পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স না পাওয়া আদনান এখন গুগলের প্রকৌশলী
বিশ্বের সর্ববৃহৎ সার্চ ইঞ্জিন ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান গুগলে চাকরি পেয়েছেন সিলেটের নাফিউল আদনান চৌধুরী। সিলেট মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়টির কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের সাবেক এ শিক্ষার্থী গুগলের আয়ারল্যান্ড (ডাবলিন) অফিসে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার (সাইট রিলায়েবিলিটি ইঞ্জিনিয়ার) হিসেবে কাজ করবেন। গত ৩১ জানুয়ারি গুগলের রিক্রুটমেন্ট বিভাগ থেকে তার চাকরি নিশ্চিত করা হয়। আগামী জুন অথবা জুলাইয়ে তিনি কাজে যোগ দেবেন।
গুগলে চাকরি পাওয়ার বিষয়টি আদনান নিজেই ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে জানিয়েছেন। তার স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো;
“আলহামদুলিল্লাহ রাব্বিল আলামিন!
পাবলিকে চান্স না পেয়ে এক বছর গ্যাপ দিই, কোথাও চান্স না পাওয়ায় এমনিতেই ডিপ্রেশনে চলে গিয়েছিলাম। তারপর সিএসইতে ভর্তি হই শুধুমাত্র এই চিন্তা নিয়ে যে, দিনরাত পিসিতে বসে গেম/ মুভি দেখলেও আব্বু আম্মু ভাববে পড়াশোনা করছি। ভর্তির সময় একজন বলেন ‘ফিজিক্স ম্যাথে এ+ নেই, সিএসই কী পারবা তুমি?’
গুগলে জব কী জিনিস জানতাম না। প্রথম সেমিস্টারে একজন স্যার নিয়ে আসেন উনার ফ্রেন্ড একজনকে যিনি সাস্ট থেকে গুগলে জব অফার পেয়েছিলেন। ওনার কাছ থেকে জানতে পারলাম গুগলে জব করা/পাওয়া বিশাল ব্যাপার। তবে সেটা জানা পর্যন্তই ছিল, আর কিছু না। বিভিন্ন স্যার ম্যাম কোডিং শিখতে বলতেন, কিন্তু এসব কী সবাই শুনে?
প্রথম বছর যেতে লাগল, সবার মতো আমারও ধারণা হয়ে গেলো প্রাইভেটে পড়ছি, শুধু টাকাই ফেলছি, লাইফে যে কী করবো! বছরের শেষের দিকে সাস্টে প্রোগ্রামিং কম্পিটিশন (সিএসই কার্নিভাল) টিম হিসেবে প্রথমবারের মতো যাই । সেটার পেছনে বিশাল কাহিনি, একজন ম্যামের কাছে বিশাল কৃতজ্ঞ।
এরপর শুরু হয় প্রবলেম সল্ভিং, কম্পিটিটিভ প্রোগ্রামিং কম্পিটিশন এর লাইফ! আহা! বিভিন্ন স্যার, তাদের ফ্রেন্ড, বড় ভাই, আপু, ফ্রেন্ডস, টিমমেট, অন্য ভার্সিটির ফ্রেন্ডদের হেল্প। আমি যে কারো কাছে হেল্প চাইতে কখনোই লজ্জাবোধ করিনি। আমার ভার্সিটির জুনিয়ররাও আমাকে অনেক টপিক শিখিয়েছে, ইভেন একটা ইন্টারভিউয়ের আগে কাছের এক জুনিয়রকে কল দিয়ে একটা টপিক বুঝিয়ে দিতে বলেছিলাম।
... ডিসেম্বরের ৬ তারিখ গুগলে প্রথম রাউন্ড দিলাম। পরের দিনই জানালো আমি ফাইনাল রাউন্ড কবে ফেস করতে চাই। কিছুদিন সময় নিয়ে প্রথমে ফেব্রুয়ারিতে দেব ঠিক করলেও পরে সেটা শিডিউল করে ফেলি জানুয়ারির ২০, ২১ তারিখে। দুই দিনে টোটাল ৫টা ইন্টারভিউ দিয়ে জীবনের সবচেয়ে লম্বা ১০ দিন কাটিয়ে ৩১ তারিখ চলে এলো। গুগলের রিক্রুটার কল দিল দুপুরে বলল, “You totally Smashed the Interviews! We are offering you the job now, are you willing to join Google, Dublin?”
পাশে আমার বউ লাফালাফি শুরু করে দিয়েছে, আমি কলে থাকা অবস্থায়ই দৌড়ে গিয়ে আব্বু আম্মুকে জানাল। পাশের রুমে আব্বু আম্মু কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছেন। এই কয়েকজন মানুষ; আমার ভাই, বোন, বউ, আব্বু, আম্মু, আমার জন্য কী যে স্যাক্রিফাইস করে করে এসেছেন এতটা দিন ধরে বলার মতো না। কেউ হাসছে, কেউ কাঁদছে, আমি বুঝতে পারছিলাম না আমি কী করব! আমার মনে হলো, এ মানুষদের খুশির জন্যই এ প্রাপ্তিটা আমার দরকার ছিল।
আত্মীয় স্বজন, কাছের বন্ধু-বান্ধব, জুনিয়র, সিনিয়র, টিচার্স এবং বিভিন্ন সময়ে যেকোনো উপায়ে যারা আমাকে হেল্প/উৎসাহ দিয়ে এসেছেন, আমার উপর বিশ্বাস রেখেছেন, সবার কাছে আমার কৃতজ্ঞতা। আমার এতদূর আসার পেছনে অবদান রাখা মানুষের সংখ্যা অনেক অনেক বেশি। সবচেয়ে প্রশান্তির ব্যাপার হচ্ছে আমার কাছের অনেকেই আছেন যারা মনে করে এই প্রাপ্তিটা তাদেরও, আসলে সত্যিই তাই!
আলহামদুলিল্লাহ্।”
এ বিষয়ে নাফিউল আদনান চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি আসলে খুবই ব্লেসড গুগলে প্রথম চেষ্টায়ই অফার পেয়ে যাওয়ার জন্য। আমার পাশের সবাই, ফ্যামিলির সাপোর্ট, আল্লাহর রহমত ছাড়া এটা সম্ভব হতো না। এটা ভালো লাগছে দেখে যে অনেকেই অবাক হয়েছে আমার জায়গা থেকে, এতদূরে যেতে পেরেছি দেখে এবং ইন্সপায়ার্ডও হয়েছে। আমিও এটাই বলব, গন্তব্যে পৌঁছাতে একবার দুবার পিছিয়ে পড়লেও আবার উঠে দাঁড়ানো উচিত।
এএজে/এসকেডি