খুলছে ঢাবির হল : কী করা যাবে, কী যাবে না
প্রাণঘাতী করোনা মহামারির কারণে প্রায় দেড় বছর বন্ধ থাকার পর অবশেষে ১৫ সেপ্টেম্বরের পর শর্তসাপেক্ষে আবাসিক হল খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কর্তৃপক্ষ। তারই ধারাবাহিকতায় চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। আগামী ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতির নির্দেশনা রয়েছে।
ক্যাম্পাস খোলা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টরা কীভাবে চলাফেরা করবেন- সে বিষয়ে একটি নীতিমালাও ইতোমধ্যে তৈরি করেছে কর্তৃপক্ষ।
আবাসিক হলে মানতে হবে যেসব নির্দেশনা
বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থীদের কিছু নির্দেশনা মানতে হবে। এগুলোর মধ্যে আছে কক্ষের ফ্লোরে ঘুমানো যাবে না, রুমের আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। বড় রুমে সর্বোচ্চ চার জন শিক্ষার্থী থাকতে পারবে। কক্ষের বাইরে গেলে মাস্ক পরতে হবে, কোনো অতিথি আনা যাবে না। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে, হাঁচি-কাশির ক্ষেত্রে কনুইয়ের ভাঁজ বা টিস্যু দিয়ে নাক-মুখ ঢাকতে হবে।
থাকছে না গণরুম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) গণরুম না রাখার প্রক্রিয়া শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তারই ধারাবাহিকতায় গণরুমগুলোতে বসানো হচ্ছে খাট। শিক্ষার্থীরা হলে আসার আগেই তাদের জন্য বরাদ্দ করা হচ্ছে সিট।
করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর পর গত বছরের মার্চের দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল।
গণরুমের বিষয়ে প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবদুল বাছির ঢাকা পোস্টকে বলেন, হলগুলোতে এখন আর গণরুম থাকবে না। ইতোমধ্যে আমরা গণরুমের শিক্ষার্থীদের তালিকা করে ফেলেছি, তাদের জন্য সিটও বরাদ্দ চলছে। সিটের তালিকা অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা রুমে উঠবে। আর কোনো শিক্ষার্থী ফ্লোরে ঘুমাবে না, অবশ্যই একটা খাট নির্ধারিত থাকবে।
অছাত্র ও বহিরাগতদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা
শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর শুধুমাত্র বৈধ শিক্ষার্থীরা সংশ্লিষ্ট হলের নীতিমালার আলোকে হলে অবস্থান করতে পারবেন। যাদের ছাত্রত্ব নেই, তারা কোনোভাবেই হলে অবস্থান করতে পারবে না বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
প্রভোস্ট কমিটির সদস্য সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানী বলেন, আবাসিক হলে কোনো অছাত্র কিংবা বহিরাগত থাকতে পারবে না। শুধু বৈধ শিক্ষার্থীরা হলে থাকবে। যাদের হলে থাকার বৈধ অধিকার নেই তারা হলে থাকতে পারবে না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনোভাবেই তাদের অনুমতি দেবে না। ছাত্রত্ব নেই কিন্তু হলে উঠবে এই রকম চিন্তা যেন কেউ মাথায় না রাখে। যাদের রুমে অবৈধ বা প্রাক্তন শিক্ষার্থী থাকবে তাদের দায়িত্ব হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে বিষয়টি জানানো। এরকম কোনো তথ্য পেলে বিশ্ববিদ্যালয় তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেবে।
মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি
স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে অধ্যাপক ড. আবদুল বাছির বলেন, একজন শিক্ষার্থী রুম থেকে বের হলে অবশ্যই তাকে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। হলে প্রবেশের সময় বেসিনে হাত ধুয়ে প্রবেশ করতে হবে। যেখানে সেখানে কফ-থুতু ফেলা যাবে না। মসজিদ-ক্যান্টিন এসব জায়গায় ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে।
সংক্রমিত হলে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে থাকবে কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থা
কোনো শিক্ষার্থী যদি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়, তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে কোয়ারেন্টাইনে রাখার পরিকল্পনা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যদি আক্রান্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে যায়, সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রের অতিথি কক্ষগুলোকে কোয়ারেন্টাইনের জন্য ব্যবহার করা বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে অধ্যাপক বাছির বলেন, আমরা করোনা থেকে মুক্ত হয়ে গেছি এমনটা বলা যাবে না। যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে এটার সাথেই আমাদের বসবাস করতে হবে। যদি কোনো শিক্ষার্থী করোনা আক্রান্ত হয়, সেক্ষেত্রে তাদের জন্যও আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। কোনো শিক্ষার্থীর যদি উপসর্গ দেখা দেয়, সেটা হল প্রশাসনকে জানাতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের যে মেডিকেল সেন্টার আছে সেখানে দুই-তিনটা রুম করোনা আক্রান্তদের জন্য সংরক্ষিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কেউ আক্রান্ত হলে দ্রুত সুস্থ করে তুলতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো, তবে শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে একটি পরিকল্পনা করেছে। সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও এগিয়ে চলছে, হল প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সব শিক্ষার্থীকে টিকা নিতে বলা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির দিকে আমরা লক্ষ্য রাখছি। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে হল খোলার সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা হবে।
এইচআর/এনএফ