জাবিতে গাছ কেটে ভবন নির্মাণ, প্রতিবাদ শিক্ষার্থীদের
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) গাছ কেটে নতুন কলা ভবনের বর্ধিতাংশ ও চারুকলা বিভাগের ভবন নির্মাণের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা।
রোববার (২ জুন) দুপুর দুইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি কয়েকটি সড়ক প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা তিন দফা দাবি জানান। বিকেল পৌনে পাঁচটায় উপাচার্যের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাসে অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো- অবিলম্বে মাস্টারপ্ল্যানের টেন্ডারের দরপত্র আহ্বান করা,অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন কমিটির অনুমোদন নিশ্চিত করা,অ্যাকাডেমিক ভবন ব্যতীত আর একটি স্থাপনাও মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করার আগে নির্মাণ না করা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলী বলেন, আমরা বলেছিলাম অংশীজনদের মতামতের ভিত্তিতে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করে তারপর ভবন নির্মাণ করতে। প্রশাসন আমাদের দাবির প্রেক্ষিতে কিছু রদবদল আনলেও আমাদের মূল দাবিকে সব সময়ই উপেক্ষা করেছে। প্রশাসন মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত করার ফলে আমরা সংশ্লিষ্ট প্রতিটি অনুষদের ডিনদের দাবি জানিয়েছিলাম অংশীজনদের মতামত নিয়ে অ্যাকাডেমিক ভবনের কাজ করতে। আমরা বারবার সংশ্লিষ্ট ডিনদের অনুরোধ করা সত্ত্বেও ছুটির ভেতর গাছে হাত দেওয়া হয়েছে। তাই আমরা মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করে ভবন নির্মাণের দাবি জানায়।
এদিকে রোববার দুপুর পৌনে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবন পাশে মানববন্ধন করেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের একাংশের নেতাকর্মীরা। মানববন্ধনে বক্তারা প্রশাসনকে স্বেচ্ছাচারী আখ্যা দিয়ে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন ছাড়াই গাছ কাটার প্রতিবাদ জানান।
এর আগে, সকাল আটটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সম্প্রসারিত ভবন ও নতুন প্রশাসনিক ভবনের পাশে প্রায় দুই শতাধিক গাছ কাটা হয়। এই দুই ভবন নির্মাণে আরও চার শতাধিক গাছ কাটা পড়ার শঙ্কা রয়েছে।
ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদে সভাপতি আলিফ মাহমুদ বলেন, ছুটি হলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের গাছকাটার সংস্কৃতি বহু পুরোনো। এবারেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। শিক্ষার্থীরা হলে নেই এই সুযোগে গাছকাটার উৎসবে মেতেছে তারা। আজকে গাছকাটার সময় চারুকলা বিভাগ নিজেদের বিভাগের শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে। ভবন নির্মাণে আমাদের আপত্তি নেই, আমাদের একটাই দাবি মাস্টারপ্ল্যানের মাধ্যমে ভবন নির্মাণ করা হোক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক খো. লুৎফল এলাহী বলেন, এভাবে ছুটির মধ্যে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির সুযোগে ভবন নির্মাণ করা অত্যন্ত দৃষ্টিকটু। কলা ও মানবিক অনুষদে আমাদের চাওয়া ছিল ভবনটি বর্তমান ভবন সংলগ্ন স্থানে করার। এতে ভবন কিছুটা ছোট হলেও পরিবেশ ও প্রাণ প্রকৃতির তেমন ক্ষতি হতো না। কিন্তু তারা সেদিকে কর্ণপাত না করে লেকের পাশে যে স্থান নির্ধারণ করেছে তাতে তৃতীয় প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের পথকে উন্মোচন করলো।
এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক ও চারুকলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এম এম ময়েজ উদ্দিন বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের নির্ধারিত জায়গাতেই ভবন নির্মাণ করছি। পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কোনো কিছুই আমরা করছি না। এ ছাড়া যে গাছগুলো কাটা হয়েছে সেই গাছগুলো আমরা নিজেরাই রোপণ করে পরিচর্যা করব। সকল অংশীজনদের সুপারিশকে গ্রহণ করে এবং তাদের নিয়ে আমরা একটা টিম তৈরি করব যাতে তারা আমাদের অগ্রগতিতে লক্ষ্য রাখতে পারেন।
মেহেরব হোসেন/এএএ