‘প্রলয় গ্যাংয়ে’র উত্থান আর হিজাব ইস্যুতে বছরজুড়ে উত্তপ্ত ছিল ঢাবি
চলে যাচ্ছে আরও একটি বছর। পুরনো হয়েছে ঘরের দেয়ালে টানানো ক্যালেন্ডারও। বিদায়ী বছরে দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বছরজুড়ে বহু ঘটনার সাক্ষী হয়েছে।
এ বছরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পেয়েছে নতুন উপাচার্য ও প্রক্টর। পুরো বছর জুড়েই ক্যাম্পাসে প্রলয় গ্যাংয়ের আধিপত্য ও তাদের বিচারের আওতায় আনার ছিল জোর দাবি, মল-চত্বরে সবুজের সমারোহকে নষ্ট করে কংক্রিটের শতবর্ষী স্থাপনা নিয়ে ছিল শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ। তাছাড়া মেট্রোরেল স্টেশন উদ্বোধন, কুয়েত মৈত্রী হলসহ প্রতিটি হলের শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট সমস্যার সমাধান, বছরজুড়ে ছাত্রদল-ছাত্রলীগ-ছাত্র ইউনিয়নের মুখোমুখি অবস্থানসহ হিজাব ইস্যুতে ক্যাম্পাস ছিল উত্তপ্ত।
প্রলয় গ্যাং-এর উত্থান-পতন
চলতি বছরের ২৫ মার্চ ঢাবির মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের সামনে প্রলয় গ্যাংয়ের সদস্য জোবায়ের ইবনে হুমায়ুনকে মারধরের ঘটনায় আলোচনার আসে গ্যাংটির নাম। যারা ক্যাম্পাসে মারামারি, ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত তাদের নিয়েই এ গ্যাং। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. শহীদ মোর্তজা মেডিকেল সেন্টারের তৃতীয় তলায় ছিল গ্যাংয়ের কার্যালয়। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নিয়মিত নেশার আসর বসানো হতো যেখানে ছিল নারীদের আনাগোনাও। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিশু চত্বরের পাশে ছিল তাদের নেশার স্থান। তারা ওই জায়গার নাম দিয়েছিল ‘নিকুম্ভিলা’। রুটিনমাফিক সেখানে জড়ো হতেন সদস্যরা, ক্যাম্পাসে দিতেন বাইকের মহড়া। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সবাই সংঘবদ্ধ ছবি দিতেন নিয়মিত। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের গণ্ডিই পার করতে পারেনি কিন্তু নিয়ন্ত্রণ করতেন ক্যাম্পাসের পানির ব্যবসাও। তারা সবাই ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র, প্রলয় গ্যাংয়ের সদস্য।
মারধরের ঘটনায় পরদিনই ভুক্তভোগী মা সাদিয়া আফরোজ খান ১৯ শিক্ষার্থী ও অজ্ঞাতনামা আর ৬-৭ জনের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা দিলে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। গঠিত হয় তদন্ত কমিটি। পরে গত ২০ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে শৃঙ্খলা পরিষদের সভায় গ্যাংটির ১৪ সদস্যকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করে ঢাবি প্রশাসন। বহিষ্কার হওয়া ১৪ জনের মধ্যে ২ জনকে ২ বছর, ৮ জনকে ১ বছর এবং বাকি ৪ জনকে ৬ মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়।
ক্যাম্পাসের অবৈধ দোকান উচ্ছেদ ও প্রক্টরিয়াল টিমের চাঁদাবাজি ফাঁস
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে ‘গুলিস্তান থেকেও বাজে’ উল্লেখ করে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ঢাবির সদ্য সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান ক্যাম্পাসের সকল ভাসমান দোকান উচ্ছেদের ঘোষণা দেন। পরবর্তীতে ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ উচ্ছেদ অভিযান চলে। ঘোষণার পূর্বে টিএসসি এলাকায় ৩০০ থেকে ৩৫০ ভাসমান দোকান ছিল, উচ্ছেদের পরে তা প্রায় শূন্যের কোটায় নেমে আসে যা খুবই ইতিবাচক হিসেবে নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুন
ভাসমান দোকান উচ্ছেদের জের ধরে ঠিক দুদিন পর ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাবি প্রক্টরিয়াল টিমের বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসসহ আশপাশের এলাকায় অবৈধ ভ্রাম্যমাণ দোকান বসিয়ে বছরে প্রায় অর্ধকোটি টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ তোলা হয়। ইংরেজি ‘দৈনিক অবজারভারে’ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ঢাবি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন অংশে তিন শতাধিক অবৈধ ভ্রাম্যমাণ দোকান বসিয়ে বছরে অর্ধকোটি টাকার বেশি চাঁদা তুলছে প্রক্টরিয়াল টিম’। পরবর্তীতে ৩ সদস্যদের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় ১ জনকে বহিষ্কার ও ৬ জনকে সতর্ক করা হয়েছিল।
ঢাবির নতুন প্রক্টর অধ্যাপক মাকসুদুর রহমান
গত ৫ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর এম মাকসুদুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রক্টর হিসেবে নিয়োগ পান। ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান অধ্যাপক ড. এম মাকসুদুর রহমানকে প্রক্টর হিসেবে নিয়োগ দেন। সদ্যবিদায়ী প্রক্টর ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী ২০১৭ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করছিলেন। সে হিসেবে দীর্ঘ ৬ বছর পর নতুন প্রক্টর পেলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
ঢাবির নতুন উপাচার্য অধ্যাপক ড.মাকসুদ কামাল
গত ৪ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২৯তম উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। এদিন সকালে উপাচার্যের নিজস্ব কার্যালয়ে তিনি এই দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এর আগে ১৫ অক্টোবর রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলরের অনুমোদনক্রমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ, ১৯৭৩ এর আর্টিকেল ১১ (২) অনুসারে এক প্রজ্ঞাপনে অধ্যাপক মাকসুদ কামালকে পরবর্তী উপাচার্য হিসেবে মনোনীত করা হয়।
মল চত্বরে শতবর্ষী স্থাপনা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মল-চত্বরে প্রায় ২১ কোটি টাকা ব্যয়ে শতবর্ষী মনুমেন্ট স্থাপন করা হচ্ছে যার কাজ এখনো চলমান। এর আগে গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর এর কাজ উদ্বোধন করেন সদ্য বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক ড মো আখতারুজ্জামান। শতবর্ষী এ স্মৃতিস্তম্ভের বেদির আয়তন ৭ হাজার ২০০ বর্গফুট যার দৈর্ঘ্য ১২০ ফুট ও প্রস্থ ৬০ ফুট। মূল স্তম্ভের দৈর্ঘ্য ৭০ ফুট, প্রস্থ ৩০ ফুট ও উচ্চতা ২৫ ফুট। এর ওয়াটার গার্ডেনের ব্যাস ৬০ ফুট ও গভীরতা ৫ ফুট। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবান্বিত শতবর্ষের প্রকাশ হিসেবে ১০০টি বাতি থাকবে এবং ২০টি ‘হিস্ট্রি প্যানেল’ নির্মাণ করা হবে। প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উপলক্ষে মল-চত্বরকে ‘মুক্তিযোদ্ধা চত্বর’ হিসেবে বিনির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২০২৩ সালের ৩০ জুনের মধ্যে শেষ হবে বলে ধরা হলেও এর কাজ এখনো চলমান রয়েছে।
এরই মাঝে অধ্যাপক মাকসুদ কামাল নতুন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পরেই নকশায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়। সদ্য কাজ শেষ করা বেশ কিছু জায়গা ভেঙে সেখানে সবুজায়নের ঘোষণা দেন তিনি। এটা নিয়ে আবারও চলে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা।
আরও পড়ুন
প্রশ্ন উঠে স্থাপনা নির্মাণের আগে নকশা কেন প্রস্তুত করা হয়নি এবং প্রশ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা অপচয়ের বিষয়েও। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জায়গার অভাবে থাকতে পারে না, হল ক্যান্টিনে পুষ্টিমান সমৃদ্ধ খাবার খেতে পারে না সেখানে এত টাকা ব্যয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং তার কিছু অংশ ভেঙে পুনর্নির্মাণ কতটা যুক্তিযুক্ত সেটাই প্রশ্ন রাখেন সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্র নেতারা।
ছাত্রলীগ-ছাত্রদল মুখোমুখি
বছর জুড়েই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফিরতে মরিয়া ছিল ঢাবি ছাত্রদল। কিন্তু যতবারই তারা ক্যাম্পাসে কোনো কর্মসূচি দিয়ে প্রবেশের চেষ্টা করেছে ততবারই ‘'ছাত্রদল অগ্নি সন্ত্রাস করতে পারে’ দাবিতে তাদের ওপর হামলা করেছে ছাত্রলীগের হল শাখার নেতাকর্মীরা।
ছাত্রদলের নতুন কমিটি ঘোষণার পরে উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ, ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া, ইফতারের পর গন্তব্যে ফেরার সময় বা অন্য কোনো কর্মসূচি নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করা চেষ্টা করলেই তাদের ওপর হামলা করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তাছাড়া ক্লাস-পরীক্ষা দিতে ক্যাম্পাসে ঢুকতে চাইলেও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা হেনস্থার শিকার হয়েছেন বলে জানান তারা।
ছাত্রলীগ-ছাত্র ইউনিয়ন মুখোমুখি
সারা বছর ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে ছাত্রলীগের তেমন কোনো মুখোমুখি ভাব দেখা না দিলেও বছরের শেষ ভাগে এসে সেই সম্পর্ক ভিন্ন রূপ নেয়। ঘটনার সূত্রপাত ১২ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়। ওই দিন নিজেদের প্রোগ্রাম করতে না পারার পেছনে দায়ী হিসেবে মেট্রোরেলের উদ্বোধনের জন্য শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে লাগানো ছাত্রলীগের সাইনবোর্ড ভাঙার চেষ্টা করে ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা। এসময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাৎক্ষণিকভাবে তাদের ওপর হামলা করলে বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হন।
ঘটনার প্রতিবাদে সেদিন রাতেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা রাজু ভাস্কর্যের মাথা ‘কালো কাপড়’ দিয়ে ঢেকে দেয় এবং ভাস্কর্যের বেদি ‘ছাত্র ইউনিয়নের সন্ত্রাসী কার্যক্রম’ সম্বলিত ব্যানার লাগিয়ে দেয়। ঘটনার জেরে ১৪ ডিসেম্বর পুনরায় ছাত্র ইউনিয়নের ঢাবি সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ৪ জনকে মেরে আহত করার অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।
পরবর্তীতে গত ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের দিন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা ছাত্রলীগ কর্তৃক সন্ত্রাস-বিরোধী রাজু ভাস্কর্যকে মোড়ানো কালো কাপড় খুলে ফেলে। এসময় সংগঠনের সভাপতি দীপক শীল ও সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) মাহির শাহরিয়ার রেজা শরীরের শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত সমাজপ্রগতির লড়াই চালিয়ে যাওয়ার শপথ ব্যক্ত করেন।
টিএসসিতে স্বপ্নের মেট্রোরেল যাত্রা
বছরের শুর থেকেই টিএসসিতে মেট্রোরেল না দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিলেন বিভিন্ন সংগঠনের ছাত্র নেতারা। শাহবাগে স্টেশন থাকার পরও টিএসসি স্টেশন হলে বহিরাগতদের আগমনে ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক পরিবেশ বিনষ্ট হবে বলে যুক্তি ছিল তাদের। তবে সব আলোচনা ছাপিয়ে গত ১৩ ডিসেম্বর মেট্রোরেলের টিএসসি স্টেশন চালু হয়। সেদিন সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রতিদিন ১০ মিনিট পরপর চলছে মেট্রোরেল।
সারাবছর আলোচনায় ছিল বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট সমস্যা বরাবরই থাকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। তবে এ বছর তুলনামূলক বেশিই ছিল এ গুঞ্জন। শিক্ষার্থীদের জন্য হল না করে শতবর্ষী স্থাপনা তৈরি করাতেই এই আলোচনা বেশি ছিল। তাছাড়া সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে শিক্ষার্থীদের সরিয়ে সেখানে গবেষকদের রাখার পরিকল্পনা গ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
আরও পড়ুন
এদিকে দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ হওয়া স্বত্বেও ঢাবির কুয়েত মৈত্রী হলের মনোয়ারা ভবনে দেড় শতাধিক শিক্ষার্থীকে থাকতে হচ্ছিল দীর্ঘদিন ধরেই। থাকার সমস্যা, ওয়াশরুমের সংকট ও নানাবিধ সমস্যার কথা তুলে ধরে তিনশত ছাত্রীকে অন্য হলে স্থানান্তরসহ তিন দফা দাবিতে ১৩ আগস্ট দুপুরে বাংলাদেশ কুয়েত-মৈত্রী হলের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ১০৫ জন শিক্ষার্থীর স্বাক্ষর সম্বলিত স্মারকলিপি সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের কাছে প্রদান করা হয়। এসময় উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান গ্রহণ করলে উপাচার্যের আশ্বাসে ১০ ঘণ্টা পর রাত ১১টায় হলে ফেরেন আন্দোলনরত ছাত্রীরা। সম্প্রতি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন থেকে শিক্ষার্থীদের সরানোর কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
গত ২১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা থেকে টানা পাঁচ ঘণ্টার বর্ষণে পানিতে তলিয়ে যায় বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলের নিচতলা। এতে হলের দোকানে পানি ওঠে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট হয়ে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে হলটি। সারারাত বিদ্যুৎ না থাকা এবং রুমে পানি ওঠায় নিচতলার কিছু শিক্ষার্থী উপরে অবস্থান নেন। ফলে গাদাগাদি করে প্রায় নির্ঘুম রাত পার করতে হয় শিক্ষার্থীদের। ১৬ ঘণ্টা পর পানি নামলে শিক্ষার্থীরা তাদের কক্ষে ফিরে আসেন।
হিজাব ইস্যুতে সরগরম ছিল ক্যাম্পাস
ঘটনার শুরু হয় গত ১১ ডিসেম্বর, যখন বাংলা বিভাগের এক নোটিশে ‘বিভাগের সকল প্রেজেন্টেশন, টিউটোরিয়াল, মিডটার্ম পরীক্ষা, চূড়ান্ত পরীক্ষা এবং ভাইভাতে কানসহ মুখমণ্ডল দৃশ্যমান রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়। না হলে তাদের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে উল্লেখ করা হয়। এর প্রতিবাদে ২৬ ডিসেম্বর বাংলা বিভাগ কর্তৃক প্রজ্ঞাপনের প্রতিবাদে ভিসি বরাবর ৫ দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি দিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীরা।
পরবর্তীতে ১৯ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত মীমাংসার জন্য শিক্ষার্থীরা হাইকোর্টে রিট করেন। রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ঢাবির বাংলা বিভাগের দেওয়া বিজ্ঞপ্তি ছয় মাসের জন্য স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন। পরে গত ২৯ মে হাইকোর্টের এই আদেশ স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ।
এর প্রতিবাদে ৫ জুন দুপুর ১২টায় বাংলা বিভাগের নোটিশের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করে উল্টো শিক্ষার্থীদের অধিকারের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ায় উপাচার্যের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে শিক্ষার্থীরা সমাবেশ করেন।
আরও পড়ুন
গত ৩০ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) অধ্যাপক ড. ওয়াহিদুজ্জামান চাঁন কর্তৃক নেকাবী শিক্ষার্থীদের হেনস্থা, ভাইভা দিতে না দেওয়া, একজন শিক্ষার্থীকে জোরপূর্বক নেকাব খুলে ভাইভা দেওয়া এবং ভিকটিমকে উগ্রবাদী ব্লেম দেওয়ার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
বিশেষ সমাবর্তনে ডক্টর অব লজ পেলেন বঙ্গবন্ধু
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সম্মানসূচক ‘ডক্টর অব লজ’ (মরণোত্তর) ডিগ্রি প্রদান করার লক্ষ্যে গত ২৯ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে বিশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। এই বিশেষ সমাবর্তনে প্রায় ১৯ হাজার শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অ্যালামনাই, রেজিস্ট্রার্ড গ্র্যাজুয়েট এবং অতিথি উপস্থিত ছিলেন। সমাবর্তনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর পক্ষে সম্মাননা স্মারক গ্রহণ করেন তিনি। সমাবর্তনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মো. সাহাবুদ্দিনের অসুস্থতাজনিত কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রপতির অনুমতিক্রমে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
ঢাবি ছাত্র অধিকার পরিষদের পদত্যাগ ও গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির উত্থান
বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন ও লেজুড়বৃত্তিক অবস্থানের বিষয়ে অভিযোগ তুলে ২৩ জুলাই বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে একযোগে পদত্যাগ করার ঘোষণা দেন ছাত্র অধিকার পরিষদ ঢাবি শাখার সভাপতি আসিফ মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক আহনাফ সাঈদ খান। অন্যদিকে ২৫ জুলাই রাতে এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে পদত্যাগের ঘোষণা দেন ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি এবং ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন।
ছাত্র অধিকার পরিষদ নেতৃবৃন্দের পদত্যাগের আড়াই মাসেরও কম সময়ের ব্যবধানে ৪ অক্টোবর সাবেক নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে নতুন ছাত্র সংগঠন ‘গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি’র আত্মপ্রকাশ করে। এদিন ডাকসুর সামনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র অধিকার পরিষদের সহ সভাপতি এবং ডাকসুর সাবেক সমাজকল্যাণ সম্পাদক আখতার হোসেনকে আহ্বায়ক ও মো. নাহিদ ইসলামকে সদস্য সচিব করে ২১ সদস্যবিশিষ্ট এক বছর মেয়াদি কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয় এবং ছাত্র অধিকার পরিষদের সাবেক ঢাবি সভাপতি আসিফ মাহমুদকে আহ্বায়ক করে ৩৩ সদস্য বিশিষ্ট ৩ মাস মেয়াদি ঢাবি শাখার কমিটি ঘোষণা করা হয়।
আরও পড়ুন
শিক্ষা-শক্তি-মুক্তির স্লোগান সামনে রেখে একটি রাজনৈতিক প্রজন্ম গড়ে তুলতে, দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তৈরি, একটি জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের মাধ্যমে রাষ্ট্র গঠনের কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া এবং রাজনৈতিক পরিসর নির্মাণ ও নাগরিকমুখী রাজনীতির মাধ্যমে সামাজিক শক্তি বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে নতুন এ ছাত্র সংগঠন আত্মপ্রকাশ করেছে বলে জানান নেতৃবৃন্দ।
আত্মপ্রকাশের দিনই হামলার শিকার গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি
গত ৪ অক্টোবর আত্মপ্রকাশের দিনই হামলার শিকার হন ‘গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি’র নবগঠিত কমিটির নেতৃবৃন্দ। কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক আখতার হোসেনসহ ১১ জন আহত হয়। কমিটি ঘোষণার পরে বিজয় মিছিল পরবর্তী সময়ে নিজ গন্তব্যে ফেরার পথে টিএসসির পার্শ্ববর্তী পরমাণু শক্তিকেন্দ্রের সামনে এ হামলার ঘটনা ঘটে। জসীমউদ্দিন হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রাশেদুজ্জামান রনির নেতৃত্বে হামলা চালানো হয় বলে গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়। তবে ছাত্রলীগ এই হামলার দায় অস্বীকার করে।
কেএইচ/এসকেডি