জাবি ভর্তি পরীক্ষা, বিতর্কিত শিফট পদ্ধতিতে মেধার অবমূল্যায়ন
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ডি’ ইউনিটের (জীববিজ্ঞান অনুষদ) ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। প্রকাশিত ফলাফলে শিফট পদ্ধতিতে বৈষম্যের ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। ফলে প্রশ্ন উঠেছে পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে, শঙ্কা তৈরি হয়েছে প্রকৃত মেধাবী শিক্ষার্থী ভর্তির ব্যাপারে।
বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ফলাফল পর্যালোচনা করে এ তথ্য পাওয়া যায়।
এর আগে গত ৯ ও ১০ নভেম্বর ১০ শিফটে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষায় ৩২০টি আসনের বিপরীতে আবেদন করেন মোট ৬৯ হাজার ১২৯ জন। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন ৪৫ হাজার ৫৯৪ জন। অংশগ্রহণ করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে কৃতকার্য হয় মোট ১৯ হাজার ১৭২ জন।
প্রকাশিত ফলাফল অনুসন্ধান করে দেখা যায়, ১০টি শিফটের মধ্যে ৫ম শিফটে মেধা তালিকায় স্থান পায় সর্বোচ্চ ১০৪ জন, যা মোট আসনের ৩২.৫ শতাংশ। অন্যদিকে, ৩য় শিফটে সর্বনিম্ন একজন মেধা তালিকায় স্থান পায়, যা মোট আসনের ০.৩২ শতাংশ।
এছাড়া প্রথম শিফটে ১০ জন, দ্বিতীয় শিফটে ৭ জন, চতুর্থ শিফটে ১৮, ষষ্ঠ শিফটে ২২, সপ্তম শিফটে ৫৩, অষ্টম শিফটে ২৯, নবম শিফটে ৪৯ এবং দশম শিফটে ২৭ জন শিক্ষার্থী স্থান পায়।
এর মধ্যে শুধুমাত্র ৫ম শিফটে মেধা তালিকায় শীর্ষ ১০ জনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। এর মধ্যে মেয়েদের তালিকায় প্রথম দশজনের মধ্যে রয়েছে ৭ জন এবং ছেলেদের তালিকায় ৫ জন।
ডি ইউনিটের তৃতীয় শিফটের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন নারায়ণগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজের শিক্ষার্থী সৌরভ সেন তন্ময়। প্রকাশিত ফলাফলে হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের শিফটভিত্তিক পদ্ধতিতে পরীক্ষার আয়োজন করেছে। এখন দেখছি শিফট পদ্ধতিতে মারাত্মক বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে। একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় যদি এভাবে বৈষম্য সৃষ্টি করে সেটা মেনে নেওয়া যায় না। এভাবে বৈষম্য সৃষ্টি করে আমাদের অধিকার হরণ করা হয়েছে। যদি শিফট পদ্ধতি রাখা হয় তবে প্রতি শিফটের জন্য আলাদা আসন বন্টন করা হোক। আমরা দাবি জানাই এ ধরনের বৈষম্যের অবসান করা হোক, প্রকৃত মেধার মূল্য শিক্ষার্থীরা পাক।
ভর্তি পরীক্ষার এমন ফলাফলে শঙ্কা প্রকাশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নুরুল আলম। তিনি বলেন, পরীক্ষা পদ্ধতির কারণে সমস্যা হয়, তবে এতবেশি সমস্যা হওয়ার তো কথা না। এক শিফট থেকে ১০৪ জন আসবে। অন্যদিকে, অন্য একটা শিফট থেকে মাত্র একজন। আমরা এ ব্যাপারে আলোচনা করব, কীভাবে সমস্যা থেকে উত্তরণ করা যায় সেটা দেখব।
শিক্ষাবিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, আমরা অনেকবার বলেছি শিফট পদ্ধতি বাদ দিয়ে একই প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নিতে। এজন্য প্রয়োজনে দেশের বিভিন্ন শহরে পরীক্ষার আয়োজন করতে হবে। তাতে বৈষম্য কমবে এবং শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের ভোগান্তি কমবে।
আলকামা/এমএএস