জবির নতুন ক্যাম্পাস নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ
বিশাল একটি ক্যাম্পাস এবং পূর্ণাঙ্গ হল যেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। ঢাকার কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়ায় চলছে জবি শিক্ষার্থীদের সেই স্বপ্ন পূরণের কাজ। তবে, প্রকল্পটির শুরু থেকে একের পর এক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ রয়েছে, নতুন ক্যাম্পাসে চলমান পাঁচ তলাবিশিষ্ট প্রকৌশল ও পরিকল্পনা দপ্তরের ভবন এবং পুকুরের ঘাট নির্মাণে অনিয়ম হচ্ছে। ভবনটিতে ৫৫ ফুটের স্থলে ৩০/৩৫ ফুট নিচে পাইলিং (স্থাপনার কলাম) করা হচ্ছে। একই সঙ্গে পাইলের বাকি অংশ ভেঙে তার রড-সিমেন্ট ও কংক্রিটের অংশ পুকুরের ঘাট ঢালাইয়ের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। দুটি আলাদা কাজ হলেও এখানে ব্যবহার হচ্ছে একই রড-সিমেন্ট।
প্রতিদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলীরা নতুন ক্যাম্পাসের কাজ তদারকিতে থাকলেও তাদের কাছে অনিয়মের কোনো তথ্য নেই— অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।
নতুন ক্যাম্পাসে চলমান পাঁচ তলাবিশিষ্ট প্রকৌশল ও পরিকল্পনা দপ্তরের ভবন এবং পুকুরের ঘাট নির্মাণে অনিয়ম হচ্ছে। ভবনটিতে ৫৫ ফুটের স্থলে ৩০/৩৫ ফুট নিচে পাইলিং (স্থাপনার কলাম) করা হচ্ছে। একই সঙ্গে পাইলের বাকি অংশ ভেঙে তার রড-সিমেন্ট ও কংক্রিটের অংশ পুকুরের ঘাট ঢালাইয়ের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। দুটি আলাদা কাজ হলেও এখানে ব্যবহার হচ্ছে একই রড-সিমেন্ট
সরেজমিনে দেখা যায়, ভবনের জন্য আগেই তৈরি করে রাখা হয়েছে নির্ধারিত ৫৫ ফুট পাইল। তবে, হ্যামার দিয়ে ঢোকানো হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ ফুট। বাকি ২০ থেকে ১৫ ফুট পাইলের রডসহ কনক্রিটের অংশ ভেঙে সেটি আরেক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের করা পুকুরের ঘাট ঢালাইয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে। অথচ দুটি কাজের জন্য আলাদা আলাদা বিল নেওয়া হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ৬১ কোটি ৮৯ লাখ নয় হাজার ৩৪৭ টাকা মূল্যে এসএসএল ও আরএস নামক দুটি প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে পাঁচ তলা প্রকৌশল ভবন নির্মাণের টেন্ডার পায়। অন্যদিকে, তিন কোটি ২৮ লাখ ৩৪ হাজার ৫১৪ টাকায় নতুন ক্যাম্পাসের পুকুরের ঘাট নির্মাণের টেন্ডার পায় আরএন এন্টারপ্রাইজ নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠান। আরএন এন্টারপ্রাইজে ঠিকাদার ওমর ফারুক রুমি।
অভিযোগ উঠেছে, ভবন ও পুকুরের ঘাট নির্মাণে পৃথক পৃথক প্রতিষ্ঠান কাজ পেলেও ঠিকাদার ওমর ফারুক রুমির তত্ত্বাবধানে কাজগুলো সম্পন্ন হচ্ছে। ঠিকাদার একই হওয়ায় ভবনের ভাঙা পাইল পুকুর ঘাটের ঢালাইয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী মো. হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকায় ঠিকাদার রুমি পার পেয়ে যাচ্ছেন। তাদের বাড়িও একই জেলায়— অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রকৌশল দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, দেশে এত বহুতল ভবনের পাইলিংয়ের কাজ হয়, অথচ হাওর এলাকায় মাত্র পাঁচ তলা ভবনের পাইল ঢুকবে না, বিষয়টি অবান্তর। বোরিং সিস্টেমেও পাইল ঢুকানো যায়। মূলত, একই জিনিস ভাঙা-গড়া করে দুই জায়গায় ব্যবহার করে কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি। প্রায় ৩৫০ পাইলের মধ্যে ইতোমধ্যে ২২০টির বসানোর কাজ শেষ হয়েছে।
ভবনের কাজ দেখার দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রকৌশলী গৌতম কুমার শিকদার বলেন, প্রথম দিকে ১৫/১৬টি পাইল সম্পূর্ণ প্রবেশ করানো যায়নি। তখন কিছু গাফিলতি ছিল। কিছু পাইল তারা ইচ্ছাকৃতভাবে সঠিক গভীরতায় ঢুকায়নি। প্রতিদিন তিন/চারটি পাইল বসানো যায়। কিন্তু তারা পাইলিংয়ের কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য প্রথমদিকে দিনে ১০/১২টা বসাচ্ছিল। আমি নিষেধ করায় তারা সেটি বন্ধ করেছে।
এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, পাইলগুলো ৫৫ ফুট নিচে দেওয়ার কথা থাকলেও মাটি শক্ত হওয়ায় সম্পূর্ণ ঢোকানো সম্ভব হচ্ছে না। প্রথমদিকে ঠিকাদার আমাদের বিষয়টি অবগত করেনি। এটি তাদের অন্যায় হয়েছে। পরে জানার পর আবার আমরা সয়েল টেস্ট (মাটি পরীক্ষা) করিয়েছি। সেই রিপোর্টেও নিচের মাটি শক্ত দেখা গেছে।
পাইলের অবশিষ্ট অংশ ঘাটে ব্যবহৃত হচ্ছে কি না— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি জানি না। প্রতিদিন তো আর ওখানে গিয়ে দেখা সম্ভব না। যদি তারা ঘাটে ব্যবহার করে তবে সেটি সম্পূর্ণ অবৈধ। কারণ, দুটি কাজ আলাদা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পেয়েছে। যদি পাইলের অবশিষ্ট মালামাল যোগসাজশ করে ঘাটের ঠিকাদার ব্যবহার করে তাহলে তদন্ত-সাপেক্ষে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
অভিযুক্ত ঠিকাদার ওমর ফারুক রুমি বলেন, ‘৩০ ফুট পর্যন্ত পাইলিংয়ের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। ডিপার্টমেন্টের নিয়ম অনুযায়ী ৫৫ ফুটের পাইলিং করা হচ্ছে। অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই। আপনি চাইলে মেপে দেখতে পারেন।’
ভবনের ভাঙা পাইল পুকুরের ঘাটে ব্যবহারের বিষয়টিও তিনি অস্বীকার করেন।
এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. হুমায়ুন কবীর চৌধুরী বলেন, পাইলিংয়ের ভাঙা অংশ ঘাটের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে শুনেছি। উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এমএল/এমজে