‘কুয়েট শিক্ষক সেলিমের মৃত্যু স্বাভাবিক নয়’
মানসিক নির্যাতনে হার্টঅ্যাটাকে মারা যাওয়া খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. সেলিম হোসেনের মৃত্যুর জন্য দায়ী ছাত্রদের বহিষ্কারসহ শাস্তির দাবি জানিয়েছে কুয়েট শিক্ষক সমিতি ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত একাডেমিক কার্যক্রমে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষক সমিতি।
বুধবার (১ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত শিক্ষক সমিতির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এদিকে শিক্ষক ড. সেলিম হোসেনের মৃত্যুকে স্বাভাবিক নয় বলে অভিযোগ করে ক্যাম্পাসে অবস্থান নেয় সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তদন্ত সাপেক্ষে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা। এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্তকমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
কুয়েটের ছাত্র ও শিক্ষকরা জানান, কুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তাদের মনোনীত ছাত্রকে লালন শাহ হলের ডিসেম্বর মাসের ডাইনিং ম্যানেজার করার জন্য প্রভোস্ট ড. সেলিমকে চাপ দিয়ে আসছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় গত মঙ্গলবার দুপুরে তার নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন ছাত্র ক্যাম্পাসের রাস্তা থেকে ড. সেলিম হোসেনকে জেরা করা শুরু করেন। পরবর্তীতে তারা শিক্ষককে অনুসরণ করে তড়িৎ কৌশল ভবনে তার কক্ষে প্রবেশ করে আবারও চাপ প্রয়োগ করেন।
সিসিটিভিতে দেখা যায়, মঙ্গলবার খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রনিক্স ও ইলেট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে বের হচ্ছিলেন অধ্যাপক ড. সেলিম হোসেন। রাস্তায় কুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সিজানের নেতৃত্বে কয়েক শিক্ষার্থী তার পথরোধ করে বিভাগের ভেতরে নিয়ে যায়। সেখানে বাকবিতণ্ডা হয়। পরে বাসায় ফিরে বুকে ব্যথ্যা অনুভব করলে দ্রুত তাকে কুয়েট মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যু হয় তার।
ক্ষুব্ধ সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলেন, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা হেনস্তা করার পরপরই অসুস্থ হয়ে পড়েন শিক্ষক ড. সেলিম। এরপরই তার মৃত্যু হয়। রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসসহ কয়েক দফা দাবিও জানিয়েছেন তারা। একাত্মতা প্রকাশ করেছেন শিক্ষকরাও।
বুধবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন ও উপাচার্যের কক্ষের সামনে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। প্রফেসর ড. সেলিম হোসেনের মৃত্যুর জন্য কয়েকজন শিক্ষার্থীকে দায়ী করে তাদের বিচার দাবি করেন বিক্ষোভকারীরা।
এ বিষয়ে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত জরুরি সভা করে শিক্ষক সমিতি। সভায় সেলিমের মৃত্যু স্বাভাবিক নয় বলে একমত পোষণ করেন তারা। অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারসহ প্রশাসনের কাছে ৫ দফা দাবি জানান তারা।
এ ব্যাপারে কুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রতীক চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ড. মো. সেলিম হোসেনের মৃত্যুর বিষয়ে শিক্ষক সমিতির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তার মৃত্যু স্বাভাবিক নয় বলে আমাদের পর্যালোচনায় মনে হয়েছে। শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দের দাবি ড. সেলিমের মৃত্যুর জন্য দায়ী ছাত্রদের বহিষ্কারসহ শাস্তি না দেওয়া পর্যন্ত একাডেমিক কার্যক্রমে অংশ না নেওয়া। বুধবার তারা শিক্ষার্থীদের কোনো ক্লাস নেননি।
কুয়েটের ছাত্র কল্যাণ পরিচালক ড. ইসমাইল সাইফুল্লাহ বলেন, এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন সাপেক্ষে কুয়েট প্রশাসন পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে। ড. সেলিম কুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ও লালন শাহ হলের প্রভোস্ট ছিলেন।
ট্রসঙ্গত, মঙ্গলবার দুপুর ৩টার দিকে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. সেলিম হোসেন মারা যান। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, হার্ট অ্যাটাকে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এদিকে, এ মৃত্যুকে ঘিরে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, তাঁর মৃত্যুর আগে তিনি লাঞ্ছনার শিকার হয়েছিলেন। এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দ্রুত তাদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
মোহাম্মদ মিলন/আরআই