ঢাবিতে নির্বাচন বর্জনের দাবিতে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন
৭ জানুয়ারির নির্বাচনকে ‘ডামি’ ও ‘প্রহসনের নির্বাচন’ উল্লেখ করে বর্জনের ডাকে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। মানববন্ধনে বক্তারা নির্বাচন বর্জন ও আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার জন্য সকলকে আহ্বান জানান।
শনিবার (৬ জানুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে আয়োজিত এই মানববন্ধন করা হয়। মানববন্ধন শেষে নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে শাহবাগে গিয়ে কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
মানববন্ধনে ছাত্র ইউনিয়ন ঢাবির একাংশের সভাপতি মেঘমল্লার বলেন, আজকে দেশে নিজেদের অস্তিত্ব রেখে কথা বলাই অনেক কষ্টকর। সেই অবস্থায় আজ আমরা কথা বলতে পারছি এটা অনেক বড় বিষয় যা অন্য অঞ্চলের মানুষ পারছে না। আমরা এখানে প্রোগ্রাম করছি, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বাইক হাঁকিয়ে যাচ্ছে, আমাদের ছবি তুলে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে। তারা বুঝাতে চাচ্ছে ‘তোমাদের লিস্ট করা হচ্ছে, মিছিল শেষে দেখে নেব’। আমরাও বলতে চাই, আমাদের কাছেও আপনাদের লিস্ট রয়েছে। গত ১৫ বছরে আমাদের ওপর যেভাবে হামলা করা হয়েছে তাদের সবার লিস্ট করা আছে। তোমরাও সহজে ছাড় পাবে না।
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা এখনো জিয়াউর রহমানের করা ‘হ্যাঁ-না’ ভোটের নির্বাচনের আয়োজন নিয়ে কথা বলেন। শেখ হাসিনা আপনাকে বলতে চাই, আজকে ৩০০ আসনে একটা প্রার্থী দেখান যেখানে আপনার বিরুদ্ধে জনগণ অন্তত ‘না’ ভোট দিতে পারবে? সবাই আওয়ামী লীগের প্রার্থী, তবে কেউ দলীয়, কেউ বিদ্রোহী, স্বতন্ত্র বা ডামি প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছে। এই সরকার আমাদের বোকা ভেবে এভাবে নির্বাচন চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা আগামীকাল কেউ ভোটকেন্দ্রে যাব না সকলের কাছে এই প্রত্যাশা রাখি এবং সবাইকে আগামীকালের নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানাচ্ছি।
মানববন্ধনে ছাত্রশক্তির ঢাবি আহ্বায়ক আসিফ মাহমুদ বলেন, স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরেও বাংলাদেশের কোনো দলীয় সরকার সুষ্ঠুভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারিনি। সর্বশেষ ২০০৮ সালে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছিল। তখন ভোটার ছিল ৮ কোটি যা বর্তমানে ১২ কোটি। তারমানে নতুন এই ৪ কোটি ভোটার নিজেদের ভোটের মাধ্যমে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে মনোনীত করতে পারেনি। বর্তমানে এই সরকার লুটতরাজের সরকার হিসেবে খেতাব পেয়েছে। আমরা বলতে চাই, এই সরকারকে অতিদ্রুত ক্ষমতা হস্তান্তরের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া খুঁজে বের করতে হবে। আগামীকালের একপাক্ষিক ‘ডামি’ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশবাসী যে কলঙ্কের সাক্ষী হতে যাচ্ছে তাকে আমরা ‘লাল কার্ড’ দেখাই। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মুক্তিকামী মানুষের পক্ষ থেকে আগামীকাল ৭ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করছি, বর্জন করছি, বর্জন করছি।
ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি আরমানুল হক বলেন, আমি একজন বাংলাদেশের নাগরিক, সেই পরিচয় আওয়ামী সরকার বিলীন করে দিয়েছে। আগামীকাল নির্বাচন, ২০১৪ বা ২০১৮ সালের তুলনায় ভিন্ন কিছু নয়। আজকে আমরা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে একটি শব্দ উচ্চারণ করতে পারি না। আমরা টিএসসিতে বসে এক কাপ চা খেতে পারি না আমাদের ওপর হামলা করা হয়। সুতরাং বুঝাই যাচ্ছে দেশের মানুষের স্বাধীনতা কতটুকু রয়েছে!
মানববন্ধনে অন্যান্যদের মাঝে - নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাঈম, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী মিশকাত তানিশা, ১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী মোজাম্মেল হক, গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের পক্ষে সাজিদুল ইসলাম, ছাত্র মৈত্রীর পক্ষে জাবের আহমেদ জুয়েল প্রমুখ বক্তব্য প্রদান করেন। এছাড়াও মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
কেএইচ/এসকেডি