ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে গাছতলায় ক্লাস নিলেন রাবি শিক্ষক
ফেসবুক স্ট্যাটাসে ঘোষণা দিয়ে গাছতলায় ক্লাস নিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন। সোমবার (১৬ আগস্ট) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবনের পাশে সশরীরে ক্লাস নেন তিনি। এ সময় তার সঙ্গে আরও কয়েকজন শিক্ষককেও যোগ দিতে দেখা গেছে।
ক্লাস নেওয়ার ঘোষণায় ক্যাম্পাসে থাকা বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থী জড়ো হতে থাকেন সেখানে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে অন্তত ২০-২২ জন শিক্ষার্থী সে ক্লাসে অংশ নেন। ক্লাসে অধ্যাপক মামুনের বিভাগ গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতার পাশাপাশি অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীদেরও অংশ নিতে দেখা গেছে। পরে দুপুর ১টার দিকে শেষ করা হয় ক্লাসটি।
এদিনের ক্লাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম কনক, নৃবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক বখতিয়ার আহমেদ অংশ নিয়েছেন। ক্লাস শেষ শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আসলে আমার কাছে মনে হয় না বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অনলাইন পাঠদানে খুব একটা কিছু হচ্ছে। সুযোগ থাকা সত্ত্বেও এখানে যথেষ্ট অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়নি। এ ব্যবস্থায় আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিপন্ন। তবে এটা একটা প্রতীকী ক্লাস।
তিনি আরও বলেন, প্রকৃতপক্ষে আমি নিয়মিত অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছি। আসলে আমার কাছে মনে হয় না জ্ঞান ক্লাসে কিংবা কম্পিউটারে থাকে। এটা থাকে চর্চায়-আলাপে। আমার মনে হলো আমরা যদি প্রতি সপ্তাহে এভাবে বসি তাহলে যারা এভাবে শুনতে চায়, জানতে চায় তাদের উপকার হবে। একটা চিন্তার জায়গা তৈরি হবে।
এটা প্রতিবাদ কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটাকে প্রতিবাদ হিসেবে দেখতে চাইলে আপানারা দেখতে পারেন। কিন্তু আমার কাছে এটা আমার অস্তিত্বের প্রশ্ন। আমি একজন শিক্ষক, আমি ছাত্রদের পড়াতে চাই। তাদের কাছেও শিখতে চাই। আসলে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও শিক্ষা বা চিন্তা কিন্তু বন্ধ থাকে না। আবার এতদিন আমরা শিক্ষার্থীদের সশরীরে ক্লাস নিতে পারছি না, এতে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টাও আমাদের ভাবাচ্ছে। এতে তারাও চিন্তা করার সুযোগ পাবে।
তিনি আরও বলেন, এটাকে সরকারের বিরোধিতা হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। আমি তো নিজেও সরকার, সরকারের অংশ। শিক্ষক হিসেবে আমাকে পড়ানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমি আমার দায়িত্ব পালন করি। আমার ২ দিন ফ্রি টাইম আছে, সে সময়ে আমরা এ লেকচারের আয়োজন করছি।
ক্লাসে ছিলেন এমন এক শিক্ষার্থী সৈয়দ নাফিউল আলম বলেন, আমরা কোনো সহিংস আন্দোলন করিনি। আমরা চাই, টানা দুই বছরে এদেশের শিক্ষাঙ্গনে যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেছে সেই ক্ষতির অংশ আর প্রসার না ঘটুক।
এর আগে, গত শুক্রবার ও শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দেওয়ার মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের প্রতিবাদে গাছতলায় ক্লাস নেওয়ার ঘোষণা দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও ৩ জন শিক্ষক। তারা হলেন ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন, আরবি বিভাগের অধ্যাপক ইফতেখার আলম মাসউদ এবং ফোকলোর বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আমিরুল ইসলাম কণক।
এমএসআর