ফিলিস্তিনের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম বৈধ ও ন্যায্য

ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা। একইসঙ্গে জেরুজালেমে ফিলিস্তিনিদের পূর্ণ অধিকার রয়েছে এবং তাদের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম বৈধ ও ন্যায্য বলে জানান তারা।
সোমবার (৭ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টায় বুয়েটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে বুয়েটের বেশ কয়েকজন শিক্ষকও মানববন্ধনে অংশ নেন।
এসময় তারা ‘ফ্রম দ্য রিভার টু দ্য সি, প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি’, ‘ইস্ট টু ওয়েস্ট, নো ফ্লো টু জায়নিস্ট’, ‘মেঘনা টু জেরুজালেম, ইনসাফ ইনসাফ’, ‘শেম শেম জায়নিস্ট, মেক ফ্রি প্যালেস্টাইন’, ‘ফিলিস্তিন মুক্তি পাক, ইসরায়েল নিপাত যাক’; ‘ইনকিলাব ইনকিলাব, আল আকসা জিন্দাবাদ’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
বুয়েট শিক্ষার্থীরা বলেন, গাজায় নিরীহ শিশু, নারী এবং সাধারণ মানুষের ওপর যে নৃশংসতা চালানো হচ্ছে তা শুধু একটি রাজনৈতিক সংকট নয়, এটি একটি চরম মানবিক ও নৈতিক সংকট। এমনকি যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন, মানবিক করিডোরে হামলা এবং জরুরি স্বাস্থ্যসেবা কাঠামো ধ্বংসের মতো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সভ্যতার চরম অবক্ষয়। আমরা বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় চলমান অমানবিক সহিংসতা, নির্বিচারে হত্যা, বোমাবর্ষণ, রাসায়নিক হামলা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
আরও পড়ুন
তারা বলেন, আমরা এই বর্বরতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে, সংগঠিত হতে এবং কার্যকর অবস্থান নিতে সর্বদা নৈতিকভাবে একতাবদ্ধ। শুধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদ জানানোই যথেষ্ট নয়, এখন সময় এসেছে রাস্তায় দাঁড়ানোর, কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে মানবতার পক্ষে আওয়াজ তোলার। ‘গ্লোবাল স্ট্রাইক ফর গাজা’র অংশ হিসেবে আমরা আজ বিশ্বের অন্যান্য সচেতন মানুষের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছি।
যুক্তরাষ্ট্র ও আরব দেশের নিষ্ক্রিয়তার কারণে এই সংকট দীর্ঘায়ত হচ্ছে উল্লেখ করে তারা বলেন, আমরা দৃঢ়ভাবে নিন্দা জানাই ইসরায়েলের পরিচালিত গণহত্যার এবং সেইসঙ্গে নিন্দা জানাই তথাকথিত মানবতার ঝান্ডাধারী যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য পরাশক্তিদের যারা এই হত্যাযজ্ঞে পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। একইসঙ্গে আমরা গভীর হতাশা প্রকাশ করছি অর্থনৈতিক এবং সামরিকভাবে শক্তিশালী আরব বিশ্বের দেশগুলোর ভূমিকা দেখে, যারা এই নিষ্ঠুরতার সময়ে নীরবতা পালন করছে। তাদের এই নিষ্ক্রিয়তা নিপীড়নকে আরও দীর্ঘস্থায়ী করেছে। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কার্যকর পদক্ষেপের অভাব বিশ্বমানবতার জন্য হতাশাব্যঞ্জক।
শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা এই মানববন্ধনের মাধ্যমে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিতে চাই ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। আমরা আশা করছি ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধে আন্তর্জাতিক মহল অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, যুদ্ধবিরতি ঘোষিত হবে এবং মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করা হবে। বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে ফিলিস্তিনের প্রতি অব্যাহত সহমর্মিতা এবং সকল প্রকার সহযোগিতা চালু রাখা হোক।
তারা বলেন, আমরা গাজার মানুষের, আমাদের ভাই-বোনের পাশে আছি। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের ফিলিস্তিনের ভাই-বোনেদের এই পবিত্র ভূমি ওপর পরিপূর্ণ অধিকার রয়েছে এবং তাদের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম বৈধ ও ন্যায্য।
মানববন্ধনে বুয়েটের উপ-উপাচার্য ড. আব্দুল হাসিব চৌধুরী বলেন, ফিলিস্তিনের দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী পৌনে এক শতাব্দী ধরে দখলদারিত্ব বজায় রেখেছে, গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আরব বিশ্ব ও অন্যান্য ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলো নীরব রয়েছে। আমি মনে করি অতি শিগগির ধ্বংসস্তূপ থেকে স্বাধীন ফিলিস্তিনের উত্থান ঘটবে এবং এই উত্থানই সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদের ঐতিহাসিক পরাজয়ের সূচনা করবে।
কেএইচ/এসএসএইচ