জাবিতে মুগ্ধতা ছড়ালো বর্ণিল প্রজাপতি মেলা
নুসাইবা কারিমের ছোট্ট হাতটি মায়ের শক্ত মুঠোয় ধরা। চারপাশে মানুষের ভিড়, তবু তার চোখ আটকে আছে সাদা জালে ঘেরা বাগানের ভেতর। হঠাৎই তার ছোট্ট আঙুলটি উঁচিয়ে বলে উঠল,মা, দেখো, কী সুন্দর নীল প্রজাপতিটা!
গতকাল জাহাঙ্গীরনগরি বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত প্রজাপতি মেলায় এ দৃশ্য দেখা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের কীটতত্ত্ব শাখা এ মেলার আয়োজন করে।
মেলা উপলক্ষ্যে সকাল থেকেই ছিল দর্শনার্থীদের আনাগোনা। অভিভাবকদের হাত ধরে এসেছিল শিশু-কিশোরেরা। হাতে ছিল নানা রঙের ফেস্টুন। কেউ কেউ পরেছিল মুখোশ। কারও গালে আঁকা প্রজাপতির প্রতিচ্ছবি। তরুণ-তরুণীরা এসেছিলেন শাড়ি-পাঞ্জাবি পরে। বাদ যাননি প্রবীণেরাও।
স্কুল শিক্ষিকা মা রেবেকা আক্তারের সঙ্গে মেলা দেখতে এসেছিল তৃতীয় শ্রেণির ছোট্ট শিশু নুসাইবা কারিম। নুসাইবা জানায় প্রজাপতি তার খুব পছন্দ।
প্রজাপতির মতো উড়তে চাওয়ার শখের কথাও জানায় ছোট্ট এই শিশু।
মেলায় দিনব্যাপী অন্যান্য আয়োজনের মধ্যে ছিল— শিশু-কিশোরদের জন্য প্রজাপতি বিষয়ক ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা, প্রজাপতি ও প্রকৃতিবিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতা, প্রজাপতির আলোকচিত্র প্রদর্শনী, প্রজাপতি বিষয়ক আলোকচিত্র প্রতিযোগিতা, প্রজাপতির আদলে ঘুড়ি উড্ডয়ন, প্রজাপতি চেনা প্রতিযোগিতাসহ নানা আয়োজন। এছাড়া মেলা উপলক্ষ্যে বর্ণাঢ্য র্যালি ও প্রজাপতির গল্পে পাপেট শোর আয়োজন করা হয়।
এবারের মেলায় প্রকৃতি সংরক্ষণে সার্বিক অবদানের জন্য বন ও প্রকৃতি বিষয়ক সংগঠন ‘প্লানটেশন ফর নেচারের’ প্রতিষ্ঠাতা সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রকৌশলী সবুজ চাকমাকে বাটারফ্লাই অ্যাওয়ার্ড এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. সাব্বির আহাম্মেদকে বাটারফ্লাই ইয়াং ইনথুসিয়াস্ট অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। এছাড়া ফটোগ্রাফি ও মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।
২০১০ সাল থেকে ‘উড়লে আকাশে প্রজাপতি, প্রকৃতি পায় নতুন গতি’ স্লোগানে প্রজাপতি সংরক্ষণ ও গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রজাপতি মেলার আয়োজন করে আসছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের কীটতত্ত্ব শাখা। গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান এ বছরের মেলার উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনকালে উপাচার্য বলেন, প্রজাপতির কাছ থেকে মানুষের শেখার আছে। প্রজাপতি পরাগায়ণের মাধ্যমে কোনো প্রকার ক্ষতি ছাড়াই আমাদের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। ধর্ম, বর্ণ এবং বৈচিত্র্যভেদে মানুষের কাছেও সকল মানুষ নিরাপদ হতে হবে। প্রজাপতির কাছ থেকে গোটা বিশ্বকে নিরাপদ রাখার শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে মানুষকে। সকল ষড়যন্ত্র থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতে হবে।
মেলার আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, প্রজাপতি পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পরাগায়নের মাধ্যমে প্রজাপতি পরিবেশ ও প্রকৃতি এবং বনাঞ্চল রক্ষায় ভূমিকা রাখছে। প্রজাপতিসহ বিভিন্ন পতঙ্গ আমাদের বাস্তুসংস্থান টিকিয়ে রেখেছে। তাই প্রজাপতি সংরক্ষণে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সুরক্ষিত ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি। অন্যথায় প্রজাপতির বিলুপ্তির ধারা অব্যাহত থাকবে।
আরও পড়ুন
এ সময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন— বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের অধিকর্তা মুকিত মজুমদার বাবু, বন বিভাগের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিচালক মো. ছানাউল্যা পাটওয়ারী এবং আরণ্যক ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি মুরাদ বিন আজিজ প্রমুখ।
এনএফ