‘বাবায় কইছিল আমারে জাহাজ ঘুরাইয়া দেখাইব’
‘আমার বাবায় আমায় কইছিল জাহাজ দেহাইবে, ঘুরাইয়া দেহাইবে সব। কিন্তু তা আর হইল না, আহারে আমার বাবা।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে এমনটাই জানাচ্ছিলেন ইউক্রেনে রকেট হামলায় নিহত হাদিসুর রহমান আরিফের মা আমেনা বেগম।
ইউক্রেনে বাংলাদেশি জাহাজ ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’তে রকেট হামলায় নিহত হাদিসুর রহমান আরিফের বাড়ি বরগুনার বেতাগীতে। তিনি উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদারের ছেলে।
নিহত প্রকৌশলী হাদিসুরের মা আমেনা বেগম বলেন, মায়ের কাছে সন্তানের মৃত্যু কতটা বেদনাদায়ক তা একমাত্র যার সাথে ঘটে সে-ই বুঝতে পারবে। আমার বাবায় (হাদিসুর) কোনো দিন আমার অবাধ্য হয়নাই। লেখাপড়ায়ও ভালো ছিল।
ছেলে নিয়মিত খোঁজ নিতেন, সেই স্মৃতি মনে করে তিনি বলেন, বাবায় আমারে কইছিলে আমারে বিদেশ নিয়া যাইবে, ওগো জাহাজ ঘুরাইয়া দেখইবে। কিন্তু তা আর হইল না। আমার নাড়ি ছেঁড়া ধন চইলা গেল। এহন কে আমারে ফোন কইরা ওষুধ খাওয়ার জন্য তাড়া দেবে, কে ফোন কইরা খাইছি কিনা জিগাইবে।
আমেনা বেগম আরও বলেন, আমার ছেলে তো আর বাইচ্চা নাই। এহন লাশটা যাতে পাইতে পারি যে জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ রইল। লাশ না পাইলে আমার বাবার চিহ্নটাই থাকবে না।
চার ভাইবোনের মধ্যে হাদিসুর ছিলেন দ্বিতীয়। ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছিলেন হাদিসুর। মেরিন ইঞ্জিয়ার হয়ে ২০১৫ সালে এমভি বাংলার সমৃদ্ধিতে থার্ড ইঞ্জিনিয়ার পদে যোগদান করেন। হাদিসুলের মারা যাওয়ার খবরে শোকে স্তব্ধ পুরো এলাকা।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ সময় বুধবার রাত ৯টা ২৫ মিনিটে ইউক্রেনের বন্দরে থাকা পণ্যবাহী জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধি’তে রকেট হামলা চালায় রাশিয়ান সেনারা। এতে জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান আরিফ অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান। বাকি ২৮ জন নিরাপদে রয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির কমান্ড্যান্ট সাজিদ হুসাইন।
এনএ