শাবি ক্যাম্পাসের ভেতরে পুলিশ, বাইরে শিক্ষার্থীরা
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবি) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। ক্যাম্পাসে মোতায়েন করা হয়েছে দুই শতাধিক পুলিশ। ঘটনার পর থেকে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা ভেতরে কোনো যানবাহন বা কাউকে ঢুকতে দিচ্ছেন না। তারা পুলিশের দুটি জলকামান আটকে দিয়েছেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘পুলিশ দিয়ে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না’, ‘যেই ভিসি ছাত্র মারে সেই ভিসি চাই না, এই ভিসির পতন চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত রোববার (১৬ জানুয়ারি) রাত ১০টার দিকেও শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে অবস্থান করছিলেন।
এদিকে রাত ৯টার দিকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। আগামীকাল সোমবার (১৭ জানুয়ারি) দুপুর ১২টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগ করতে বলা হয়েছে।
এর আগে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন অ্যন্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (আইআইসিটি) ভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
বিকেলে তিন দফা দাবি মেনে না নেওয়ায় উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি ভবনে অবরুদ্ধ করেন শিক্ষার্থীরা। উপাচার্যকে পুলিশ উদ্ধার করতে গেলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে টিয়ারশেল, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে আইআইসিটি ভবন থেকে উপাচার্যকে উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম, ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১০ জন শিক্ষক, একাধিক পুলিশ সদস্য ও শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, বিকেল পৌনে ৩টায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদ এবং শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. তুলসী কুমার দাস। এ সময় তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন, বিভাগীয় প্রধান এবং শিক্ষকদের সঙ্গে সকল সমস্যা নিয়ে আলোচনায় বসেন উপাচার্য। তিনি শিক্ষার্থীদের সকল দাবি মেনে নিয়ে এক সপ্তাহের সময় চেয়েছেন।
শিক্ষার্থীরা তা না মেনে নিয়ে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন। এ সময় উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ উপাচার্য ভবন থেকে বের হয়ে তার বাসভবনে যেতে চাইলে বাধা দেন আন্দোলনকারীরা। একপর্যায়ে উপাচার্যকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি ভবনে অবরুদ্ধ করেন তারা। এরপর কোষাধ্যক্ষ, ছাত্র উপদেষ্টা, প্রক্টর এবং অন্যান্য শিক্ষকরা ভেতরে ঢুকতে চাইলে তাদের বাইরে আটকে রাখেন তারা।
একপর্যায়ে উপাচার্যকে মুক্ত করতে ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এর মাঝে দফায় দফায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। শিক্ষার্থীরা জানান- তারা তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রাখবে। সে সময় ক্যাম্পাসে পুলিশের উপস্থিতি দেখে শিক্ষার্থীরা ‘ক্যাম্পাসে পুলিশ কেন প্রশাসন জবাব চাই, পুলিশ তুমি বাসায় যাও আমার ক্যাম্পাস ছেড়ে দাও, পুলিশ আছে যতক্ষণ কথা নাই ততক্ষণ, ধিক্কার ধিক্কার প্রশাসন জবাব চাই’ স্লোগান দিতে থাকেন।
একপর্যায়ে উপাচার্যকে মুক্ত করতে পুলিশ সামনে অগ্রসর হয়ে লাঠিচার্জ করে। এ সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের ধাক্কাধাক্কি হয়। পুলিশ লাঠিচার্জ করলে শিক্ষার্থীরাও পাল্টা ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। এ সময় পুলিশ পিছু হটলে একাধিক পুলিশ সদস্য আহত হন। এরপর পুলিশ পাল্টা আক্রমণ চালায় শিক্ষার্থীদের ওপর। এ সময় তারা শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে ২৭ রাউন্ড রাবার বুলেট এবং ২১টি সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এরপর বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটে উপাচার্যকে উদ্ধার করে তার বাসভবনে নিয়ে যায় পুলিশ।
ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী তানহা তাহসীন, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সংঘ মিত্রা, সজল কুন্ডু, মেহজাবিন পর্ণা, সজল কুণ্ডু, সাজেদুল ইসলাম সিজন, তাকিয়া ইসলাম, জুনায়েদ ইসলাম, সাজ্জাদ হোসেন, মসিউর ইসলাম, ইরফান, রায়হান আহমেদ, মুনির হোসেন তালুকদার, সেলিম, তমাল, সিফাত আকাশ, জাহিদুল ইসলাম অপূর্ব, হুমায়ূন কবির অপূর্বসহ আরও অনেকে আহত হয়েছেন। একাধিক শিক্ষার্থী রাবার বুলেটের আঘাতে আহত হয়েছে।
উপাচার্যকে উদ্ধারের সময় সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (উত্তর) ডেপুটি কমিশনার আজবাহার আলী শেখ বলেন, শিক্ষার্থীরা পুলিশের ওপর উত্তেজিত হয়। এরপরে পুলিশ লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
জুবায়েদুল হক রবিন/আরএআর