উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত শাবিতে অনশন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরণ অনশন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টার দিকে সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন তারা।
এ সময় অনশনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, এই উপাচার্য গত চার বছরে তার নিজের শাসন কায়েম করার চেষ্টা করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সাংস্কৃতিক এবং মুক্ত চিন্তার পথগুলোকে বন্ধ করে দিয়েছেন। ক্যাম্পাসের মুক্ত আলোচনার জায়গাগুলো বন্ধ করে দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের টং দোকানগুলোর খাবারগুলোকে নিম্নশ্রেণির লোকদের খাবার বলে আখ্যায়িত করে তা বন্ধ করে দিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের গত চার বছরের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ এই আন্দোলন।
তারা আরও বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা আামদের যৌক্তিক আন্দোলনে আর্থিক সহায়তা করতে চেয়েছেন। কিন্তু তা আটকে দিয়েছে প্রশাসন। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
এদিকে উপচার্যের বাসভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশনের সপ্তম দিন চলছে। এ সাত দিনে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২০ জন শিক্ষার্থী। আটজন শিক্ষার্থীকে অনশনস্থলে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৬ জানুয়ারি বিকেলে তিন দফা দাবি আদায়ে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি ভবনে অবরুদ্ধ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশ উপাচার্যকে উদ্ধার করতে গেলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই সময় পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন।
এ ঘটনায় দুইশ থেকে তিনশ অজ্ঞাত শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে- আন্দোলনরত দুইশ-তিনশ উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থী হঠাৎ কর্তব্যরত পুলিশের ওপর চড়াও হয়। তারা সরকারি আগ্নেয়াস্ত্র ধরে টানাটাানি করে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। চারদিক থেকে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি ছোড়ে। এছাড়া পুলিশের ওপর ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ক্যাম্পাসে আতঙ্ক সৃষ্টি করে।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হয় ১৪ জানুয়ারি দিবাগত রাতে। তখন শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ছিল, বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হলে নানা সমস্যা রয়েছে। এসব সমস্যার সমাধান চেয়ে তারা হলের প্রভোস্ট সহযোগী অধ্যাপক জাফরিন আহমেদকে কল করেন। প্রভোস্টকে ফোন দিলে তিনি বলেন, ‘বের হয়ে গেলে যাও, কোথায় যাবে? আমার ঠেকা পড়েনি।’ শিক্ষার্থীরা বিষয়টি জরুরি উল্লেখ করলে তিনি বলেন, ‘কীসের জরুরি? কেউ তো আর মারা যায়নি।’
পরে প্রভোস্টের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন ছাত্রীরা। এরই মধ্যে ১৬ জানুয়ারি বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (আইআইসিটি) ভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়। তবে ওই নির্দেশনা অমান্য করে আন্দোলন চালিয়ে যান শিক্ষার্থীরা। প্রভোস্টের পদত্যাগের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলন শেষ পর্যন্ত উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে পরিণত হয়।
উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে গত বুধবার (১৯ জানুয়ারি) বিকেল ৩টা থেকে তার বাসভবনের সামনে আমরণ অনশনে বসেন ২৪ জন শিক্ষার্থী। আমরণ অনশনরত শিক্ষার্থীদের প্রায় সবাই অসুস্থ। এ অবস্থার মধ্যেও কর্মসূচি চালিয়ে যেতে অনড় তারা।
জুবায়েদুল হক রবিন/আরএআর