতর রাশিয়া ও ইউক্রেনের নাগরিকদের ওপর বিশেষ নজর রাখা হয়। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, যুদ্ধের প্রভাব তাদের ওপরও পড়তে পারে। যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে আগে থেকেই সতর্ক থাকতে হবে। এ সময় বেলারুশিয়ানদের বিষয়েও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
এদিকে রূপপুরে যুদ্ধের প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছে প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রসাটম। এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে রাশিয়ান এই প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের কারণে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ কাজে অচলাবস্থার আশঙ্কা নেই। এই ইস্যুতে রূপপুর প্রকল্পে কোনো ধরনের প্রভাব পড়বে না। নির্ধারিত সময়েই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৩ সালে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট চালুর কথা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে পাবনার ঈশ্বরদীতে। ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিট নির্মাণ করা হচ্ছে রূপপুরে। এতে খরচ হচ্ছে প্রায় ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার দেবে ২২ হাজার ৫২ কোটি ৯১ লাখ ২৭ হাজার টাকা আর রাশিয়া থেকে ঋণসহায়তা হিসেবে আসছে ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা।
এনএ/জেএস