বসন্তের ফুলে সজ্জিত বেরোবি ক্যাম্পাস

শীত পেরিয়ে বসন্ত। চারদিকে রঙের মেলা, পাখির কলরব আর মনকাড়া সৌরভ। শীতের নিষ্প্রাণ প্রকৃতিকে বিদায় জানিয়ে নবজীবন নিয়ে আসে বসন্ত। এই ঋতুতে গাছে গাছে নতুন পত্র-পল্লবের পাশাপাশি ফুটে ওঠে বাহারি রঙের ফুল। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ক্যাম্পাসও বসন্তের ছোঁয়ায় হয়ে ওঠে বর্ণিল, প্রাণবন্ত ও উৎসবমুখর।
বিজ্ঞাপন
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি কোণায় কোণায় বসন্তের আগমনি বার্তা নিয়ে বাহারি রঙের ফুল। রাস্তার ধারে, মাঠের পাশে কিংবা প্রশাসনিক ভবন, আবাসিক হলের সামনে নানা রঙের ফুল ফুটে ক্যাম্পাসকে এক স্বপ্নিল রূপ দেয়। বিশেষ করে গোলাপের টকটকে লাল আভা যেন আগুনের শিখার মতো জ্বলজ্বল করে। পাশাপাশি গাঁদা, জাম্বু গাঁদা, ক্যালেন্ডুলা, পিটুনিয়া, ভাররবিনা, দেশি সিলভিয়া, হাইব্রিড গোলাপ, চন্দ্রমল্লিকা, ড্যামথাস, ডালিয়া, গোলাপ, মোরগ ঝুঁটি, সূর্যমুখীসহ বিভিন্ন রঙের ফুলের দীপ্তিময় উপস্থিতি ক্যাম্পাসজুড়ে এক উৎসবের আবহ তৈরি করে।
বসন্ত শুধু গাছপালা আর মানুষের মধ্যেই প্রাণের সঞ্চার ঘটায় না, পশু-পাখিরাও এ সময় তাদের সেরা রূপ ধারণ করে। ক্যাম্পাসের গাছে গাছে বসে থাকে দোয়েল, শালিক, টুনটুনি আর নানা জাতের পাখি। তাদের কিচির-মিচির ডাকের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের হাসি-আনন্দ মিলেমিশে এক স্বর্গীয় পরিবেশ সৃষ্টি করে। প্রজাপতির আনাগোনা, মৌমাছির গুঞ্জন আর বাতাসে ছড়িয়ে পড়া ফুলের সৌরভ প্রকৃতিকে আরও বেশি সজীব করে তোলে।
বিজ্ঞাপন
বসন্তের ফুলে সজ্জিত ক্যাম্পাস শুধু রূপে নয়, অনুভূতিতেও সমৃদ্ধ করে সবাইকে। ব্যস্ত শিক্ষাজীবনের ফাঁকে এই ঋতুর রং ও সৌন্দর্য যেন শিক্ষার্থীদের ক্লান্তি ভুলিয়ে দেয়। বসন্তের এই মোহময় পরিবেশ একদিকে যেমন ভালোবাসায় মুগ্ধ করে, অন্যদিকে সৃষ্টিশীলতাকে জাগিয়ে তোলে। প্রতি বছর বসন্ত ফিরে আসে, ক্যাম্পাসকে রাঙিয়ে দিয়ে যায় নতুন রঙে, নতুন প্রাণে। বসন্তের ফুলে সজ্জিত এই ক্যাম্পাস হয়ে ওঠে ভালোবাসার, সৃষ্টির ও উদ্দীপনার এক স্বপ্নরাজ্য, যা শিক্ষার্থীদের স্মৃতির পাতায় চির অমলিন হয়ে থাকে।
বিজ্ঞাপন
ক্যাম্পাসের প্রতিটি স্থানে শিক্ষার্থীদের প্রাণচাঞ্চল্য দেখা যায়। কেউ বসন্তের ফুলের সঙ্গে ছবি তুলতে ব্যস্ত, কেউ-বা বন্ধুদের নিয়ে আড্ডায় মেতে ওঠে। ক্যাম্পাসের খোলা প্রাঙ্গণে বসন্তের আবহে গান-বাজনা, কবিতা আবৃত্তি, বসন্ত উৎসবের আয়োজন হয়ে ওঠে শিক্ষার্থীদের অন্যতম বিনোদন। শুধু শিক্ষার্থীরাই নয় ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য উপভোগ করতে বন্ধু-বান্ধব, পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরতে আসেন দর্শনার্থীরা। তারা ফুলের সঙ্গে ছবি তুলে নিজেদের স্মৃতিকে ফ্রেমবন্দি করে রাখেন।
আরও পড়ুন
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মুজাহিদুল হক বলেন, বিভিন্ন ধরনের ফুল ফুটে ক্যাম্পাসটি যেন নতুন রূপে সেজেছে। দূর থেকে দেখতে ফুলের বাগানের মতো মনে হয়। প্রজাপতি বসছে। দৃশ্যগুলো অনেক সুন্দর।
তানজিউল হাসান জীম নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, সবুজে ঘেরা ক্যাম্পাসটিকে তার খুবই ভালো লাগে। বিভিন্ন ধরনের ফুল ফুটে ক্যাম্পাসটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। তার মন খারাপ হলেই ক্যাম্পাসে আসে। ক্যাম্পাসের প্রকৃতির সঙ্গে থাকলে আবার মন ভালো হয়ে যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরতে আসা এক দর্শনার্থী বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের সবার একটি আবেগের জায়গা, যেখানে জুলাই বিপ্লবে আবু সাঈদ শহীদ হয়েছেন। ফুল সবারই প্রিয়। ফুল মানুষের মনকে সতেজ করে প্রকৃতিতে যোগ করে এক নতুন মাত্রা। আজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরতে এসে নানান ধরনের ফুল দেখে মনে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রকৃত বসন্ত এসেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিরঙ্গণের পরিচালক ড. মো. ফেরদৌস রহমান বলেন, আমরা উপাচার্য স্যারের পরামর্শক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশকে আরও শিক্ষার্থীবান্ধব, দৃষ্টিনন্দন, পড়ালেখার পরিবেশ উপযোগী এবং মনোরম পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জায়গায় ফুলবাগান করার উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা ২০ প্রজাতির ফুল গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছিলাম বেশ কিছু প্রজাতির ফুলগাছ লাগিয়েছি। পরবর্তীতে বাকি প্রজাতির ফুলগাছগুলো পর্যায়ক্রমে ফাঁকা স্থানসমূহে লাগানো হবে।
শিপন তালুকদার/এএমকে