কর্ণাটকে হিজাব নিষিদ্ধের প্রতিবাদে ঢাকায় সংহতি সমাবেশ
ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কর্ণাটকে একটি সরকারি কলেজে মুসলিম শিক্ষার্থীদের হিজাব নিষিদ্ধ এবং হিজাব পরিহিতা মুসলিম নারীকে হেনস্তার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম্যে বেশ ভাইরাল হয়েছে। এর প্রতিবাদে সেখানে আন্দোলন চলছে। তাদের সেই চলমান আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে বাংলাদেশেও সমাবেশ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা। এ সময় তারা হিজাব নিষিদ্ধের তীব্র নিন্দা ও সমালোচনা জানিয়ে অতি দ্রুত সমস্যার স্থায়ী সমাধানের দাবি জানান।
সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী সায়দা জান্নাত বলেন, ভারতের সংবিধান অনুযায়ী হিজাব পরা একজন ব্যক্তির সাংবিধানিক অধিকার। এ বিষয়ে যখন নিষেধাজ্ঞা আসে তখন চুপ করে থাকার সময় থাকে না। ছেলে ও মেয়েরা কী পরবে এটা তার ব্যক্তিগত বিষয়। আশা করি ভবিষ্যতে আর এ ধরনের ঘটনা ঘটবে না এবং এর একটি সুরাহা হবে।
জয়দেব চন্দ্র রায় নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, একজন সনাতন ধর্মাবলম্বী হিসেবে বিষয়টি নিয়ে খুব লজ্জা বোধ করছি। আমি তো মনে করি আমার মা কিংবা বোন যদি বোরকা পরতে চায়, পরতের পারে। এটাতে তো কাউকে বাধ্য করা যাবে না। কিন্তু সেখানে যা হয়েছে, তা আমার জন্য লজ্জার। এটা রাষ্ট্রীয়ভাবে করা হচ্ছে। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান বলেন, আমরা যখন এখানে দাঁড়িয়ে ভারতের মেয়েদের জন্য সংহতি প্রকাশ করছি তখন এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও আমাদের স্যার-ম্যাডামদের কাছ থেকে হিজাব নিয়ে কথা শুনতে হয়। যারা হিজাব পরেন তারা পিছিয়ে পড়া, পক্ষপাতদুষ্ট এসব বলা হয়। আমরা বলতে চাই বাংলাদেশেও যে যার ইচ্ছামতো পোশাক পরবে। এটাতে কোনো বাঁধা দেওয়া চলবে না।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নুসরাত তাবাসসুম বলেন, মানুষ কোন পোশাক পরবে, আর কোনটা পরবে না সেটা তার নিজস্ব বিষয়। এভাবে পুরো উপমহাদেশে ইসলাম বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেওয়া এবং কট্টর হিন্দুত্ববাদ সন্ত্রাস তৈরি করাকে আমরা বর্তমান ভারত সরকারের একটি হিন্দুত্ববাদী চাল হিসেবে দেখছি। হিজাব যে শুধু মুসলিম নারীরা পরে তা নয়। আমরা যদি খ্রিষ্টান সেবিকাদের দেখি, তারাও হিজাব পরে। অনেক হিন্দু বিধবারাও মাথা ঢাকতে পছন্দ করেন। কিন্তু এভাবে বাধানিষেধ সৃষ্টি সন্ত্রাসমূলক কাজ।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী আশরেফা তাসনিম বলেন, হিজাব পরাকে যখন আমি আফগানি ও তালেবানি পোশাকের সঙ্গে তুলনা করব, তখনই এটা হচ্ছে সাম্প্রদায়িকতার প্রতীক। আমরা যে অসাম্প্রদায়িকতার নামে বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিচ্ছি সবার মনে, এটাই সবচেয়ে বড় সহিংসতা। আমার দেশে যখন সম্প্রীতি থাকবে, তখন আমি বোরকা পরব, আমার বান্ধবী সিঁদুর-শাখা পরবে, কেউ কামিজ পরবে।
এইচআর/এমএইচএস