দুই আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বিজয়ী বুয়েটের অক্সিজেট
দুইটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অক্সিজেট প্রকল্প। এক মাসেরও বেশি সময় আগে নভেম্বরে প্রকল্প দুটি বিজয়ী হলেও আজ (বুধবার) বুয়েটের জনসংযোগ দফতর থেকে এক বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বুয়েটের অক্সিজেট প্রকল্পটিকে যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইনোভেশন ফোরাম আয়োজিত স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক স্টার্টআপ প্রতিযোগিতা ‘ইমাজিন ইফ-এ ‘গ্লোবাল উইনার’ ঘোষণা করা হয়েছে। একই সাথে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং সোসাইটি (বিএমইএস) আয়োজিত ডিজাইন প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বুয়েটের অক্সিজেট প্রকল্পটি।
‘ইমাজিন ইফ’ প্রতিযোগিতাটি দুই রাউন্ডে অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম রাউন্ডটি অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ, লন্ডন, ম্যানচেস্টার, বার্সেলোনা, নিউইয়র্ক, সান ফ্রান্সিসকো, কোপেনহেগেন, হংকং, কুয়ালালামপুর, লুসান, ওকিনাওয়া, ইউস্কাদি এবং ঢাকায় অবস্থিত ইনোভেশন-ফোরামের আঞ্চলিক শাখায় অনুষ্ঠিত হয়।
বিশ্বব্যাপী ৫০০টিরও বেশি স্টার্টআপের মধ্যে আয়োজিত আঞ্চলিক প্রতিযোগিতায় শীর্ষস্থান অধিকারীদের মধ্যে থেকে সেরা ১৫টি স্টার্টআপ চূড়ান্ত রাউন্ডে নির্বাচিত হয়। এ বছর আগস্ট মাসে বাংলাদেশ ও ভারতের সেরা ১০টি স্টার্টআপের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে অক্সিজেট দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে চূড়ান্ত পর্যায়ে নির্বাচিত হয়।
গ্লোবাল ফাইনালে অন্যান্য প্রতিযোগীরা ছিলেন ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, বিশেষ করে যুক্তরাজ্য থেকে। গত ১১ নভেম্বর স্পেনের বার্সেলোনায় গ্লোবাল ফাইনাল রাউন্ড অনুষ্ঠিত হয় যেখানে অক্সিজেটকে ‘গ্লোবাল উইনার’ ঘোষণা করা হয়। এই প্রথম দক্ষিণ এশিয়ার কোনো স্টার্টআপ ‘ইমাজিন ইফ’ প্রতিযোগিতায় জয়লাভ করেছে।
‘ইমাজিন ইফ’ প্রতিযোগিতায় বিচারক প্যানেলে অ্যাস্ট্রাজেনেকার হেড অব ইনোভেশনসহ বেশ কয়জন আন্তর্জাতিক স্বনামধন্য স্বাস্থ্য বিশারদ উপস্থিত ছিলেন। বিজয়ী ঘোষণা করার আগে, বিচারকরা উল্লেখ করেন যে, তারা কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বুয়েটের ডিভাইসটির অগ্রগতি এবং জনসাধারণের জন্য এর প্রত্যক্ষ প্রভাবের কারণে অক্সিজেটকে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিয়ে বিজয়ী ঘোষণা করেন।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং সোসাইটি (বিএমইএস) আয়োজিত প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাছাইকৃত কোভিড-১৯ সম্পর্কিত সেরা ৩টি প্রকল্পের মধ্যে বুয়েটের অক্সিজেট নির্বাচিত হয়। চূড়ান্ত এই পর্বে যুক্তরাষ্ট্রের ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া অ্যাট লস এঞ্জেলেস এবং বুয়েট অংশগ্রহণ করে। বিচারকদের মতামতের ভিত্তিতে ২২ নভেম্বর শেষ পর্যন্ত বুয়েটের অক্সিজেটকেই বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। এই প্রথম দক্ষিণ এশিয়ার কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এই প্রতিযোগিতায় জয়লাভ করেছে।
প্রসঙ্গত, অক্সিজেট ডিভাইস হলো একটি নন-ইনভেসিভ সিপ্যাপ (কন্টিনিউয়াস পজিটিভ এয়ার-ওয়ে প্রেসার) ভেন্টিলেটর। হাসপাতালের অক্সিজেন লাইন বা সিলিন্ডার ব্যবহার করে এটা কোনো বৈদ্যুতিক শক্তি ছাড়াই মিনিটে ৬০ লিটার গতিতে অক্সিজেন দিতে পারে। ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে বুয়েটের বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের গবেষকরা এটা আবিষ্কার করেন।
পরে ডিভাইসটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক) পরিচালিত তিন-ধাপের ক্লিনিকাল ট্রায়ালের সফল সমাপ্তির পর ২০২১ সালের জুলাই মাসে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর থেকে অনুমোদন পায়। অক্সিজেট প্রকল্পের নেতৃত্বে রয়েছেন বুয়েটের বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. তওফিক হাসান।
এএজে/এনএফ