পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে রাবিতে বিক্ষোভ
পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শনিবার (৭ ডিসেম্বর) রাত ৮টায় এ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়।
এসময় তারা ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে জোহা চত্বরে সমবেত হয়। এসময় শিক্ষার্থীদের পোষ্য কোটা বাতিলের দাবির প্রতি সংহতি জানান আইন বিভাগের অধ্যাপক মোরশেদুল ইসলাম।
এসময় শিক্ষার্থীরা ‘কোটা না মেধা? মেধা মেধা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে কোটা প্রথার কবর দে’, ‘জনে জনে খবর দে পোষ্য কোটার কবর দে’, ‘সাকিব আঞ্জুম মুগ্ধ’, ‘জোহা স্যারের স্মরণে ভয় করি না মরণে’, ‘আপস না বিপ্লব, বিপ্লব বিপ্লব’, ‘তুমি কে? আমি কে? মেধাবী মেধাবী’, ‘ছাত্রসমাজের অ্যাকশন ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘মেধাবীদের কান্না আর না আর না’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাবি শাখার সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘আমরা শুধু মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংস্কারের কথা বলিনি, আমরা সব ধরনের কোটার যৌক্তিক সমাধানের কথা বলেছি। জুলাই বিপ্লব হয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনো জুলাই বিপ্লবের ম্যান্ডেট ধারণ করে না। বিগত বছরগুলোর মতো স্বেচ্ছাচারিতা আর চলতে দেওয়া হবে না। পোষ্য কোটার কবর রচনা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু হবে এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েই শেষ হবে।’
আরও পড়ুন
এসময় পোষ্য কোটার যৌক্তিকতা দেখিয়ে আগামী সোমবার মুক্তমঞ্চে শিক্ষকদের বিতর্কে আসার আহ্বান জানান তিনি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মেশকাত মিশু বলেন, কোটা ইস্যু বাংলাদেশে একটি মীমাংসিত ইস্যু। নতুন করে সেই পতিত কোটাকে যারা আবার জীবন দিতে চাইছে তাদের আমরা লাল কার্ড দেখিয়ে দিচ্ছি। হাসিনা যেভাবে পালাতে বাধ্য হয়েছে পোষ্য কোটাধারীদেরও আমরা বাংলার জমিন থেকে উৎখাত করে ছাড়ব। পোষ্য কোটা সুবিধা বঞ্চিতদের দেওয়ার মতো কিছু না, এটা সরাসরি তেলা মাথায় তেল দেওয়ার একটা আয়োজন। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়কে ঠিক করার যে আয়োজন হাতে নিয়েছি সেখানে পোষ্য কোটা নামের কোনো কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে চলবে না। এখানে আপনাকে শিক্ষক হতে হলে মেধার পরিচয় দিয়ে আসতে হবে।
এসময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক মেহেদী হাসান মুন্না বলেন, পোষ্য কোটা একটা জুলুম। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গত ৪ বছর ধরে পোষ্য কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছে। জুলাই অভ্যুত্থানে যারা রক্ত দিয়েছে তাদের রক্তের ওপর দিয়ে তারা চেয়ারে বসেছেন। সেই চেয়ারে বসে স্ববিরোধী বক্তব্য দিচ্ছেন তারা। কোটাবিরোধী আন্দোলনে তারা আমাদের সঙ্গে একতাবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করেছেন। এখন চেয়ারে বসে পোষ্য কোটা নাকি সুবিধা কোটা হয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় চলে গরিব মেহনতি মানুষের টাকায়। গরিব মেহনতি মানুষের সন্তানেরা ৫০০/৬০০ সিরিয়াল হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাই না, আর শিক্ষক-কর্মচারীদের সন্তানেরা ১৮ হাজার সিরিয়াল হয়ে আইন, ফিন্যান্স এবং অর্থনীতির মতো ভালো বিভাগে পড়াশোনা করে। চার মাস যেতে না যেতেই আপনারা আপনাদের নগ্নতা প্রকাশ করে দিয়েছেন।
কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোর্শেদুল ইসলাম পিটারসহ তিন শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন।
উল্লেখ্য, গত ১৪ নভেম্বর পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে আমরণ অনশনেও বসেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পরে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মাঈন উদ্দীনকে সভাপতি করে ২০ সদস্যের কোটা পর্যালোচনা কমিটি গঠিত হয়। তবে এ কমিটি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেও কার্যকরী সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না। শনিবারও প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমাধান না আসায় সন্ধ্যায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা।
জুবায়ের জিসান/এসএসএইচ