বুয়েটে ছাত্রলীগের প্রবেশ: আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা, ক্লাস বর্জন
বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হয় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ক্যাম্পাসে। কিন্তু ২৭ মার্চ দিবাগত রাত ১টার দিকে বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী। এর প্রতিবাদে আন্দোলনে নেমেছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা। এসময় শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধসহ ৬ দফা দাবি পেশ করেন।
শুক্রবার (২৯ মার্চ) বিকেলে বুয়েটের শহীদ মিনারে সংবাদ সম্মেলন করেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। সংবাদ সম্মেলনে আগামীকাল ৩০ মার্চ ও ৩১ মার্চের টার্ম ফাইনাল পরীক্ষাসহ সব একাডেমিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। তাছাড়া মধ্যরাতে বুয়েটে বহিরাগতদের প্রবেশের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলনের পর মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালকের (ডিএসডব্লিউ) কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন।
এসময় শিক্ষার্থীরা ‘ছাত্ররাজনীতির ঠিকানা, এই বুয়েটে হবে না’, ‘আবরার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেবো না’, ‘পলিটিক্সে যুক্ত যারা, হল থেকে করব ছাড়া’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
শিক্ষার্থীরা জানান, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন অব্যাহত থাকবে এবং আগামীকাল ৩০ মার্চ সকালে শিক্ষার্থীরা পুনরায় বুয়েট শহীদ মিনারের সামনে অবস্থান গ্রহণ করবেন।
এসময় বুয়েটে চলমান পাঁচটি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে ছয়টি দাবি জানান। দাবিগুলো হলো-
১. বিশ্ববিদ্যালয়ের সুস্পষ্ট বিধিমালা লঙ্ঘনের দায়ে আমরা বুয়েটের সব ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ২৭ মার্চ দিবাগত রাত ১টার দিকে রাজনৈতিক সমাগমের মূল সংগঠক ইমতিয়াজ রাব্বিকে বুয়েট থেকে স্থায়ী বহিষ্কার এবং হলের আসন বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।
২. উক্ত ঘটনায় ইমতিয়াজ রাব্বির সঙ্গে বুয়েটের বাকি যেসব শিক্ষার্থী জড়িত তাদের বিভিন্ন মেয়াদে হল এবং টার্ম বহিষ্কার চাই।
৩. বহিরাগত রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ যারা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলো তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে কী না, তারা কেন, কীভাবে প্রবেশ করার অনুমতি পেল এই ব্যাপারে সুস্পষ্ট সদুত্তর এবং জবাবদিহিতা বুয়েট প্রশাসন থেকে আসতে হবে।
৪. উপরোক্ত ১ নং এবং ২ নং দাবি আগামীকাল সকাল ৯টার মধ্যে বাস্তবায়ন করা না হলে আমরা সব ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ডিএসডাবলুর পদত্যাগ চাই।
৫. ক্যাম্পাসে মধ্যরাতে বহিরাগতদের প্রবেশের কারণে আমরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। এর প্রতিবাদ হিসেবে ৩০ ও ৩১ মার্চের টার্ম ফাইনালসহ সব একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করছি।
৬. আন্দোলনরত বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কোনোরকম হয়রানিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না- এই মর্মে লিখিত প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।
লিখিত বক্তব্যে শিক্ষার্থীরা জানান, রাত সাড়ে ১০টার পরে যেখানে নিরাপত্তাজনিত কারণে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে ঢোকার অনুমতি নেই সেখানে গত ২৭ মার্চ দিবাগত রাত ১টার দিকে একটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতা তাদের রাজনৈতিক বহর নিয়ে ক্যাম্পাসের মূলগেট দিয়ে প্রবেশ করে। ঘটনার তীব্রতা বাড়তে থাকে রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে। একের পর এক বহিরাগত রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার ক্যাম্পাসের মেইন গেটের সামনে আসতে থাকে। বিপুল সংখ্যক বহিরাগত নেতাকর্মী ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে থাকে।
শিক্ষার্থীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী সাংগঠনিক রাজনীতি নিষিদ্ধ এমন একটি ক্যাম্পাসে রাতের আঁধারে ঘটে যাওয়া রাজনৈতিক সমাগম এবং বহিরাগতদের আগমন ক্যাম্পাসের মর্যাদার প্রতি অপমানজনক। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এবং ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তর উক্ত ন্যাক্কারজনক ঘটনা ক্যাম্পাসে ঘটে যাওয়ার দায় এড়িয়ে যেতে পারে না। ঘটনা ঘটে যাওয়ার দেড় দিন পার হয়ে গেলেও ডিএসডাব্লু থেকে উক্ত ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত কোনোপ্রকার সদুত্তর এবং জবাবদিহিতা এখন পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে আসেনি। ক্যাম্পাসে মধ্যরাতে তারা প্রবেশের অনুমতি কীভাবে কর্তৃপক্ষ থেকে পেয়েছিল এই সম্পূর্ণ ব্যাপারটি এখনো ধোঁয়াশাপূর্ণ এবং সন্দেহের সঞ্চার করে।
প্রসঙ্গত, গত ২৭ মার্চ দিবাগত রাত ১টার দিকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি, দপ্তর সম্পাদকসহ অনেকেই বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন। ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দকে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করানোয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন বুয়েট শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ রাব্বি। ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার পর বুয়েটে এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে নতুন করে রাজনীতি শুরুর পাঁয়তারা হিসেবে দেখছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। যার পরিপ্রেক্ষিতে ক্যাম্পাসে পুনরায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হওয়া ও নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তারা আন্দোলন শুরু করেন।
কেএইচ/পিএইচ