বন্ধ ক্যাম্পাসে এত ময়লা!
প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে আসে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, নান্দনিক একটি ক্যাম্পাসের। তবে বাস্তব পরিস্থিতি ঠিক উল্টো। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ময়লা-আবর্জনা আর উচ্ছিষ্ট। যা থেকে তৈরি হচ্ছে দুর্গন্ধময় পরিস্থিতির। ফলে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে ক্যাম্পাসের নান্দনিকতা।
সরজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের হাকিম চত্বর, সমাজবিজ্ঞান চত্বর, ডাকসু ভবন ও মধুর ক্যান্টিন এলাকায় ময়লার স্তূপ জমে আছে। ড্রেনগুলো থেকে বের হচ্ছে দুর্গন্ধ।
রোকেয়া হল ও ভিসি চত্বর সংলগ্ন ফুলার রোডের সড়কগুলোর ফুটপাতে কুকুর-বিড়ালের বিষ্ঠা ও ময়লা আবর্জনায় পরিপূর্ণ। ভাসমান মানুষ, হকার-রিকশাওয়ালাদের মল-মূত্রের কারণে হাটার অযোগ্য হয়ে পড়েছে এসব এলাকায়।
ঠিক একই অবস্থা টিএসসি, পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র, বাংলা একাডেমি থেকে শুরু করে দোয়েল চত্বর-কার্জন হল হয়ে সুফিয়া কামাল-ফজলুল হক হলে সংলগ্ন সড়কের। একই ত ময়লা আবর্জনা, এর উপর আবার মেট্রো-রেলের নির্মাণকাজ চলার কারণে ইট-পাথর-বালুসহ কনস্ট্রাকশনের বিভিন্ন উপকরণে ভরপুর এসব এলাকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদ, শহীদ মিনার, জগন্নাথ হল সংলগ্ন সড়কেও মলমূত্র, ময়লা আবর্জনায় সয়লাব হয়ে আছে।
অন্যদিকে, কার্জন হল, শহীদ মিনার, সলিমুল্লাহ হল এলাকায় দেখা মেলে মাদকাসক্তদের। যারা দিনে-দুপুরে প্রকাশ্যে মাদক সেবন করে এবং যেখানে সেখানে ফেলে রাখছে মাদকের উচ্ছিষ্ট।
এছাড়া ক্যাম্পাসের অধিকাংশ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার অবস্থাও নড়বড়ে। এগুলো থেকে সৃষ্ট দুর্গন্ধের কারণে অনেক সময় চলাফেরা করা দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে পথচারীদের। যে কয়েকটি ডাস্টবিন আছে সেগুলোও নষ্ট ও ব্যবহারের অনুপযোগী।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, ক্যাম্পাসে এ অবস্থার জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী ভাসমান মানুষ, ভবঘুরে-মাতাল, মাদকাসক্ত, রিকশাওয়ালা-হকার এবং বেওয়ারিশ কুকুর-বিড়াল। তবে প্রশাসন তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগগুলোর উদাসীনতা ও দায়িত্বহীনতাও এর জন্য কোনে অংশে কম দায়ী নয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী তানজিলা আক্তার বলেন, প্রায় নয়মাস ধরে ক্যাম্পাস বন্ধ আছে। যেহেতু ক্যাম্পাস খোলা থাকাকালীন উন্নয়ন কাজে বেগ পেতে হতো, সেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাইলেই এই সময়টাকে কাজে লাগিয়ে ক্যাম্পাসকে আরো সুন্দর ও চলাচল উপযোগী করে তুলতে পারতো। কিন্তু সেরকম কিছুই চোখে পড়েনি।
কায়সার আহমেদ নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, এ অবস্থায় মাঝেমধ্যে ক্যাম্পাসটিকে পরিত্যক্ত পার্ক অথবা চিড়িয়াখানায় মনে হয়। এটি কোনো শিক্ষার পরিবেশ হতে পারে না। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী অমিত কুমার দাস বলেন, নিজের ক্যাম্পাস হওয়া স্বত্বেও এখানে চলাফেরা করতে ভয় লাগে, অস্বস্তি অনুভব হয়। ক্যাম্পাসে বিদ্যমান এসব ময়লা আবর্জনা থেকে সৃষ্ট রোগজীবাণু যে কাউকেই অসুস্থ করে দিতে পারে।
এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. খলিলুর রহমানের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, বর্তমানে ক্যাম্পাস পরিবেশের সামগ্রিক যে অবস্থা, তা একটি বিশ্ববিদ্যালয় ভাবনার সাথে যায় না। এমন পরিবেশ শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশকে মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত করে।
ক্যাম্পাসের এ অবস্থার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও উদাসীনতাকে দায়ী করে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিষয়ক একটি স্বতন্ত্র বিভাগ আছে। এটি যদি স্বয়ংক্রিয়ভাবে অন্যান্য বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করে তাহলে খুব সহজেই ক্যাম্পাসকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা যায়। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদেরও এ ব্যাপারে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে। এ কাজে সবার সদিচ্ছা দরকার।
সামগ্রিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, আমরা সিটি করপোরেশন ও পুলিশ নিয়ে ক্যাম্পাসের ভাসমান দোকান ও অবৈধ স্থাপনাগুলোর উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছি। আমরা বিষয়গুলো সার্বক্ষণিক তদারকি করছি। একটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ক্যাম্পাস গড়ে তুলতে ছাত্র-শিক্ষক তথা সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতার প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের একার পক্ষে তা সম্ভব না।
বহিরাগত ও যানবাহন নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাজধানীর একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থিত। আমাদের ক্যাম্পাসে বাংলা একাডেমি, পরমাণু শক্তি কেন্দ্র, ঢাকা মেডিকেলসহ অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে। তাই চাইলেও অনেক কিছু করা সম্ভব হয় না।
ফুটপাতে মলমূত্র ত্যাগ ও মাদকাসক্তদের নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে তিনি বলেন, ছিন্নমূল জনগোষ্ঠী ও বহিরাগতরা এ কাজ করে থাকে। বিভিন্ন সময় পদক্ষেপ নেওয়া হলেও তাদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন কাজ। আমাদের প্রক্টোরিয়াল টিম এ বিষয়ে সবসময় দায়িত্বরত আছে। এসব মানুষের অনেকাংশকেই আমাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছি।
এমএইচএস