জাবির ভর্তি পরীক্ষায় শিফট পদ্ধতি যেন ভাগ্য পরীক্ষা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার শিফট পদ্ধতি যেন কারও জন্য গলার কাঁটা আবার কারও জন্য আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিয়েছে। লিখিত পরীক্ষা নয় বরং ভাগ্যের চরম পরীক্ষা দিতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। ভাগ্য পরীক্ষায় কেউ জিতছে আবার কেউ হারছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করে এমন চিত্র দেখা গেছে।
গত সোমবার (১৫ নভেম্বর) প্রকাশিত সমাজ বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘বি’ ইউনিটের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মোট পাঁচটি শিফটে ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এই ইউনিটের ৩২৬টি আসনের মধ্যে ৫ম শিফটে (বিকেল সোয়া ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত) পরীক্ষা দেওয়া সর্বোচ্চ ২১৭ জন শিক্ষার্থী মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছে। যা মোট আসনের ৬৭ শতাংশ। অন্যদিকে দ্বিতীয় শিফটে (সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সোয়া ১১টা) পরীক্ষা দেওয়া সর্বনিম্ন ১২ জন মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছে। যা মোট আসনের ৪ শতাংশ।
এছাড়াও প্রথম শিফটের (সকাল ৯টা থেকে পৌনে ১০টা) ৩৩ জন, তৃতীয় শিফটের (দুপুর ১২টা থেকে পৌনে ১টা) ৩৫ জন ও চতুর্থ শিফটের (পৌনে ২টা থেকে আড়াইটা) ২৯ জন মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে ছেলে ও মেয়েদের মেধা তালিকায় শুধুমাত্র ৫ম শিফটে শীর্ষ ১০ জনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। সেখানে প্রথম ১০ জনের মধ্যে মেয়েদের তালিকায় ৯ জন এবং ছেলেদের তালিকায়ও ৯ জন রয়েছে।
এর আগে গত ৯ ও ১০ নভেম্বর অনুষ্ঠিত জীববিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ডি’ ইউনিটে ১০টি শিফটের মধ্যে ৫ম শিফটে পরীক্ষা দেওয়া সর্বোচ্চ ১০৪ জন মেধা তালিকায় স্থান পায়, যা মোট আসনের ৩২.৫ শতাংশ। অন্যদিকে ৩য় শিফটের সর্বনিম্ন ১ জন মেধা তালিকায় স্থান পায়, যা মোট আসনের ০.৩২ শতাংশ।
এছাড়া প্রথম শিফটের ১০ জন, দ্বিতীয় শিফটের ৭, চতুর্থ শিফটের ১৮, ষষ্ঠ শিফটের ২২, সপ্তম শিফটের ৫৩, অষ্টম শিফটের ২৯, নবম শিফটের ৪৯ এবং দশম শিফটের ২৭ জন শিক্ষার্থী মেধা তালিকায় স্থান পায়।
এর মধ্যে শুধু মাত্র ৫ম শিফটে মেধা তালিকায় শীর্ষ ১০ জনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। তার মধ্যে মেয়েদের তালিকায় প্রথম ১০ জনের মধ্যে রয়েছে ৭ জন এবং ছেলেদের তালিকায় ৫ জন। পরপর দুই ইউনিটের পঞ্চম শিফটে এমন ফলাফল শঙ্কায় ফেলেছে মেধাবী শিক্ষার্থীসহ সচেতন শিক্ষকদের।
এর আগে ‘জি’ ইউনিট (আইবিএ) ও ‘এইচ’ ইউনিটের (আইআইটি) ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুইটি শিফটে অনুষ্ঠিত ‘জি’ ইউনিটের পরীক্ষায় ৫০টি আসনের মধ্যে মেধা তালিকায় প্রথম শিফটের ১৫ জন স্থান পেয়েছে এবং দ্বিতীয় শিফটের ৩৫ জন।
এছাড়া তিনটি শিফটে অনুষ্ঠিত ‘এইচ’ ইউনিটের পরীক্ষায় ৫৬টি আসনের মধ্যে প্রথম শিফটের ২০ জন, দ্বিতীয় শিফটের ২৩ জন ও তৃতীয় শিফটের ১৩ জন শিক্ষার্থী মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছে।
‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী তানজিলুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, একটি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা পদ্ধতি এমন হওয়া লজ্জাজনক। যেখানে আমাদের মেধার পরীক্ষা না দিয়ে ভাগ্যর পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। শিফট পদ্ধতিতে পরীক্ষা যদি নিতেই হয় তবে প্রতি শিফটের জন্য আসনও নির্ধারিত করে দেওয়া হোক। আলাদা প্রশ্নপত্রে আলাদা পরীক্ষা দেওয়ার পরে একই মানে মেধা তালিকা প্রকাশ করা হলে প্রকৃত মেধাকে অবমূল্যায়ন করা হয়। এ ধরনের অসম মেধা তালিকা বিশ্ববিদ্যালয় করতে পারে না।
শিক্ষাবিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা অনেকবার বলেছি শিফট পদ্ধতি বাদ দিয়ে একই প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নিতে। এজন্য প্রয়োজনে দেশের বিভিন্ন শহরে পরীক্ষার আয়োজন করা যেতে পারে। তাতে বৈষম্য কমবে এবং শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভোগান্তি কমবে। আগামী বছর থেকে এক শিফটেই পরীক্ষা নেওয়ায় ব্যবস্থা করা উচিত।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক রাশেদা আখতার ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টা আমাদের নজরে এসেছে। আগামী বছরে চেষ্টা করবো একই প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেওয়ার। সেক্ষেত্রে এই বৈষম্যগুলো কমে যাবে বলে আশা করছি। সাভারের আশপাশে যেসব কলেজ আছে সেগুলোতে আমরা পরীক্ষা নিতে পারি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এসব ব্যাপারে ভাবছে।
আলকামা/আরএআর