নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারে উচ্ছ্বাস
কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবি হিসেবে গেজেট প্রকাশের অনুমোদন দেওয়ায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন ময়মনসিংহের ত্রিশালে কবির নামে প্রতিষ্ঠিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, র্দীঘদিন পরে হলেও কাজী নুজরুল ইসলামকে জাতীয় কবি হিসেবে গেজেট প্রকাশের অনুমোদন দেওয়ায় আমরা আনন্দিত। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের এই সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। আমি বিশ্বাস করি এই স্বীকৃতির মাধ্যমে কবির সৃষ্টিশীল কর্ম ব্যাপকভাবে দেশ ও বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে।
রোববার (৮ ডিসেম্বর) দুপুরে এক প্রতিক্রিয়ায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম ঢাকা পোস্টকে এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে উপাচার্য বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের এই সিদ্ধান্ত দেশ ও জাতির জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আশা করব কবির সৃষ্টিশীল কর্ম বিশ্বব্যাপী তুলে ধরতে আরও বেশি ভূমিকা রাখবে বর্তমান সরকার।
একই ধরনের মন্তব্য করেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. আহাম্মেদুল বারী। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ১৯২৯ সালে কলকাতার আলবার্ট হলে সর্বপ্রথম কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবি হিসেবে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ধর্ম লিঙ্গ ভেদে আমাদের ভাষাভিত্তিক জাতি ও রাষ্ট্র গঠনে তিনি পৃথিকৃৎ পুরুষ। র্দীঘদিন পর এই স্বীকৃতি রাষ্ট্রীয়ভাবে নবায়ন হওয়ায় নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে আমি আনন্দিত এবং গর্বিত। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে আমি মনে করি একটি রাষ্ট্রীয় বিতর্কের অবসান হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
এর আগে গত ৫ ডিসেম্বর বর্তমান সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের এক বৈঠকে প্রেম ও দ্রোহের কবি কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবি ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশের অনুমোদন দেওয়া হয়। এই খবরে কবির নামে প্রতিষ্ঠিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস ও আনন্দের সৃষ্টি হয়।
সূত্র মতে, ১৯৮৭ সাল থেকে কাজী নজরুল ইসলামকে দেশের জাতীয় কবির মর্যাদা দেওয়া হলেও এই বিষয়ে রাষ্ট্রীয় কোনো স্বীকৃতি ছিল না। শুধুমাত্র কবি কাজী নজরুল ইনস্টিটিউট আইনে জাতীয় কবি হিসেবে কাজী নজরুল ইসলামের নাম লেখা আছে।
এদিকে গেজেট প্রকাশের অনুমোদনের পর সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের রুটিন দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত সচিব মো. আতাউর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, জাতীয় কবির নাম সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবটি অনুমোদন হয়নি। কারণ সংবিধান সংশোধন করতে হলে সংসদ লাগে, এখন তো সে অবস্থা নেই। যখন সংবিধান সংশোধনের বিষয়টি আসবে তখন এটি সেখানে অন্তর্ভুক্ত করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার আনছে। এরই ধারাবাহিকতায় জাতীয় কবির স্বীকৃতির বিষয়টি প্রধান্য পায়।
সূত্র জানায়, ১৮৯৯ সালের ২৪ মে (জ্যৈষ্ঠ ১১, ১৩০৬ বঙ্গাব্দ) ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন কাজী নজরুল ইসলাম। পরিবারে চার সন্তানের অকালমৃত্যুর পর জন্ম হওয়ায় নজরুলের নাম রাখা হয় দুখু মিয়া। এরপর বাল্যকালেই পিতা-মাতাকে হারিয়ে নিদারুণ দারিদ্র্যের মধ্যে পড়েন তিনি। এই সময় লেটো গানের দলে গীত রচনা ও সুর সংযোজন করার প্রয়াসের মধ্য দিয়ে নজরুল প্রতিভার প্রথম বিকাশ ঘটে। আর এভাবেই নজরুল প্রতিভায় বিমুগ্ধ দারোগা রফিজউল্লাহর মাধ্যমে ১৯১৪ সালে ময়মনসিংহ আসেন তিনি। এরপর ওই বছরের জুন মাসে কাজী নজরুল ইসলামকে দরিরামপুর ইংরেজি হাইস্কুলে (বর্তমানে নজরুল একাডেমি) ভর্তি করান দারোগা রফিজউল্লাহ। তখন স্থানীয় বিচুতিয়া বেপারীর বাড়িতে জায়গীর থাকেন তিনি। বর্তমানে কবির স্মৃতিবিজড়িত ওই বাড়িতেই তার স্মৃতি রক্ষার্থে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে নির্মিত হয়েছে তিনতলা বিশিষ্ট ‘নজরুল স্মৃতিকেন্দ্র’।
আমান উল্লাহ আকন্দ/আরএআর