ঢাকা কলেজের পাঠাগার-ছাত্রাবাসই আজকের শহিদুল্লাহ ও কার্জন হল
উপমহাদেশের প্রথম বিদ্যাপীঠ ঢাকা কলেজের যাত্রা শুরু ১৮৪১ সালের ২০ নভেম্বর। ১৮০ বছরের দীর্ঘ সময়ে বিভিন্ন ঘটনার সাক্ষী এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ১৫ যুগ ধরে ক্ষণেক্ষণে নানান ত্যাগের নজির স্থাপন করে আজও আপন আলোয় দীপ্তিমান পথচলা অব্যাহত রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি।
১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) যাত্রা শুরু হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রতিষ্ঠিত করতে সবচেয়ে বেশি ত্যাগ শিকার করেছে ঢাকা কলেজ। ঢাবির জীবন প্রদীপ জ্বালাতে ঢাকা কলেজের মহিমাময় ত্যাগ ও অবদান ইতিহাসে বিরল।
সে সময় ঢাকা কলেজের সমস্ত স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি, ছাত্র, শিক্ষক, কর্মচারী, বিভিন্ন ভবন, পাঠাগার, বিজ্ঞানাগার, বই-পুস্তক ইত্যাদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে দেওয়া হয়েছিল। যার মাধ্যমে ১৯২১ সালের ১৫ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় তার একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করতে পারে।
কলেজের বিপুল পরিমাণ জমি ও ক্যাম্পাস, হোস্টেলসহ অন্যান্য অবকাঠামো, বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি, মেধাবী ছাত্রদের জন্য বরাদ্দ করা বিভিন্ন বৃত্তি ইত্যাদিও হস্তান্তর করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর অভাব পূরণে বেশ কয়েক বছর ঢাকা কলেজে স্নাতক-স্নাতকোত্তরের পাঠদান বন্ধ রেখে শুধুমাত্র উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হয়।
ঢাবির বর্তমান কার্জন হল ছিল ঢাকা কলেজের পাঠাগার। ১৯০৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ভারতের তৎকালীন ভাইসরয় ও গভর্নর জেনারেল- লর্ড কার্জন বর্তমান কার্জন হলের ভিত্তি-প্রস্তর স্থাপন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক শরীফউদ্দীন আহমদ লিখিত প্রবন্ধে জানা যায়, এটি নির্মিত হয় ঢাকা কলেজের পাঠাগার হিসেবে। নির্মাণের জন্য অর্থ প্রদান করেন ভাওয়ালের রাজকুমার।
এছাড়াও ১৯০৪ সালে ঢাকা প্রকাশ লিখেছিল- ‘ঢাকা কলেজ নিমতলীতে স্থানান্তরিত হবে। এই কলেজের সংশ্রবে একটি পাঠাগার নির্মাণের জন্য সুযোগ্য প্রিন্সিপাল ডাক্তার রায় মহাশয় যত্নবান ছিলেন। বড়লাট বাহাদুরের আগমন উপলক্ষে ভাওয়ালের রাজকুমাররা এ অঞ্চলে লর্ড কার্জন বাহাদুরের নাম চিরস্মরণীয় করবার জন্য কার্জন হল নামে একটি সাধারণ পাঠাগার নির্মাণের জন্য দেড় লাখ টাকা দান করেন।’
১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ হলে ঢাকা কলেজের ক্লাস নেওয়া হয় থাকে কার্জন হলে। পরবর্তী সময়ে ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হলে কার্জন হল অন্তর্ভুক্ত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের জন্য, যা আজও ব্যবহৃত হচ্ছে।
এখনও কার্জন হলের পূর্ব পাশের সড়কটি কেন কলেজ রোড নামে পরিচিত এ প্রশ্ন অনেকেই করে থাকেন। এর উত্তর হলো এ সড়কটির নামকরণ করা হয়েছিল তখন, যখন কার্জন হল ছিল ঢাকা কলেজের।
বর্তমান ঢাবির ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলও ছিল ঢাকা কলেজের জন্য নির্মিত প্রথম ছাত্রাবাস। ১৯০৮ সালের মার্চে এর নির্মাণকাজ শেষ হয়। কার্জন হলের নকশার সঙ্গে এই হলের নকশা সামঞ্জস্যপূর্ণ। ঢাবি প্রতিষ্ঠিত হলে এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল হিসেবে যুক্ত হয়। ১৯২১ সালে হলটি লাইটন হল নামে প্রতিষ্ঠিত ও পরবর্তীকালে একে ঢাকা হল নামে নামকরণ করা হয়। এরপর ১৯৬৯ সালে বিখ্যাত ভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মৃত্যুর পর তার নামে নতুন নামকরণ করা হয়।
সময়ের পরিক্রমায় প্রায় ১৮০ বছর পার করে ১৮১তে পা দিয়েছে ঢাকা কলেজ। ‘নিজেকে জানো’ এই স্লোগানকে ধারণ করে ঢাকা কলেজ তার গর্ব নিয়ে পৃথিবীর বুকে দাঁড়িয়ে থাকুক এই প্রত্যাশা সবার।
আরএইচটি/এমএইচএস