‘যৌন নিপীড়ক’ শিক্ষকের বিচার চান ঢাবি শিক্ষার্থীরা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে বিভাগের এক নারী শিক্ষার্থীর তোলা যৌন নিপীড়নের অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত ও শাস্তির দাবিতে ক্লাস বর্জন করেছেন শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সব অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা সারাদিন ক্লাস-পরীক্ষাসহ সব ধরনের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করেন।
এসময় শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড, পোস্টার ও ব্যানার হাতে বিভাগের সামনে অবস্থান নেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জায়গায় অধ্যাপক নাদির জুনাইদকে বয়কট করার আহ্বান জানিয়ে পোস্টারিং করেন। পরে শিক্ষার্থীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবনের সামনে থেকে শুরু হয়ে উপাচার্যের কার্যালয় হয়ে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে গিয়ে মানববন্ধনের মাধ্যমে শেষ হয়।
বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা অধ্যাপক নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন এবং তার শাস্তির দাবি জানান। এরপর তারা সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যানের অফিস কক্ষের সামনে অবস্থান নেন।
বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে শিক্ষার্থীরা তিন দফা দাবি জানান। দাবিগুলো হলো– অধ্যাপক নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে আনা যৌন নিপীড়নের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে দ্রুত তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে; যৌন নিপীড়ককে দ্রুততম সময়ের মধ্যে শাস্তির আওতায় আনতে হবে; তদন্ত চলাকালে বা অভিযোগ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সব অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম থেকে অভিযুক্ত শিক্ষককে বিরত রাখতে হবে।
মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া সাংবাদিকতা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাহি নায়াব বলেন, নাদির জুনাইদের যৌন হয়রানির বিষয়টি সম্প্রতি সামনে এলেও এসব অপকর্ম তিনি আগে থেকেই করে আসছিলেন। প্রতিটি ব্যাচের ২-৩ জন নারী শিক্ষার্থীকে তিনি টার্গেট করে রাখতেন এবং পরে বিভিন্নভাবে হয়রানি করতেন। গত ২৩-২৪ বছরের শিক্ষকতা জীবনে তিনি কত নারী শিক্ষার্থীকে হয়রানি করে এসেছেন সেটা এখন খতিয়ে দেখা দরকার। আমাদের বোনদের সঙ্গে যে যৌন নিপীড়ন হয়েছে, আমরা তার বিচার চাই। তদন্ত কমিটি করার আশ্বাসে এবার আর কাজ হবে না। আমরা চাই সঠিক তদন্তের পর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।
আরও পড়ুন
দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাওয়ার সালসাবিল দুর্দানা বলেন, এ পর্যন্ত তিনটি সেমিস্টারের কোর্স টিচার হিসেবে আমরা নাদির জুনাইদকে পেয়েছি। আমরা কতটা মানসিক ট্রমায় ছিলাম সেটা বলে বোঝানোর মতো নয়। তিনি প্রত্যেকটা ব্যাচ থেকেই কয়েকজনকে টার্গেট করেন। তিনি নম্বর দেওয়ার ক্ষেত্রে মেধা যাচাই করেন না, যাচাই করেন হোয়াটসঅ্যাপের চ্যাট এবং ফোনের আলাপ দিয়ে। যেকোনো টার্ম পেপার জমা দিতে হলে সেটা তার পছন্দ হবে কি হবে না সেটা নিয়ে ১/২ ঘণ্টা ফোনে কথা বলতে হয়। পরে তিনি বলবেন আমার কথা বলা কম হয়েছে, তাই আমাকে তিনি ১০এ ২/৩ দেবেন। আর ফোনে বলা কথা তার মনঃপূত হলে তাকে বেশি নম্বর দেওয়া হয়।
চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সামদানি প্রত্যয় বলেন, তার বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বিষয়টি সবাই জানত। ভীতির সংস্কৃতি চর্চার কারণে এতদিন কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি। একজন ভিকটিম যখন সাহস করে প্রতিবাদ করেছে তখন আমরা চুপ থাকতে পারি না। শুধু সাফাই গেয়ে আমাদের দমিয়ে রাখা যাবে না। আমাদের দাবি স্পষ্ট, এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অতি দ্রুত খতিয়ে দেখতে হবে। তদন্তকালে সব ধরনের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম থেকে তাকে অব্যাহতি দিতে হবে এবং অপরাধ নিশ্চিত হওয়ার পর তাকে চাকরি থেকে বহিষ্কার করতে হবে।
শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ করেন বিভাগের এক নারী শিক্ষার্থী। ওই শিক্ষার্থী প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবুল মনসুর আহমেদ বলেন, আমরা এ ব্যাপারে সবসময় জিরো টলারেন্স। কিছু অভিযোগ আমরা পেয়েছি, সেগুলো উপাচার্য মহোদয়ের কাছে পেশ করা হবে। তাকে বলব যেন জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
কেএইচ/এসএসএইচ