কুমিল্লা বার্ড-এ গ্রিন ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা বিভাগের কর্মশালা
গ্রিন ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা বিভাগের উদ্যেগে সোমবার (১১ নভেম্বর) কুমিল্লায় বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমিতে (বার্ড) এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে উন্নয়ন যোগাযোগের ভূমিকা শীর্ষক কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
দিনব্যাপী এই কর্মশালায় শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেন বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমির (কুমিল্লা) পরিচালক (প্রশিক্ষণ) আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং যুগ্ম পরিচালক (প্রশিক্ষণ) জোনায়েদ রহিম।
কর্মশালায় আরও উপস্থিত ছিলেন গ্রিন ইউনিভার্সিটির জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া কমিউনিকেশন বিভাগের উপদেষ্টা প্রফেসর ড. শাহ নিস্তার জাহান কবীর, বিভাগের চেয়ারপারসন ড. অলিউর রহমান, লেকচারার মঞ্জুর কিবরিয়া ভূঁইয়া, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারি অধ্যাপক কাজী মো. আনিসুল ইসলাম এবং লেকচারার জাকিয়া জাহান মুক্তা।
কর্মশালায় বার্ডের পরিচালক বলেন, অগ্রসরমাণ একটি জাতির এগিয়ে যাওয়ার পেছনে সবচেয়ে ভূমিকা পালন করে গবেষণা। এটি যত সমৃদ্ধ হবে, জাতি হিসেবে আমরাও তত এগিয়ে যাব।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আপনারা জানেন বিশ্ববিদ্যালয় শুধু পাঠদান করে না, গবেষণাও এর অপরিহার্য অংশ। সামগ্রিকভাবে এগিয়ে যেতে হলে গবেষণায় জোর দিতে হবে। শিক্ষার্থীদের তৃণমূলে গিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করতে হবে। বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য গবেষণার কোনো বিকল্প নেই।
একটি উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, দেশে একটা সময় ব্যাপক হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সমস্যা দূরীকরণের জন্য ‘ছোট পরিবার, সুখী পরিবার’ স্লোগান প্রচার শুরু হয়। এর উদ্দেশ্যই ছিল, জনসচেতনতা বৃদ্ধি। যেন মানুষ একটি কিংবা দুইটির বেশি সন্তান না নেয়।
আরও পড়ুন
তবে গবেষণায় দেখা যায়, বিভিন্ন মাধ্যমে এই স্লোগান প্রচারের পরেও জনসংখ্যা বৃদ্ধির পরিমাণ কমে আসেনি। বরং গড় অনুপাতে বেড়েই চলেছে।
তাহলে কী জনগণের কাছে ভুল বার্তা পৌঁছেছে? বা তারা এই স্লোগানের পরিপূর্ণ অর্থ বুঝতে পারেনি? এই প্রশ্নের খোঁজে প্রান্তিক অঞ্চলের মানুষের জীবনধারণ খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করা হয়। একটা সময় দেখা যায়, ‘ছোট পরিবার’ বলতে গ্রামের মানুষ বুঝেছে, অল্প বয়সেই কিশোরী-তরুণীদের বিয়ে দেওয়া। তাদের নিয়ে গঠিত পরিবার!
এরপরই জনসচেতনতামূলক সামাজিক এই স্লোগানটি পরিবর্তন হয়। নতুন স্লোগান তৈরি হয়, ‘দুইটির বেশি সন্তান নয়, একটি হলে ভালো হয়’। এবার সাধারণ মানুষের কাছে স্পষ্ট বার্তা পৌঁছে যায়। তারাও বৃহৎ পরিবার থেকে ছোট পরিবার গঠনে মনোযোগী হয়....। এভাবেই সামাজিক বিভিন্ন উন্নয়নে গবেষণা ও যোগাযোগ বিরাট ভূমিকা রাখে।
গ্রিন ইউনিভার্সিটির জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া কমিউনিকেশন বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. অলিউর রহমান জানান, গত ৯ ও ১০ নভেম্বর গবেষণা প্রবন্ধ পাঠ, প্যানেল আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে ‘ইনোভেশন অ্যান্ড ট্র্যান্সফরমেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (আইটিডি)’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী তৃতীয় আন্তর্জাতিক গবেষণা সম্মেলন শেষ হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে আজ কুমিল্লায় এই ওয়ার্কশপের আয়োজন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, শিক্ষা ও গবেষণা-দুটিই হাত ধরাধরি করে একসঙ্গে চলে। পাঠে ও মাঠে-দুই জায়গায় শিক্ষার্থীরা জ্ঞান অর্জন করতে হবে। একটি ছাড়া আরেকটি সম্ভব নয়। এই কর্মশালা শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ারে বিশেষ করে উন্নয়ন যোগাযোগে কাজ করতে অনেক বড় ভূমিকা রাখবে।
ড. অলিউর রহমান আরও বলেন, ‘আমি সবসময় চেয়েছি শিক্ষার্থীরা মাঠের পাঠদানেও সমান অংশগ্রহণ করুক। এর ফলে তাদের তৃণমূল পর্যায়ে গবেষণার কাজ সহজতর হবে। আর টেকসই উন্নয়নের অন্যতম শর্তই হচ্ছে, যেখানে শহর-প্রান্তিক সকল শ্রেণির মানুষ উন্নয়নের সমান অংশীদার হবে। কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। সাংবাদিকতা ও যোগাযোগের মাধ্যমেই আমাদের শিক্ষার্থীরা সেই লক্ষ্যপূরণেই বিরাট ভূমিকা পালন করতে পারবে।’
দিনব্যাপী এই কর্মশালায় উন্নয়ন যোগাযোগে বার্ডের ভূমিকা, বার্ডের ইতিহাস, এসডিজি বিষয়ে আলোচনা ছাড়াও বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। একইসঙ্গে বার্ডের মনোরম পরিবেশ পরিদর্শন, পাহাড়ে হাইকিংসহ নানা আয়োজন উপভোগ করেছে শিক্ষার্থীরা।
কর্মশালায় গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া কমিউনিকেশন ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থীসহ মোট ৬০ জন অংশ নিয়েছেন।
এমএ/এনএইচ/ডিএ