কে হচ্ছেন জবির পরবর্তী উপাচার্য?
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) পঞ্চম উপাচার্য হিসেবে ২০২১ সালের ১ জুন নিয়োগ পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ইমদাদুল হক। তবে তিনি পূর্ণ সময় দায়িত্ব পালন করে যেতে পারেননি।
ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মেয়াদ পূরণ হওয়ার আগেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর পর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ১০(৩) উপ-ধারা অনুযায়ী উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করছিলেন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড.কামাল উদ্দীন আহমেদ। তার দায়িত্বের মেয়াদ শেষ হয়েছে গতকাল (২৬ নভেম্বর)। এতে অভিভাবক শূন্য হয়ে পড়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
এ পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সকলের এখন একটাই প্রশ্ন— কে হচ্ছেন জবির পরবর্তী উপাচার্য? সেই সঙ্গে কোষাধ্যক্ষ পদ নিয়েও তৈরি হয়েছে কৌতুহল। একাধিক সূত্র বলছে প্রথমে উপাচার্য নিয়োগ হওয়ার পর কোষাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ প্রদান করা হবে।
উপাচার্যের দৌড়ে আছেন যারা
নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্য থেকে বিভিন্ন সময়ে উপাচার্য নিয়োগের দাবি তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তারা। এ নিয়ে শিক্ষক সমিতি ও সরকারের উচ্চ মহলে চিঠির মাধ্যমে তাদের দাবি পেশ করেছেন।
তবে ২০০৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে পাঁচ জন উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন। তারা সকলেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসেছেন। ফলে পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে অনেকেই ধারণা করছেন জবির ষষ্ঠ উপাচার্যও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে থেকেই কেউ হবেন।
আরও পড়ুন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও মন্ত্রণালয় সূত্র মতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাঁচজন শিক্ষক এখন পর্যন্ত জবির উপাচার্য হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে আছেন। তারা হলেন— নীল দলের আহ্বায়ক ও ফার্মেসি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আব্দুস ছামাদ, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, কলা অনুষদের ডিন, বিজয় একাত্তর হল প্রাধ্যক্ষ এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক আবদুল বাছির এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের দাবি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্য থেকেই উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হোক। তাদের মতে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য অনেক যোগ্য ব্যক্তি আছেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে গ্রেড-১ পদমর্যাদায় আছেন ৩৬ জন। তাদের মধ্যে অনেকেই ইতোমধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষসহ বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্য থেকে উপাচার্য পদের জন্য তিনজন সিনিয়র অধ্যাপকের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবুল কালাম মো. লুৎফর রহমান বলেন, আমাদের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসকে দ্রুত বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে উপাচার্য হিসেবে একাডেমিশিয়ানের পাশাপাশি একজন দক্ষ প্রশাসক প্রয়োজন। কারণ নতুন ক্যাম্পাস দ্রুত বাস্তবায়ন করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক থেকেই উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের গ্রেড-১ পদমর্যাদায় আছেন ৩৬ জন এবং গ্রেড-২ পদমর্যাদায় আছেন ৫৬ জন। তাদের মধ্যে অনেকেই ইতোমধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষসহ বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। আমাদের চাওয়া এসব শিক্ষকদের মধ্যে থেকে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হোক।
আগে যারা উপাচার্য ছিলেন
২০০৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞানের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ. কে. এম. সিরাজুল ইসলাম খান ২০০৮ সাল পর্যন্ত প্রথম উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস স্টাডিজ বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক আবু হোসেন সিদ্দিক ২০০৯ সাল এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ ২০১৩ সাল পর্যন্ত দ্বায়িত্ব পালন করেন। চতুর্থ উপাচার্য হিসেবে ২০১৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান যোগদান করেন। ২০১৭ সালের ২০ মার্চ তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে নিয়োগ পান।
এরপর ২০২১ সালের ১ জুন পঞ্চম উপাচার্য হিসেবে চার বছরের জন্য পদে নিয়োগ পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ইমদাদুল হক। তবে তিনি পূর্ণ সময় দায়িত্ব পালন করে যেতে পারেননি।
এমএল/এনএফ