১৫ আগস্ট শোক দিবস পালন না করার সিদ্ধান্ত ছাত্র সংগঠনগুলোর
১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ছাত্রদল-ছাত্রশিবির-বাম-ইসলামি ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিরা। এছাড়া ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে আরও সংহতকরণের পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি, হলের আসন বিন্যাসসহ বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির পক্ষ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমন তথ্য জানানো হয়। লিয়াজোঁ কমিটির আয়োজনে এই বৈঠকে সব ছাত্র সংগঠন মিলে সিদ্ধান্ত নেন।
বৈঠকে বাংলাদেশের সব ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধি ও সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে আসিফ মাহমুদ ও নাহিদ ইসলাম অংশগ্রহণ করেন। লিয়াজোঁ কমিটির পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন, সমন্বয়ক মাহফুজ আলম, সদস্য নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী ও আরিফুল ইসলাম আদিব।
এই সভায় ছাত্রসমাজ (জাতীয় পার্টি) এবং ছাত্রলীগ (আওয়ামী লীগ) ছাড়া অন্যান্য সব ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ছাত্রলীগের কোনও কর্মী বা নেতা ক্যাম্পাসে অবস্থান করতে পারবে না। এছাড়াও ১৫ আগস্টকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন না করার বিষয়ে সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। উপস্থিত সব ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধি এসব সিদ্ধান্তের সঙ্গে লিখিতভাবে একমত পোষণ করেন।
জাতীয় শোক দিবস নিয়ে বিরোধিতার ব্যাখ্যায় বলা হয়, যেহেতু ১৫ আগস্টকে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রতীকে রুপান্তর করা হয়েছে এবং এ দিবসকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পুনরায় সন্ত্রাসী ও জঙ্গীবাদি কর্মকাণ্ডের ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে তাই জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা ও অভ্যুত্থান সংহত করার লক্ষ্যে ১৫ আগস্টকে রাষ্ট্রীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করাটা সমীচীন নয়। নেতৃবৃন্দ জুলাই-আগস্টকে বাংলাদেশের জনগণের শোক, সংহতি ও প্রতিরোধের মাস হিসেবে সাব্যস্ত করেন।
বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ছাত্ররাজনীতির ধরণ ও প্রকৃতি নিয়ে ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে এ অন্তর্বর্তী সময়ে সংলাপ অব্যাহত থাকবে। ফলত, ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি চলবে কিনা সে বিষয়ে আলোচনা আন্দোলন অব্যাহত থাকা পর্যন্ত স্থগিত থাকবে। তবে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনও নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ছাত্রসংগঠনগুলোর ভূমিকা থাকবে না।
উক্ত সভায় সিদ্ধান্ত হয়, জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে সুসংহতকরণের লক্ষ্যে ন্যূনতম এক মাস বা পরিস্থিতি অনুযায়ী আরো বেশি সময় সব ছাত্রসংগঠনগুলো ক্যাম্পাসগুলোতে নিজেদের আলাদা করে কোনও কর্মসূচি দেবেন না, বরং এ আন্দোলনের ব্যানারে ঐক্যবদ্ধভাবে গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে রক্ষা করার জন্য এবং সব ধরনের প্রতিবিপ্লব রুখে দেওয়ার জন্য লড়ে যাবেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ব্যানার ব্যবহার করে কোনও ছাত্র ক্যাম্পাসে বা অন্য কোথাও কারো ওপর নির্যাতন, নিপীড়ন, হুমকি কিংবা ট্যাগ-ব্লেইম দিতে পারবে না। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
লিয়াজোঁ কমিটির উদ্যোগে মতবিনিময় সভায় যেসব ছাত্রসংগঠন উপস্থিত ছিলেন ও ঐক্যমত্যে পৌঁছেছে তারা হলো- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্র শিবির, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন (রাগিব নাঈম), বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, ইসলামি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন (মুক্তি কাউন্সিল), বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (ইউপিডিএফ), বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (জেএসএস), বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ (নুর), বাংলাদেশ ছাত্রপক্ষ, ছাত্র আন্দোলন (এনডিএম), বিপ্লবী ছাত্রসংহতি, রাষ্ট্র সংস্কার ছাত্র আন্দোলন, ছাত্র অধিকার পরিষদ (রেজা কিবরিয়া), বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিস, বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্র মজলিস, গণতান্ত্রিক ছাত্রদল (এলডিপি), নাগরিক ছাত্র ঐক্য, জাগপা ছাত্রলীগ, বাংলাদেশ ছাত্র ফোরাম (গণফোরাম-মন্টু), ভাসানী ছাত্র পরিষদ, জাতীয় ছাত্র সমাজ (কাজী জাফর), জাগপা ছাত্রলীগ (খন্দকার লুৎফর), ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্র সমাজ, বাংলাদেশ ছাত্র মজলিস, বাংলাদেশ জাতীয় ছাত্রসমাজ , বাংলাদেশ ছাত্রমিশন, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিল।
কেএইচ/পিএইচ