আমেরিকান প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন চুয়েট
যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক আন্তর্জাতিক পেশাজীবী সংগঠন আমেরিকান কনক্রিট ইনস্টিটিউটের (এসিআই) উদ্যোগে আয়োজিত কনক্রিট প্রজেক্টস প্রতিযোগিতায় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের ১৫তম ব্যাচের ৩টি দল সবকটি পুরস্কার অর্জন করেছে।
প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন মো. মাহফুজুল ইসলাম ও ইমতিয়াজ ইবনে গিয়াসের দল। একইসঙ্গে এজাজ আহমেদ ও সৈয়দ মারুফ-উল হাসানের দল প্রথম রানারআপ এবং জান্নাতুল ফেরদৌস সোনিয়া ও তাবাসসিমা ফারিয়ার দল প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় রানারআপ পুরস্কার অর্জন করেছে। অর্থাৎ, এই আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় একচ্ছত্র আধিপত্য দেখিয়েছে চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগ।
মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) যুক্তরাষ্ট্রের এসিআই সদরদফতর থেকে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে এ ফলাফল ঘোষণা করা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত প্রজেক্টগুলো হতে ‘ব্লাইন্ড রিভিউ’ পদ্ধতিতে পাঁচজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিচারক প্রতিযোগিতার বিজয়ী নির্বাচন করেন।
পুরস্কার হিসেবে চ্যাম্পিয়ন দল পাচ্ছে ৭৫০ মার্কিন ডলার এবং একটি আন্তর্জাতিক সনদপত্র। অন্যদিকে, প্রথম রানারআপ দল ৫০০ মার্কিন ডলার এবং দ্বিতীয় রানারআপ দল ২৫০ মার্কিন ডলারের পাশাপাশি একটি করে সনদপত্র পাচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত মার্চে এসিআই বিশ্বব্যাপী ভার্চুয়ালি এই প্রতিযোগিতার ঘোষণা দেয়। চুয়েট হতে প্রাপ্ত প্রজেক্টগুলো থেকে প্রাথমিক যাচাইবাছাই করে মে মাসে ৪টি প্রজেক্ট অনলাইনে এসিআই সদরদফতরে জমা করা হয়। বিশ্বের প্রায় ২৫০টি দেশে এসিআই স্টুডেন্ট চ্যাপ্টার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন দলের উপস্থাপিত প্রজেক্ট হচ্ছে- ‘এ ক্রিটিক্যাল রিভিউ অন দ্যা পারফর্মেন্স অব মাইক্রোবিয়াল কনক্রিট ডেভেলপমেন্ট ইউজিং ই-কলি ব্যাকটেরিয়া’। গবেষণাটির তত্ত্বাবধানে ছিলেন চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মইনুল ইসলাম।
প্রথম রানারআপ দলের উপস্থাপিত প্রজেক্ট ছিল- ‘ইফেক্ট অব কমপ্যাক্টিং অন দ্যা প্রোপার্টিস অব ইকো-ফ্রেন্ডলি ব্লিন্ডিং ব্লক ইউজিং ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাই-প্রোডাক্টস’ এবং দ্বিতীয় রানারআপ দলের উপস্থাপিত প্রজেক্ট ছিল- ‘টার্নারি কম্বিনেশন অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়েস্টেজ ফর সাস্টেইনেবল জিওপলিমার
মর্টারস’। এই দুটি গবেষণার তত্ত্বাবধানে ছিলেন এসিআই, চুয়েট স্টুডেন্টস চ্যাপ্টারের অনুষদ উপদেষ্টা ও পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. জি.এম. সাদিকুল ইসলাম।
এদিকে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাফল্য অর্জনকারী গবেষণা প্রবন্ধগুলো সম্পর্কে নিজেদের অনুভূতি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জনকারী গবেষণা সম্পর্কে মো. মাহফুজুল আলম বলেন, মাইক্রোবিয়াল কনক্রিটের অগ্রগতি বাংলাদেশের নির্মাণ ক্ষেত্রের গবেষণার নতুন একটি বিষয়। গবেষণাকালে অধিকতর শক্তিশালী ও টেকসই কনক্রিট তৈরি করার লক্ষ্যে ই-কোলি ব্যাকটেরিয়াল স্ট্রেন ব্যবহার করা হয়। যা ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ফাটল নিরাময়ে সহায়ক। এই গবেষণায় তৈরি করা কনক্রিট পরিবেশ বান্ধব। যা গ্রিনহাউজ গ্যাসের নিঃসরণ হ্রাস করে এবং বাংলাদেশের নির্মাণকাজে ব্যবহারের উপযোগী বলে আমরা মনে করি।
প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারী গবেষণাকর্ম সম্পর্কে এজাজ আহমেদ বলেন, ইট উৎপাদনে ইটের ভাঁটাগুলো একদিকে যেমন বিপুল পরিমাণে ক্ষতিকারক গ্যাস নিঃসরণ করছে অন্যদিকে ইট তৈরির কাঁচামাল যোগান দিতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে চাষাবাদযোগ্য উর্বর জমি নষ্ট হচ্ছে। বর্তমান সরকার ২০২৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশের সিংহভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো কয়লাকেন্দ্রিক করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তাই গবেষক দলের মূল উদ্দেশ্য ছিল কয়লাকেন্দ্রিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ফ্লাই অ্যাশ এবং অন্যান্য বড় বড় শিল্পকারখানাগুলো হতে উৎপন্ন আবর্জনাগুলোকে কাজে লাগিয়ে কীভাবে পরিবেশবান্ধব ইট তৈরি করা সম্ভব।
তৃতীয় স্থান অর্জনকারী গবেষণাকর্ম সম্পর্কে জান্নাতুল ফেরদৌস সোনিয়া বলেন, নির্মাণশিল্পে সিমেন্টের পরিবর্তে শিল্পবর্জ্যের ব্যবহার নিশ্চিতকরণই ছিল আমাদের গবেষণার প্রারম্ভিক এবং মূল লক্ষ্য। এসব বর্জ্য নির্মাণকাজে যথাযথ ব্যবহার করে উপযুক্ত ফলাফল পাওয়া বরাবরই আমাদের জন্য একটি সাফল্য। সেইসাথে পরিবেশবান্ধব নির্মাণের দিকে একটি উত্তম ধাপ বলে আমরা মনে করি।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চুয়েটের এমন অপ্রতিরোধ্য সাফল্যে শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম। একইসঙ্গে পুরকৌশল অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. মো. রবিউল আলম ও বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. সুদীপ কুমার পাল শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানান।
কেএম/এইচকে