হঠাৎ হল ত্যাগের আদেশে ভোগান্তিতে কুয়েট শিক্ষার্থীরা
‘বাসায় কীভাবে যাবো, সবাইতো বাস-ট্রেনের টিকিট কাটতে পারেনি। আমার বাড়ি গোপালগঞ্জ। এখন আমি এক বন্ধুর বাড়িতে থাকব। আগামীকাল সকালে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হব।’ হল ছাড়ার সময় কথাগুলো বলছিলেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী বৃষ্টি মৃধা।
তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুপুরে ২টার দিকে হঠাৎ করে জানতে পারি ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছুটি। অনেকেই বাড়ি যাওয়া নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছে।
শুক্রবার (০৩ ডিসেম্বর) দুপুরে কুয়েট বন্ধ ঘোষণার পর থেকেই হল ছাড়তে শুরু করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। কুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সেলিম হোসেনের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আবাসিক হল ছাড়ছেন শিক্ষার্থীরা। বিকেল ৪টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আগামী ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শুক্রবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তবে হঠাৎ করে হল ছাড়ার নির্দেশনায় ভোগান্তিতে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করার পরপরই দুপুর থেকে ক্যাম্পাস ছাড়তে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। বাস বা ট্রেনের টিকেট পাওয়া নিয়ে অনেকের মাঝে উৎকণ্ঠা দেখা দেয়। শিক্ষার্থীদের ইজিবাইক, ভ্যান ও রিকসাযোগে হল ত্যাগ করতে দেখা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. মামুন বলেন, আমার বাড়ি রংপুর। মাত্র ৩/৪ ঘণ্টার নোটিশে হল ত্যাগ করতে হচ্ছে। টিকিট পাব কি না সন্দেহ। ফলে কীভাবে বাড়ি যাবো এটা নিয়ে টেনশনে আছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আহসানুল বলেন, আমার বাড়ি উত্তরবঙ্গে। মাত্র তিন ঘণ্টার নোটিশে হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এতো স্বল্প সময়ে কীভাবে টিকিট পাব, সবকিছু গোছাব, সব মিলিয়ে কিছুটা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
আর্কিটেকচার বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আকিব বলেন, দুপুরে হঠাৎ করে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ভেবেছিলাম ক্লাস হবে না এমন কোনো সিদ্ধান্ত হবে। কিন্তু হল ত্যাগের কথা বলা হয়নি। এ জন্য সবাই বিপাকে পড়েছে। আমার বাড়ি চট্টগ্রাম। টিকিটও পাব কি না সন্দেহ। এখন কোনো মেচে থাকতে হবে। পরে বাড়িতে যাব।
শিক্ষার্থীরা জানান, অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহে ক্যাম্পাস খোলার কিছু দিনের মধ্যে আবার বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করায় পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। করোনার জন্য অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। এতদিন তো পড়ালেখা শেষ হয়ে যেত। গত ২৫ অক্টোবর দীর্ঘদিন পর ক্যাম্পাস খুলেছে। আবার বন্ধ হয়ে গেল।
মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হারুনুর রশীদ বলেন, শিক্ষার্থীদের জন্য এটা ব্যাপক ভোগান্তির। ঠাঁকুরগাঁও সদরের টিকেট পেলে বাড়ি চলে যাব। আর না পেলে কী করব তা এখনও ভাবিনি।
ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা হওয়ায় অনেকে আবার খুশি হয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুইজন শিক্ষার্থী বলেন, করোনায় ক্ষতি তো অনেক হয়েছে। এবারের বন্ধ ঘোষণার কারণে আরও কিছুটা ক্ষতি হবে। তবে যেহেতু তদন্তের স্বার্থে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে তাই আমরা চাই সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীরা চিহ্নিত হোক।
এদিকে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ছাত্রলীগের একাংশ আবাসিক হল না ছাড়ার জন্য প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান নেয়। সেখানে তারা কর্তব্যরত সাংবাদিকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। পরে ৪টার দিকে তারা প্রশাসন ভবনের সামনে থেকে সরে যায়।
এর আগে দুপুরে কুয়েটের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. আনিসুর রহমান ভূঁঞা স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়- খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৮ তম জরুরি সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইইই বিভাগের প্রফেসর ড. মো. সেলিম হোসেন অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা কারণে ৩ ডিসেম্বর থেকে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হলো। একই সঙ্গে আজ বিকেল ৪টার মধ্যে আবাসিক ছাত্র-ছাত্রীদের হলসমূহ ত্যাগ করার নির্দেশ প্রদান করা হলো।
প্রসঙ্গত, গত ৩০ নভেম্বর খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সেলিম হোসেনের সঙ্গে ছাত্রলীগের কয়েকজন খারাপ ব্যবহার করেন। এমনকি তাকে হুমকি দেওয়ারও অভিযোগ ওঠে। পরে বাসায় ফিরে বুকে ব্যথা অনুভব করেন তিনি। অবস্থার অবনতি হলে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যু হয় তার।
মোহাম্মদ মিলন/আরএআর