আন্তর্জাতিক নারী দিবসে ঢাবি ছাত্রদলের বইমেলা ও আলোচনা সভা

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) দিনব্যাপী বইমেলার আয়োজন করছে ঢাবি শাখা ছাত্রদল।
‘অদম্য নারী, শক্তিতে অজেয়’ শ্লোগানকে ধারণ করে শনিবার (৮ মার্চ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের মাঠে এ বইমেলা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভা শেষে আন্দোলনে আহত নারী ও শহীদ পরিবার এবং বিগত ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার সময়ে বিভিন্ন সময় নির্যাতনের নিপীড়নের শিকার নারীদের সম্মাননা দেওয়া হয়।
নারী উদ্যোক্তা ও বইমেলা ঘুরে দেখা যায়, নারীদের বিভিন্ন স্টলে বিক্রি হচ্ছে বই, খাবার, পোশাকসহ নানা দ্রব্য। ঢাবি শিক্ষার্থী এবং ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের স্টলগুলো ঘুরতে দেখতে এবং বই কিনতে দেখা গেছে। স্টলগুলোতে জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে লেখা বিভিন্ন বই প্রদর্শন ও বিক্রি করতে দেখা যায়।
সভায় জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের নিহত নাফিসা হোসেনের মামা উপস্থিত ছিলেন। ভাগ্নি হত্যার বিচার চেয়ে তিনি বলেন, আজকে এখানে এভাবে আসতে হবে ভাবিনি। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহত আমার ভাগ্নি নাফিসা একজন নারী শহীদ। সাভারে ৫ আগস্ট পুলিশের গুলিতে তিনি শহীদ হন। আমার ভাগ্নিকে যারা গুলি করে হত্যা করেছে তাদের যেন বিচার হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে নির্যাতনের শিকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কোবরা। তিনি বলেন, নারীর পুরুষ সমান অধিকার মানে এই না যে নারীকে পুরুষের মতো সিগারেট খাওয়ার অধিকার দেওয়া। ন্যায্যতার ভিত্তিতে নারীর সব অধিকার নিশ্চিত করাই নারী অধিকারের মূল বিষয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলে, নারীদের সমতা অধিকার তখনই হবে যখন নারী পুরুষ উভয়ই পাশাপাশি কাজ করবে এবং একই মেধা নিয়ে, কর্মপ্রচেষ্টা নিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আমরা বিভিন্ন স্লোগানকে উপজীব্য করে শুধু নারী দিবসের দিনটায় সভা করছি, র্যালি করছি, বিভিন্ন অনুষ্ঠান করছি। কিন্তু পরবর্তী দিন আমরা আর নারীদের মনে রাখছি না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অনেক ছাত্রী বোন অংশগ্রহণ করেছিল। কিন্তু ৫ আগস্টের পরে তাদের আর কোথাও দেখা যাচ্ছে না। আন্দোলন সংগ্রাম করে ফ্যাসিস্টকে পালাতে বাধ্য করার পরেও কেন তাদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে না?
তিনি আরও বলেন, শিক্ষাজীবনে যে-সব বোনেরা ছাত্রদল করতো বৃহৎ রাজনীতিতে তারা অবস্থান করে না। এখন আমরা নারীরা যদি নারীর ক্ষমতায়নের কথা তুলতে না পারি তাহলে নারী পুরুষ যে সমতার কথা বলা হচ্ছে তা কখনোই আসবে না। দেশের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর অংশগ্রহণ করতে পারে একমাত্র রাজনীতির মাধ্যমে। নির্বাচনকে সামনে রেখে সারা দেশে নারীদের কীভাবে মূল্যায়ন করা যায় সে বিষয়ে চিন্তা করা দরকার। এসময় তিনি নারীদের সংসদীয় আসন বাড়িয়ে দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
আরও পড়ুন
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান নারীদের যা ভূমিকা তা আমরা লক্ষ্য করেছি এবং তা বিশ্ব স্বীকৃত হয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের নিহত হওয়া শহীদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ নারী এবং শিশু। নারীরাই সব সময় সব গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক সংগ্রামে এগিয়ে ছিল। আমরা দেখেছি প্রকৃতপক্ষে আমাদের এই অর্জিত বিজয়ে নারীদের অংশ রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিএনপির দেওয়া ৩১ দফায় এবং নারীর ক্ষমতার প্রতিশ্রুতির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সমাজের সব স্তরে নারীদের ক্ষমতায়ন করা হবে সাংবিধানিকভাবে, সংসদীয়, প্রাতিষ্ঠানিক এবং আইনিভাবে। আমরা আমাদের এবং অন্যান্য দলের প্রস্তাবনার মধ্য দিয়ে সংসদে নারীদের সংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমে একটি সংসদীয় গঠন করে নারীর ক্ষমতায়নে ভূমিকা রাখব। আমরা নারী ক্ষমতায়নের দিকে যত এগিয়ে যাব বিশ্বে আমাদের দেশ তত এগিয়ে যাবে।
আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান এবং সালাউদ্দিন আহমেদ, কেন্দ্রীয় ছাত্রদের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন নাসির, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের নেতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস, সাধারণ সম্পাদক নাজিমুজ্জামান শিপনসহ ঢাবি ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ে নেতা-কর্মীরা।
এমএন