প্রতিষ্ঠার সার্ধশতবর্ষে ঐতিহ্যের বিদ্যাপীঠ ইডেন মহিলা কলেজ
ব্রাহ্ম মেয়েদের জন্য ১৮৭৩ সালে ঢাকার ফরাশগঞ্জে একটি স্কুল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৭৮ সালে স্কুলটি অপর একটি মেয়েদের স্কুলের সঙ্গে একীভূত হয়ে ঢাকা ফিমেল স্কুলে রূপান্তরিত হয়। ওই বছর স্কুলটি সরকারি ব্যবস্থাপনায় দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় এবং গভর্নর স্যার অ্যাসলি ইডেনের নামানুসারে নতুন নামকরণ হয় ‘ইডেন গার্লস স্কুল’। স্কুলটি লক্ষ্মীবাজার এলাকায় কার্যক্রম শুরু করে। ইডেন গার্লস স্কুল ছিল বাংলায় মেয়েদের প্রথম স্কুল এবং ১৮৯৬ সালে এর ছাত্রী ছিল ১৩০ জন
প্রতিষ্ঠার ১৫০ বছর পূর্তি হলো ইতিহাস ও ঐতিহ্যের বিদ্যাপীঠ ইডেন মহিলা কলেজের। রাজধানীর আজিমপুরে অবস্থিত পুরোনো এ কলেজ ছিল বাংলার প্রথম সরকারি বালিকা বিদ্যালয়। ১৯৭৩ সালে স্কুল হিসেবে গোড়াপত্তন হয়েছিল দেশের অন্যতম এ বিদ্যাপীঠের। কালের পরিক্রমায় ১৫০ বছরের পথচলায় লাখো লাখো বিদ্যার্থীর পদচারণায় মুখরিত হয়েছে এ প্রতিষ্ঠানের চত্বর। এখানে পড়েই জন্ম হয়েছে অনেক খ্যাতনামা ও প্রথিতযশা রাজনৈতিক নেতা, কবি, সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদদের।
মূলত, ইডেন মহিলা কলেজ শুভ সাধিনী সভা নামীয় একটি সমাজসেবামূলক সংগঠনের মাধ্যমে ব্রাহ্ম মেয়েদের জন্য ১৮৭৩ সালে ঢাকার ফরাশগঞ্জে একটি স্কুল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৭৮ সালে স্কুলটি অপর একটি মেয়েদের স্কুলের সঙ্গে একীভূত হয়ে ঢাকা ফিমেল স্কুলে রূপান্তরিত হয়। ওই বছর স্কুলটি সরকারি ব্যবস্থাপনায় দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় এবং গভর্নর স্যার অ্যাসলি ইডেনের নামানুসারে নতুন নামকরণ হয় ‘ইডেন গার্লস স্কুল’। স্কুলটি লক্ষ্মীবাজার এলাকায় কার্যক্রম শুরু করে। ইডেন গার্লস স্কুল ছিল বাংলায় মেয়েদের প্রথম স্কুল এবং ১৮৯৬ সালে এর ছাত্রী ছিল ১৩০ জন। সরকার এটিকে পূর্ববাংলা ও আসাম প্রদেশের উচ্চমান বিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
আরও পড়ুন
ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে ভবনটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে স্কুলটি সাময়িকভাবে একটি বাড়িতে এবং কিছুদিন পর সদরঘাট এলাকায় পর্তুগিজ ব্যবসায়ীদের একটি বাণিজ্যিক ভবনে স্থানান্তরিত হয়। স্কুলটিতে ১৯২৬ সালে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু হয়। সেই থেকে এটি ‘ইডেন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ও উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ’ নাম ধারণ করে। শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের উদ্যোগে কলেজটি আবদুল গণি রোডের একটি ভবনে স্থানান্তরিত হয়। ভবনটি পরবর্তীতে ইডেন বিল্ডিং নামে পরিচিত হয়। ১৯৪৭ সালে সরকার ইডেন বিল্ডিংয়ে নতুন প্রাদেশিক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নিলে কলেজটি কার্জন হলের একটি অংশে স্থানান্তরিত হয়।
পরবর্তীতে কলেজের সঙ্গে কামরুন্নেসা স্কুল একীভূত করার পরিকল্পনা অনুযায়ী কলেজটি আবার স্কুল চত্বরে স্থানান্তরিত হয়। অবশেষে ১৯৫৮ সালে ইডেন কলেজ ও কামরুন্নেসা স্কুলের কলেজ শাখা একীভূত হয়ে বকশিবাজারে ইডেন গার্লস কলেজে রূপান্তরিত হয়।
১৯৬২ সালে আজিমপুরে ১৮ একর জমির ওপর গড়ে ওঠে ইডেন কলেজ। কলেজটি নতুন প্রাঙ্গণে স্নাতক কার্যক্রম চালু করে। কিন্তু এর উচ্চ মাধ্যমিক শাখা বকশিবাজারে অব্যাহত থাকে। পর্যায়ক্রমে কলেজটির আজিমপুর শাখায় উচ্চ মাধ্যমিক ক্লাস এবং বকশিবাজার শাখায় ডিগ্রি ক্লাস চালু হয়। পরবর্তীতে বকশিবাজার শাখার নামকরণ হয় সরকারি বালিকা মহাবিদ্যালয়। এরই পরিবর্তিত নাম বর্তমান বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ। ১৯৬৩ সাল থেকে আজিমপুরের ইডেন কলেজ একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে এখন পর্যন্ত ইডেন মহিলা কলেজ নামে পরিচালিত হয়ে আসছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি কলেজ হিসেবে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রদান করছে
আরও পড়ুন
প্রতিষ্ঠান দুটির স্কুল শাখা একীভূত করে কামরুন্নেসা স্কুল নামে টিকাটুলিতে চালু হয়। ১৯৬২ সালে আজিমপুরে ১৮ একর জমির ওপর গড়ে ওঠে ইডেন কলেজ। কলেজটি নতুন প্রাঙ্গণে স্নাতক কার্যক্রম চালু করে। কিন্তু এর উচ্চ মাধ্যমিক শাখা বকশিবাজারে অব্যাহত থাকে। পর্যায়ক্রমে কলেজটির আজিমপুর শাখায় উচ্চ মাধ্যমিক ক্লাস এবং বকশিবাজার শাখায় ডিগ্রি ক্লাস চালু হয়। পরবর্তীতে বকশিবাজার শাখার নামকরণ হয় সরকারি বালিকা মহাবিদ্যালয়। এরই পরিবর্তিত নাম বর্তমান বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ। ১৯৬৩ সাল থেকে আজিমপুরের ইডেন কলেজ একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে এখন পর্যন্ত ইডেন মহিলা কলেজ নামে পরিচালিত হয়ে আসছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি কলেজ হিসেবে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রদান করছে।
২৩টি বিভাগের প্রায় ৩৫ হাজার ছাত্রী সহশিক্ষা কার্যক্রম হিসেবে বিজ্ঞান ক্লাব, শারীরিক শিক্ষা, বাংলাদেশ জাতীয় ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি), ইডেন মহিলা কলেজ রোভার স্কাউট গ্রুপ, ছায়াবীথি, তায়কোয়ান্দো, বাঁধন, ইডেন মহিলা কলেজ ডিবেটিং ক্লাবে (ইএমসিডিসি) অংশ নিচ্ছেন
বর্তমানে কলেজটিতে ছয়টি ভবন ছাড়াও শিক্ষার্থীদের জন্য ছয়টি হোস্টেল রয়েছে। এক হাজার আসনবিশিষ্ট এগারো তলাবিশিষ্ট আধুনিক বালিকা হোস্টেল আবাসিক ব্যবস্থাপনায় অনন্য মাত্রা যুক্ত করেছে। ছাত্রীনিবাসগুলো হলো— খোদেজা খাতুন ছাত্রীনিবাস, জেবুন্নেসা ছাত্রীনিবাস, রাজিয়া বেগম ছাত্রীনিবাস, হযরত আয়েশা সিদ্দিকা ছাত্রীনিবাস, হাসনা বেগম ছাত্রীনিবাস ও শহীদ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা ছাত্রীনিবাস।
২৩টি বিভাগের প্রায় ৩৫ হাজার ছাত্রী সহশিক্ষা কার্যক্রম হিসেবে বিজ্ঞান ক্লাব, শারীরিক শিক্ষা, বাংলাদেশ জাতীয় ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি), ইডেন মহিলা কলেজ রোভার স্কাউট গ্রুপ, ছায়াবীথি, তায়কোয়ান্দো, বাঁধন, ইডেন মহিলা কলেজ ডিবেটিং ক্লাবে (ইএমসিডিসি) অংশ নিচ্ছেন।
আরও পড়ুন
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে আত্মাহুতি দেওয়া বাঙালি নারী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, পুষ্টিবিশেষজ্ঞ ও শিক্ষাবিদ সিদ্দিকা কবির, ভাষা সৈনিক চেমন আরা, নারী রাজনীতিবিদ মতিয়া চৌধুরী, অভিনেত্রী হুমায়রা হিমুসহ অসংখ্য গুণী মানুষ এ প্রতিষ্ঠানের ছাত্রী ছিলেন।
বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন অধ্যাপক সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য্য। উপাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন অধ্যাপক ফেরদৌসী বেগম।
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে আত্মাহুতি দেওয়া বাঙালি নারী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, পুষ্টিবিশেষজ্ঞ ও শিক্ষাবিদ সিদ্দিকা কবির, ভাষা সৈনিক চেমন আরা, নারী রাজনীতিবিদ মতিয়া চৌধুরী, অভিনেত্রী হুমায়রা হিমুসহ অসংখ্য গুণী মানুষ এ প্রতিষ্ঠানের ছাত্রী ছিলেন
প্রতিষ্ঠানটির সার্ধশত বর্ষপূর্তি উদযাপনে নেওয়া হয়েছে নানা কর্মসূচি। এগুলোর মধ্যে আছে- সার্ধশতবর্ষের র্যালি (প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে কলেজ মাঠ), বেলুন ও পায়রা উড়ানো, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, ডকুমেন্টারি প্রদর্শন, উপহারসামগ্রী বিতরণ, থিম সং পরিবেশন, কৃতী শিক্ষার্থীদের সম্মাননা প্রদান, মধ্যাহ্নভোজ, স্মৃতিচারণ, র্যাফেল ড্র, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সার্ধশতবর্ষের কনসার্ট।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির।
আরএইচটি/এমএআর