হলে ফেরার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান আন্দোলনকারীদের
হলে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (১৫ জুলাই) রাত ৭টা ৫০ মিনিটের দিকে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের প্রভোস্ট ড. মোহাম্মদ জাভেদ হোসেন শিক্ষার্থীদের হলে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করলে শিক্ষার্থীরা তা প্রত্যাখ্যান করেন এবং ’দালাল দালাল’ ও ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দেন। তারা বহিরাগতদের ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেওয়ার দাবি জানান।
আরও পড়ুন
কাছাকাছি সময়ে সেখানে আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মাকসুদুর রহমানও।
তিনি বলেন, আমাদের হাতে সবকিছু নেই। সুযোগ থাকলে আমরা বহিরাগতদের আগেই সরিয়ে দিতাম। এখন আমরা হল প্রভোস্ট ও হাউস টিউটরদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের হলের ভেতরে প্রবেশ করিয়ে বহিরাগত যারা আছে তাদের বের করার ব্যবস্থা করব। শিক্ষার্থীদের হলে ঢোকানোর আগে বহিরাগতদের বের করাটা কঠিন হচ্ছে।
এ রিপোর্ট লেখার সময় (রাত ৮টা) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা শহিদুল্লাহ হলের সামনে অবস্থান করছিলেন। সেখান থেকে ৩০ গজ দূরে একটি সাঁজোয়া যান (এপিসি) নিয়ে কয়েকশ পুলিশ সদস্য অবস্থান নিয়ে আছেন। এর আগে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হল গেট থেকে দোয়েল চত্বরের দিকে নিয়ে যায় পুলিশ।
এর আগে বিকেল ৪টার পর থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, ছাত্রলীগ তাদের ওপর হামলা করেছে। হামলায় শতাধিক আন্দোলনকারী আহত হয়েছেন।
ছাত্রলীগের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের নেতাকর্মীরাও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ঢুকে সংঘর্ষে অংশ নেন বলে অভিযোগ করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
সংঘর্ষের একপর্যায়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন। তখন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান নেন। বর্তমানে ক্যাম্পাসে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
উল্লেখ্য, গতকাল চীন সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রসঙ্গে করা এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন ‘মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধার নাতিপুতিরা কিছুই পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিপুতিরা সব পাবে?’
প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা বা নাতিপুতি’ বলা হয়েছে অভিযোগ করে রোববার রাত থেকে প্রতিবাদ শুরু করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। রাতে প্রথমে রোকেয়া হলের মেয়ে শিক্ষার্থীরা হল থেকে মিছিল নিয়ে বের হয়ে আসেন। তারা স্লোগান দেওয়া শুরু করেন ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’। এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হল থেকে ছেলে ও মেয়ে শিক্ষার্থীরা দলে দলে মিছিল নিয়ে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে বিক্ষোভ শুরু করেন। প্রায় দেড় ঘণ্টার বিক্ষোভ শেষে হলে ফিরে যান তারা।
একই ইস্যুতে আজ সোমবারও উত্তাল হয়ে ওঠে ঢাবিসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়। দুপুরের দিকে ঢাবির রাজু ভাস্কর্যে এসে অবস্থান নেন কয়েকশ আন্দোলনকারী। এসময় তারা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার চেয়ে নানা স্লোগান দেন। তবে তাদের ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’ স্লোগান নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আলাদা অনুষ্ঠানে তাদের স্লোগানের ভাষার তীব্র সমালোচনা করেন।
এরপর ক্যাম্পাসে সক্রিয় হয় ছাত্রলীগ। দুপুর ২টার দিকে তারা বিজয় ৭১ হলসহ বিভিন্ন হলে আন্দোলনকারীদের বাধা দেন। এ খবরে আন্দোলনকারীরা ছুটে গেলে ছাত্রলীগের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। উভয়পক্ষ ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এরপর থেকে গোটা ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
বিকেল ৪টার পর থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে। এসময় ছাত্রলীগ আন্দোলনকারীদের ওপর লাঠি-সোটা নিয়ে আক্রমণ শুরু করে। বহু আন্দোলনকারীকে পিটিয়ে আহত করে তারা। তাদের অনেকের মাথা ফেটে যায়। আন্দোলনকারীরা কোথাও কোথাও প্রতিরোধের চেষ্টা করে। ফলে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়।
আরএইচটি/কেএইচ