পরীক্ষার হলে শিক্ষার্থীরা, বাইরে উৎকণ্ঠায় অভিভাবকরা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের 'এ' ইউনিট তথা বিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। পরীক্ষা শুরুর এক ঘণ্টা আগেই শিক্ষার্থীরা প্রবেশ করেছেন নিজ নিজ কেন্দ্রে। ইতোমধ্যেই পরীক্ষা শুরুর ঘণ্টা বেজেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স হবে কিনা সেটা ভেবে পরীক্ষার হলে একদিকে যেমন শিক্ষার্থীরা চিন্তিত তেমনই হলের বাইরেও অভিভাবকদের ব্যাপক উৎকণ্ঠিত দেখা গেছে।
বিজ্ঞাপন
পরীক্ষার হলে ভেতরে তাদের সন্তান কি করছে, প্রশ্নের সঠিক উত্তর করতে পারছে কি-না সেটা ভেবেই তাদের চিন্তার যেন শেষ নেই। কেউ গল্প করছেন আবার কেউ সৃষ্টিকর্তার কাছে করছেন প্রার্থনাও। নিজের সন্তান কিংবা ছোট ভাই-বোনের জন্য চিন্তার যেন শেষ নেই।
শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) ভর্তি পরীক্ষা চলাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা, বিজনেস স্টাডিজ ও সামাজিক বিজ্ঞান ভবন এলাকায় ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন
সরজমিনে দেখা যায়, নিজের সন্তান, ভাই-বোন বা ছাত্রকে পরীক্ষার কেন্দ্রে পাঠিয়ে কেন্দ্রের বাইরে অপেক্ষা করছেন অভিভাবকরা। তাদের সবার চিন্তা, নিজের সন্তান-ভাই-বোন কিংবা শিক্ষার্থীর দীর্ঘদিনের অক্লান্ত পরিশ্রম কি বৃথা যাবে নকি তারা সাফলতার সিঁড়িতে পা রাখতে পারবেন।
বিজ্ঞাপন
সরজমিনে দেখা যায়, বটতলায় কলা অনুষদের ডিন অফিস থেকে বসানো হয়েছে যাত্রী ছাউনি। সেখানে কয়েকজন অভিভাবকের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের দীর্ঘদিনের পরিশ্রমের গল্প শোনান। না খেয়ে না ঘুমিয়ে গত কয়েক মাস কাটানোর স্মৃতি বর্ণনা করেন।
সালমা আক্তার নামের একজন অভিভাবক এসেছেন তার একমাত্র মেয়েকে নিয়ে। মেয়ের পরীক্ষার সিট পড়েছে কলা ভবনের ৪র্থ তলায়৷ তিনি বলেন, আমার মেয়েটা দীর্ঘদিন ধরে কত কষ্ট করে পড়াশোনা করেছে। চান্স হবে কিনা জানি না। তবে মেয়েটা কষ্টের কমতি রাখে নাই। আল্লাহ কাছে দোয়া করি, আমার মেয়ের স্বপ্ন যেন পূর্ণ হয়।
কথা হয় আরও একজন অভিভাবকের সঙ্গে যিনি একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। তার মেয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ১২ তলায়। তিনিও তার মেয়ের সাফল্যের জন্য দোয়া করছেন।
আরেক শিক্ষার্থীর অভিভাবককে বেশ উৎকণ্ঠিত অবস্থায় দেখা যায়। তিনি বলেন, আমিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রী। আমি চাই আমার ছেলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাক। সে আমার কাছে ঢাবির গল্প শুনে উদ্বুদ্ধ হয়েছে, অনুপ্রেরণা পেয়েছে। সে অনুযায়ী সে পড়াশোনাও করেছে। কখনো কোনো কমতি রাখেনি। আল্লাহর কাছে আমি চাই, তিনি যেন আমার ছেলের আশা পূর্ণ করেন।
পঞ্চাষোর্ধ অভিভাবক আব্দুস সালাম তার ছেলেদের গল্প শোনালেন। পরীক্ষার্থী তার ছোট ছেলে। আগের ৩ ছেলের সবাই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
তিনি বলেন, আমার ছেলের উপর বিশ্বাস আছে। আল্লাহ আমার ছেলের পরিশ্রমকে বিফলে ফেলবেন না।
সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবনের বাইরে অপেক্ষমাণ আরেক অভিভাবক বলেন, আমার ছেলেটা পরীক্ষার হলে বসে আছে, মাত্রই পরীক্ষা শুরু হলো। সে সবসময়ই বেশি চিন্তা করে। প্রশ্ন পেয়ে ঘাবড়ে গেলো কি-না বুঝতে পারছি না। দীর্ঘদিনের প্রস্তুতি আল্লাহ যেন বিফলে না যায় আল্লাহর কাছে এই দোয়া করি।
আরেক অভিভাবক বলেন, মেয়েটার খুব স্বপ্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে। চান্স না পেলে মেয়েটা ভেঙে পড়তে পারে বলে চিন্তা হচ্ছে।
অন্য আরেক অভিভাবক বলেন, ছেলেকে বলেছি শান্ত থাকতে পরীক্ষার হলে কিন্তু নিজেই শান্ত থাকতে পারছি না। আল্লাহ যেন ছেলেটাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ দেন।
প্রসঙ্গত, আজ শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায় দেশের ৮টি বিভাগীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢাবির বিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়৷ পরীক্ষার সময় ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট। সে হিসেবে সাড়ে ১২টায় ভর্তি পরীক্ষা শেষ হবে। ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে বিজ্ঞান ইউনিটে সর্বাধিক আবেদন জমা পড়েছে। এবার ১ হাজার ৮৯৬টি আসনের বিপরীতে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৬৯৪ জন শিক্ষার্থী আবেদন করেছেন। প্রতি আসনের বিপরীতে লড়বেন ৭৭ জন শিক্ষার্থী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ভর্তি পরীক্ষার মোট সময় ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট। পরীক্ষা এমসিকিউ এবং লিখিত (বর্ণনামূলক) প্রশ্নে অনুষ্ঠিত হবে। ভর্তি পরীক্ষার মোট নম্বর হবে ১০০; তার মধ্যে ৬০ নম্বরের এমসিকিউ এবং ৪০ নম্বরের লিখিত (বর্ণনামূলক) প্রশ্ন থাকবে। এমসিকিউ পরীক্ষা ৪৫ মিনিট এবং লিখিত (বর্ণনামূলক প্রশ্ন) পরীক্ষা ৪৫ মিনিটের হবে। ভর্তি পরীক্ষায় কোনো প্রকার ক্যালকুলেটর বা ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করা যাবে না।
কেএইচ/এমএসএ