ভিসি ফরিদ উদ্দিন একটা দানব : জাফর ইকবাল
শাবিপ্রবির উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙানোর পর ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেছেন, ‘শাবি ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ একটা দানব। শিক্ষার্থীদের এমন অবস্থা দেখেও যার মন গলে না, নিজের জায়গায় অনড় থাকেন; আমি তাকে অন্তত মানুষ বলতে পারি না, তিনি দানব।’
বুধবার (২৬ জানুয়ারি) সকালে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙানোর পর তিনি এসব কথা বলেন।
ড. জাফর ইকবাল শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘তোমরা কেন তোমাদের জীবন অপচয় করবে? তোমাদের বাঁচতে হবে। তোমরা ইতোমধ্যেই বিজয়ী হয়ে গেছ। সারা দেশের মানুষ তোমাদের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের ঘুম হারাম করে দিয়েছ। জীবন অনেক মূল্যবান। তুচ্ছ বিষয়ে জীবন অপচয় করা যাবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের ঊর্ধ্বতন মহল থেকে আমাদের নিশ্চিত করা হয়েছে, তোমাদের দাবি মানা হবে। দুটি মামলাই ওঠানো হবে। আর সে কারণেই আমরা এসেছি। নিশ্চিত না হলেও আমরা আসতাম, কিন্তু তোমাদেরকে অনশন ভাঙতে বলতে পারতাম না।’
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে জাফর ইকবাল বলেন, ‘তোমরা যে কাজটা করেছ, নিশ্চিত থেক, তোমাদের কারণে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়, ভিসি সিস্টেমটা ঠিক হবে। তোমরা ৩৪ জন ভিসির ঘুম হারাম করে দিয়েছ।’
এর আগে সকাল ১০টা ২২ মিনিটে অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের অনুরোধে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অনশন ভাঙেন। টানা ৭ দিন অনশন পালনের পর জাফর ইকবালের হাতে পানি পান করে তারা অনশন ভাঙেন।
তবে অনশন ভাঙলেও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র ইয়াসির সরকার বলেন, আমরা অনশন কর্মসূচি থেকে সরে এলেও উপাচার্য পদত্যাগের আন্দোলন চালিয়ে যাব। এই উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
বুধবার ভোর ৪টায় ড. জাফর ইকবাল সস্ত্রীক শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে উপস্থিত হন। তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। দুই ঘণ্টার বেশি সময় অনশনস্থলে বসে শিক্ষার্থীদের সব কথা শুনেন তিনি। শিক্ষার্থীরা গত ১৬ জানুয়ারি পুলিশি হামলার ঘটনা বর্ণনা করেন। এরপর সকাল ৮টায় শিক্ষার্থীরা অনশন ভাঙবেন বলে কথা দেন জাফর ইকবালকে।
ড. জাফর ইকবাল বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ওপর এমন হামলার ঘটনাটি খুবই নিন্দনীয়। এখানে শিক্ষার্থীরা সবাই শীতে কষ্ট করছে। শিক্ষার্থীদের শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ কিন্তু তাদের জন্য কোনো মেডিকেল টিম নেই। যারা তাদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করত তাদেরও গ্রেফতার করা হয়েছে। যা খুবই নিন্দনীয় একটি কাজ।’
শিক্ষার্থীদের সব অভিযোগ ও দাবি শোনার পর ড. জাফর ইকবাল বলেন, ‘তোমরা আমাকে গণমাধ্যমের সামনে কথা দিয়েছ, এই অনশন ভাঙবে। তোমাদের জীবন অনেক মূল্যবান। একজন মানুষের জন্য তোমরা জীবন দিয়ে দিবা এটা মানা যায় না। সাবেক ৫ শিক্ষার্থীর বিষয়ে কথা হয়েছে। যেহেতু মামলা করা হয়ে গেছে, আদালতে তোলা হবে। তারা কথা দিয়েছেন, ছাত্রদের জামিন দেওয়া হবে।’
এ সময় তিনি আর্থিক সহায়তা প্রদান করায় সাবেক শিক্ষার্থী গ্রেফতারের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন। তিনি বলেন, ‘তোমাদেরকে সাহায্য করতে যদি অ্যারেস্ট হতে হয় তাহলে আমি হব। আমি তোমাদের এই ১০ হাজার টাকা দিলাম। এ টাকা দিয়ে তোমাদের তেমন কিছু হবে না জানি। কিন্তু আমি দেখতে চাই, সিআইডি আমাকে অ্যারেস্ট করে কি না।’
প্রসঙ্গত, গত ১৬ জানুয়ারি বিকেলে তিন দফা দাবি আদায়ে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি ভবনে অবরুদ্ধ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশ উপাচার্যকে উদ্ধার করতে গেলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই সময় পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন।
এ ঘটনায় দুইশ থেকে তিনশ অজ্ঞাত শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ। এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, আন্দোলনরত দুই-তিনশ উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থী হঠাৎ কর্তব্যরত পুলিশের ওপর চড়াও হয়। তারা সরকারি আগ্নেয়াস্ত্র ধরে টানাটাানি করে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। চারদিক থেকে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি ছোড়ে। এছাড়া পুলিশের ওপর ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ক্যাম্পাসে আতঙ্ক সৃষ্টি করে।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হয় ১৪ জানুয়ারি দিবাগত রাতে। তখন শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ছিল, বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হলে নানা সমস্যা রয়েছে। এসব সমস্যার সমাধান চেয়ে তারা হলের প্রভোস্ট সহযোগী অধ্যাপক জাফরিন আহমেদকে কল করেন। প্রভোস্টকে ফোন দিলে তিনি বলেন, ‘বের হয়ে গেলে যাও, কোথায় যাবে? আমার ঠেকা পড়েনি।’ শিক্ষার্থীরা বিষয়টি জরুরি উল্লেখ করলে তিনি বলেন, ‘কীসের জরুরি? কেউ তো আর মারা যায়নি।’
এমন আচরণের কারণে প্রভোস্টের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন ছাত্রীরা। এই দাবি আদায়ে ১৬ জানুয়ারি বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (আইআইসিটি) ভবনে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এসময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাস বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের হলত্যাগের নির্দেশ দেয়। তবে নির্দেশনা অমান্য করে আন্দোলন চালিয়ে যান শিক্ষার্থীরা। প্রভোস্টের পদত্যাগের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলন শেষ পর্যন্ত উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে পরিণত হয়। উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে ১৯ জানুয়ারি বিকেল ৩টা থেকে তার বাসভবনের সামনে আমরণ অনশনে বসেন ২৪ শিক্ষার্থী।
মাসুদ আহমদ রনি/এমএসআর/জেএস