ঢাবিতে হল না খুলে সশরীরে পরীক্ষার সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান
আবাসিক হল না খোলার শর্ত জুড়ে দিয়ে সশরীরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার ফাইনাল ও বার্ষিকসহ সব পরীক্ষা সশরীরে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
‘হল-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দাও’ আন্দোলনের সমন্বয়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আসিফ মাহমুদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা দাবি জানিয়েছিলাম, হল-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে পরীক্ষা নিতে হবে। আমাদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটা সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করেছে এটা আমাদের সফলতা। তবে হল না খোলার সিদ্ধান্ত আমরা প্রত্যাখ্যান করছি।
আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘হল না খুললে শিক্ষার্থীরা ভোগান্তিতে পড়বে। মেসে থেকে পরীক্ষা দেওয়ার সামর্থ সব শিক্ষার্থীর নেই। আমাদের হল খোলার যে দাবি, সে দাবি নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাব।’
আন্দোলনরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘যেসব শিক্ষাৰ্থী হলে থাকে তারা অধিকাংশই নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান। গেস্টরুম নামক টর্চার সেল মেনে নিয়েও থাকতে বাধ্য হয় অৰ্থনৈতিক দুরাবস্থার জন্য। সেখানে আবাসিক হল না খুলে পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা স্বৈরাচারী সিদ্ধান্ত বলে মনে করি। আশা করি বিশ্ববিদ্যালয় প্ৰশাসন এ ধরনের হটকারী সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে শিক্ষাৰ্থী বান্ধব সিদ্ধান্ত নেবেন।
প্রগতিশীল ছাত্র জোট ঢাবি শাখার সমন্বয়ক ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য সোহাইল আহমেদ বলেন, ‘আমরা আগেই বুঝতে পেরেছিলাম একাডেমিক কাউন্সিল এই সিদ্ধান্ত দিবে। কিন্তু আমরা এই সিদ্ধান্ত মেনে নেব না। আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। সবার সঙ্গে আলোচনা করে আমরা পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব।’
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আপাতত কোনোভাবেই হল খোলার সিদ্ধান্ত নিতে পারব না। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে টিকা না দিয়ে শিক্ষার্থীদের হলে তোলা যাবে না। আমরা সরকারের কাছে আবেদন করেছি, সরকারও আমাদের ডাকে সাড়া দিয়েছেন। আশা করি দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সবাই টিকা পাবে।’
এদিকে মঙ্গলবার (১ জুন) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা পরিষদের (একাডেমিক কাউন্সিল) সভায় এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একাডেমিক কাউন্সিলে উপস্থিত একাধিক সদস্য ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) এ এস এম মাকসুদ কামাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আবাসিক হল না খোলা ও স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্তে সশরীরে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি একাডেমিক কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অনার্স ও মাস্টার্স পর্যায়ের যেসব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছিল তাদের পরীক্ষা আগামী ১৫ জুন থেকে সশরীরে অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি বলেন, ‘ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের সম্মতিতে সংশ্লিষ্ট বিভাগ/ইনিস্টিটিউট সেসব পরীক্ষা নেবেন। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে একইভাবে সব বর্ষের পরীক্ষা ১ জুলাই থেকে সশরীরে অনুষ্ঠিত হবে। তবে করোনা সংক্রমণ বেড়ে গেলে গত ৬ মের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সব পরীক্ষা অনলাইনে অনুষ্ঠিত হবে।
মাকসুদ কামাল আরও বলেন, যেসব বর্ষের/সেমিস্টারের শিক্ষার্থীদের সেশনজট হয়েছে কিংবা সম্ভাবনা রয়েছে তাদের সেমিস্টারের সময় ৬ মাসের পরিবর্তে ৪ মাস ও বার্ষিক কোর্স পদ্ধতির ক্ষেত্রে ১২ মাসের পরিবর্তে ৮ মাস করা হবে। সিলেবাস সংক্ষিপ্ত হবে কি-না সে সিদ্ধান্ত বিভাগ/ইনিস্টিটিউটগুলোকে নিতে বলা হয়েছে।
এইচআর/ওএফ