ঢাবিতে মোদিবিরোধী মিছিলে হামলা, সাংবাদিকসহ আহত অর্ধশতাধিক
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশে আগমন ঘিরে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলো প্রতিবাদী মশাল মিছিলে বেপরোয়া হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ।
বৃহস্পতিবার (২৫ মার্চ) সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এতে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। একই ঘটনায় ছাত্রলীগের হামলায় মাথা ফেটে যায় প্রথম আলোর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আসিফ হাওলাদারের। গুরুতর আহত হয়ে তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় এবং পরে ল্যাব এইডে নিয়ে যাওয়া হয়।
অন্যদিকে, বিকেলে মোদিবিরোধী ‘জেয়াফত’ নামের একটি কর্মসূচিতে হামলা চালায় ছাত্রলীগ। হামলার ভিডিও ধারণ করায় ঘটনাস্থলে বেপরোয়া মারধর করা হয় বাংলা ট্রিবিউনের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আবিদ হাসান রাসেলকে। এ সময় তার মোবাইলও নিয়ে যাওয়া হয় বলে দাবি করেন এ সাংবাদিক। ছাত্রলীগের হামলার ঘটনা যারাই ভিডিও করবেন তাদের মোবাইল কেড়ে নেওয়ার নির্দেশ দিতে দেখা যায় ছাত্র সংগঠনটির কয়েকজন নেতাকে।
হামলার শিকার আবিদ হাসান রাসেল বলেন, ‘সবাই যখন জেয়াফত নিচ্ছিল, তখন ছাত্রলীগ তেড়ে এসে ব্যানার ছেঁড়ার সময় আমি ছবি তুলছিলাম। তখন ওদের কয়েকজন আমার ওপর তেড়ে আসে এবং লাঠি দিয়ে মারা শুরু করে। আমি টিএসসির ভেতরে চলে যায় এবং সাংবাদিক পরিচয় দিই। সাংবাদিক বলার পর আমার মোবাইলটা কেড়ে নিয়ে যায়, আমি কার্ড দেখালে আমার কার্ডটা ছিঁড়ে নিয়ে যায়। তারপর আরও কিছুক্ষণ মেরে আমাকে টিএসসি গেটের ভেতরের দিকে ঠেলে দিয়ে তারপর ওরা চলে যায়।’
এর আগে, মোদিবিরোধী কর্মসূচি পালনকারীদের কলিজা ছিঁড়ে ফেলার হুমকি দেন ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস। সনজিতের হুমকির পর থেকে আন্দোলনকারীদের ওপর একাধিক হামলার ঘটনা ঘটেছে।
পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে সন্ধ্যা ৭টায় নীলক্ষেত থেকে কর্মসূচি শুরু করে প্রগতিশীল ছাত্রজোট। মশাল মিছিলে প্রগতিশীল ৯টি সংগঠনের কয়েকশ নেতাকর্মী অংশ নেন। বামদের সংগঠন প্রগতিশীল ছাত্রজোট মশাল মিছিল নিয়ে রোকেয়া হলের সামনে এলে রাজু ভাস্কর্যে আগে থেকে অবস্থান করা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তেড়ে আসে। এরপর বাম সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা পিছু হটে ভিসি চত্বরে অবস্থান নেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনসহ প্রায় ৫০ জন নেতাকর্মীসহ শিক্ষা ও গবেষণা ইনিস্টিটিউটের পাশে অবস্থান নেন। ছাত্রলীগের মিছিল রাজু ভাস্কর্য থেকে আসে। মিছিলটি স্মৃতি চিরন্তনের দিকে এলে ছাত্রলীগ ছাত্রজোটের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে। হামলায় জোটের নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কয়েকটি গ্রুপ হয়ে বেপরোয়া মারধর করেন তাদের। জোটের কিছু নেতাকর্মী ফুলার রোডের দিকে পালিয়ে গেলে সেখানে তাদের মারধর করা হয়।
এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত বিভিন্ন গণমাধ্যমের ফটো সাংবাদিকদের ধাওয়া দেয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। বিচ্ছিন্ন অবস্থায় পালাতে থাকা জোট কর্মীদের খুঁজে খুঁজে মারধর করা হয়। এ সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রমতে, সংঘর্ষের সময় সাংবাদিক ভেবে নিজ সংগঠনের এক নেতার মাথায় আঘাত করেন ছাত্রলীগের আরেক নেতা। এতে সংগঠনটির এক জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়।
ছাত্র ফ্রন্টের ঢাবি শাখার সভাপতি সালমান সিদ্দিকী বলেন, ‘ছাত্রলীগ আমাদের ওপর ভিসি চত্বরে মিছিল নিয়ে এসে হামলা করে। এতে আমাদের অনেক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। ছাত্রলীগের এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আমাদের সবার প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’
হামলার বিষয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, ‘যারা হামলা করেছে তারা ক্যাম্পাসের কেউ নয়। আর সাংবাদিক চেনা যায় না, অনেকে আইডি কার্ড ঝুলিয়ে বসে থাকে। ছাত্রলীগের কেউ জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
হামলার শিকার হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই সাংবাদিকই হাসপাতালে ভর্তি আছেন। বাংলা ট্রিবিউনের সাংবাদিক আবিদ হাসান রাসেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেলে আছেন এবং প্রথম আলোর সাংবাদিক আসিফ হাওলাদার ল্যাব এইডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এফআর