রাবি ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) খাবার ক্যান্টিনের টেবিলে বসাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত দুই দফায় এই ঘটনা ঘটে। এতে দুই পক্ষের চারজন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, মতিহার হলের ক্যান্টিনে দুপুরের খাবারের সময় সিটে বসা নিয়ে রাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিবের অনুসারী ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ভাস্কর সাহা, লাল ও শান্ত মিলে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মো. সাকিবুল হাসান বাকির অনুসারী জাহিদ এবং রিফাতকে মারধর করে।
জানা যায়, জাহিদ ক্যান্টিনে খাবার খাওয়ার জন্য একটি সিটে বসেন, কিছুক্ষণ পর শান্ত এসে জাহিদকে অন্য সিটে বসতে বললে এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। পরবর্তীতে বিষয়টি সমাধানের কথা বলে ভাস্কর সাহা, শান্তসহ আরও ৪/৫ জন শিক্ষার্থী জাহিদের কক্ষে গিয়ে জাহিদকে এলোপাতাড়ি মারধর করে। এ সময় রিফাত জাহিদের কক্ষে গেলে তাকেও মারধর করা হয়।
উক্ত ঘটনার পর বিকেলে শের-ই-বাংলা হলের সামনে ভাস্কর সাহাকে একা পেয়ে সাকিবুল হাসান বাকির অনুসারী ৪/৫ জন শিক্ষার্থী মারধর করে দ্রুত পালিয়ে যায়। পরে শাখা ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত নেতা সাকিবুল হাসান বাকিসহ তার সঙ্গে থাকা বেশ কয়েকজনের ওপর হামলা চালায় রাবি ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ভাস্কর সাহার নেতৃত্বে তার অনুসারীরা।
অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা ভাস্কর সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিবের অনুসারী।
সংঘর্ষের ঘটনায় সাকিবুল হাসান বাকি ঢাকা পোস্টকে বলেন, মতিহার হলে আমার তিনজন ছোট ভাইকে ভাস্কর সাহা মারধর করে। ওরা আমার সঙ্গে সম্মেলন করেছিল, তাই বারবার ফোন দিচ্ছিল। আমরা ছোট ভাইদের নিয়ে বিকেলে পরিবহনে বসেছিলাম। এমন সময় ভাস্করের নেতৃত্বে তার অনুসারীরা আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। আমাদের সবার অভিভাবক খায়রুজ্জামান লিটন চাচা রাজশাহীতে নেই। উনি আসার পর এ বিষয়ে আমরা তার কাছে অভিযোগ জানাব।
হামলার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ভাস্কর সাহাকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব বলেন, ক্যাম্পাসের মতিহার হলের খাবার টেবিলে বসা নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত হয়। আমি জানতে পেরে আমার সভাপতিকে জানাই। কিন্তু তারা অপেক্ষা না করে ছাত্রলীগের হল শাখা সেক্রেটারির গায়ে হাত তুলেন। তারপরও সমস্যা সমাধান করার জন্য সভাপতি তাদেরকে বারবার কল দিয়ে মতিহার হলের গেস্টরুমে আসার জন্য বলেন। আমরা প্রায় ৪৫ মিনিট বসে থাকার পরেও তারা না এসে উল্টো বলে তারা তাদের মতো ব্যবস্থা নেবে। তারপর মতিহার হলের সেক্রেটারি ভাস্কর সাহা পরিবহনে দাঁড়ানো ছিল। তখন বহিরাগত সন্ত্রাসীর এসে আবার ভাস্করের গায়ে হাত দেয়। পরে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়।
এদিকে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিসিপ্লিনারি বোর্ডের গৃহীত সুপারিশ এবং ৫২৫তম সিন্ডিকেট সভা সূত্রে জানা যায়, মতিহার হলের আবাসিক শিক্ষার্থীকে আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন ও ছিনতাইয়ের অভিযোগে শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ভাস্কর সাহাকে সতর্ক করা হয়।
রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আবদুস সালাম স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়, ভবিষ্যতে আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থি কোনো কর্মকাণ্ড করলে ভাস্কর সাহার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি। মতিহার হলের প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে; তিনি ইতোমধ্যেই সেখানে পৌঁছেছেন বলে জানিয়েছেন। কোনো শিক্ষার্থীকে মারধরের বিষয়টি প্রমাণিত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে শাস্তি প্রদান করা হবে।
ভাস্কর সাহার বিরুদ্ধে আগের অভিযোগগুলোর প্রসঙ্গে প্রক্টর বলেন, আমরা তাকে সতর্ক করেছিলাম; মূলত যে শিক্ষার্থী অভিযোগটি করেছিল সে পরবর্তীতে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেওয়ায় আমাদের পক্ষে তাকে শাস্তির আওতায় আনা সম্ভব হয়নি।
জুবায়ের জিসান/এমজেইউ