মহানবী (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তি করা শিক্ষককে চাকরিচ্যুতের দাবি
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তি করা এবং ২৪-এর শহীদদের নিয়ে উপহাস এর অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক শিশির ভট্টাচার্য এবং গণঅভ্যুত্থানে গণহত্যার সহযোগিতা করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি নিজামুল হক ভূঁইয়াসহ ফ্যাসিবাদীর সব দোসর শিক্ষকদের ‘কঠোর’ বিচারের দাবি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী।
বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) রাত ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে এমন দাবি জানান তারা।
এসময় আওয়ামী লীগের আমলে করা সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে ডাকসুর রূপরেখা প্রণয়ণের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুন
এসময় শিক্ষার্থীরা, ‘হৈ হৈ রৈ রৈ, শিশির তুই গেলি কই’; বিশ্বনবীর অপমান, সইবে না মুসলমান, ‘ধর্ম/শহীদ নিয়ে তামাশা, চলবে না চলবে না’; শিশির/নিজামুল হকের দুই গালে, জুতা মারো তালে তালে’; অবৈধ /দালালদের/ফ্যাসিবাদের সন্ডিকেট, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’; শিক্ষক সমিতি, বয়কট বয়কট’; ফ্যাসিবাদের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’ স্লোগান দিতে থাকেন।
বিক্ষোভ সমাবেশে শিক্ষার্থীরা ৪ দফা দাবি জানান। দাবিগুলো হলো :
১. বিশ্বনবীকে অপমান ও ২৪ এর শীদদের অবমাননার জন্য শিশির ভট্টাচার্যকে চাকরিচ্যুত করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
২. যে-সব শিক্ষকরা গণহত্যায় মদদ দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে৷
৩. বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট বডি দ্রুত ভেঙে দিয়ে নিয়মতান্ত্রিকভাবে সিন্ডিকেট গঠন করতে হবে।
৪. অতিদ্রুত ডাকসুর রূপরেখা প্রণয়ন করতে হবে৷
আরও পড়ুন
সমাবেশে, ঢাবির ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী মাহফুজা আক্তার স্মৃতি বলেন, বিশ্বনবীকে অবমাননা করা একজনকে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে দেখতে চাই না। আমরা চাই, সে শিক্ষার্থীদের সামনে ক্ষমা প্রার্থনা করবে, অন্যথায় তাকে অবশ্যই চাকরিচ্যুত করতে হবে।
অন্যদিকে, ফ্যাসিবাদের দোসর যে-সব শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের উপর হামলার পরেও চুপ ছিল, গণহত্যায় যারা মদদ দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানাই।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এবি জুবায়ের বলেন, আজকে আমরা বিশ্বনবীকে অপমান এবং চব্বিশের শহীদদের অবমাননার জন্য শিক্ষক নামের কলঙ্ক শিশির ভট্টাচার্যকে পদচ্যুত করে বিচার নিশ্চিতের দাবিতে এখানে দাঁড়িয়েছি। আমরা চাই এই শিক্ষককে দ্রুত চাকরিচ্যুত করা হোক। তাকে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখতে চাই না।
তিনি বলেন, ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে নীল দলের শিক্ষকরা নিজামুল হক ভূইয়ার নেতৃত্বে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল। তারা এখনো ক্যাম্পাসে অবস্থান করছে এবং ক্লাসেও অংশ নিচ্ছে। যেখানে আমরা শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছি সেখানে এই দালাল শিক্ষকদের বিরুদ্ধে এখনো কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। আমরা এই শিক্ষকদের দ্রুত বিচারের দাবি জানাই।
শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভকালে শিক্ষার্থীদের দাবি শুনতে সেখানে উপস্থিত হন ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান এবং প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমদ।
উপাচার্য বলেন, যেকোনো ব্যক্তি বা ধর্মীয় বিষয়ে কথা বলার আগে সবাইকে অবশ্যই আরও সচেতন হতে হবে। এটা অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি বিষয় যা নিয়ে আমাদের কোন প্রকার বিরূপ মন্তব্য করা উচিত না। তাকে যদি চাকরিচ্যুত বা শাস্তির আওতায় আনতে হলে সেটা আইনি পদক্ষেপের মাধ্যমে যেতে হবে।
তাছাড়া, অভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণও আইনি পদক্ষেপের মাধ্যমে এগিয়ে নিতে হবে৷ আমি আইনি পদক্ষেপগুলো দেখবো কতদিন সময় নেয়, পরবর্তীতে তোমাদের জানিয়ে দিবো।
সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ৫ জন শিক্ষককে সিন্ডিকেট থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে৷ বাকিগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
নীল দলের শিক্ষকরা গোপনে জড়ো হয়ে পুনরায় নির্বাচন চাচ্ছে-এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এটা গতকাল শুনেছি। আগামীকাল আমরা মিটিং ডেকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবো।
কেএইচ/এমএসএ