মাছ-মাংসে আগুন, আমিষ খেতে পারছে না মেসে থাকা শিক্ষার্থীরা
রংপুরে স্বস্থি নেই বাজারে। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মাছ ও মাংসের দাম। মধ্যবিত্তদের ভরসা ব্রয়লার মুরগি ও মাছের বাজারও চড়া। খুদ্র ব্যবসায়ীরা জানায়, আমাদের কিছু করার নেই, চাহিদার থেকে সরবরাহ কম তাই দাম কমছে না। আমাদের বেশি দামে কিনতে তাই সামান্য লাভেই তুলে দেই ক্রেতাদের হাতে।
শনিবার (৬ মে) রংপুরের মর্ডান বাজার, চক বাজার ও লালবাগ বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা দরে, ব্রয়লার মুরগির কাটা মাংস বিক্রি হচ্ছে ৩৩০ থেকে ৩৪০ টাকা দরে, সোনালী মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৩০ টাকা দরে। গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭২০ টাকা দরে। এছাড়াও পাঙ্গাস মাছ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা, মিরর কার্প ২২০ থেকে ২৪০, রুই মাছ ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা দরে। রমজানেও ব্রয়লার মুরগির মাংস বিক্রি হতো বর্তমান বাজারের থেকে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কমে, গরুর মাংস বিক্রি হতো ২০ টাকা কমে। মাছ বিক্রি হতো ১০ থেকে ২০ টাকা কমে।
রংপুরের লালবাগ বাজারে কথা হয় স্কুল শিক্ষক সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানায়, দিন দিন যে হারে মাছ মাংসের দাম বাড়ছে এতে আমাদের মতো মধ্যবিত্তদের জন্য আমিষ খাওয়া কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। রমজানেও দাম বাড়িয়ে কিছুটা কমানো হয়েছিল এখন আবারও বাড়ানো হচ্ছে। এভাবে দাম বাড়তে থাকলে মানুষ খাবে কি?
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী হিমু বলেন, আমার বাড়ি থেকে চার হাজার টাকা প্রতিমাসে দেয়। মেস, খালার বিল, কারেন্ট বিল, ওয়াইফাই বিল দেওয়ার পর যে টাকা অবশিষ্ট থাকে বর্তমান বাজারে তা দিয়ে মাছ মাংস কেনা কষ্টকর হয়ে যায়।
রংপুরের সর্দারপাড়ার খাইরুল মেসে থাকেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল কাদের। তিনি বলেন, প্রতি মাসে বাড়ি থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা এনেও মাস শেষ হওয়ার আগেই টাকা শেষ হয়ে যায়। মেস ভাড়া, বুয়া বিল, মিল খরচ, বিদ্যুৎ বিল, ওয়াইফাই বিল দিতেই হাতখরচ আর থাকে না। এদিকে মিলের টাকা বাড়িয়েও বাজারে গিয়ে আমিষ কিনতে পারি না। বাজারের মূল্য বৃদ্ধিতে আমিষ খাওয়া খুব কষ্টকর হয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, আগে বড় মাছ, মাংস কিনলেও এখন তা কিনতে পারি না। আগে মেসে দিনে দুই বেলা আমিষ খেতে পারতাম আর এখন খেতে হচ্ছে একবেলা।
লালবাগ কেডিসি রোডের ডিলাক্স টু মেসে থাকেন তাসনিম মির্জা। তিনি জানান, মিল চার্জ বাড়িয়েও মেসের খাবার খাওয়া যায় না। আগে সকালে ডাল ভর্তা বা সবজি খেতে দিলেও এখন দেওয়া হয় শুধু ভর্তা। দুপুরে আগে খাবারের ৩টা মেনু থাকলেও এখন থাকে ২টা। আর আমিষের পরিমাণ খুবই কম।
লালবাগ নুরানি সুপার স্টার মেসের সদস্য রোমানা খান বলেন, আগে মেসের খাবার ভালো না লাগলে যখন তখন রান্না করে খেতাম। এখন আমিষের যা দাম আলাদা রান্না করার কথা চিন্তা করা যায় না। যা মিল দেয় তাই খেতে হয়।
মেসে থাকা আরেক ছাত্রী নাহিদা আক্তার লিজা বলেন, সব কিছুর দাম বৃদ্ধিতে মেসে থাকা কষ্টকর হয়ে গেছে। আগে বাড়ি থেকে যে টাকা নিয়ে মাস শেষ হত এখন তার থেকে বেশি টাকা নিয়েও মাস শেষে আবারও বাড়িতে টাকা চাইতে হয়।
রংপুর খামার মোড় এলাকার বাসিন্দা সোলায়মান হক বলেন, মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য নিয়ে সবাই বড় রকমের ব্যবসা শুরু করেছে। বাজারের দাম নিয়ে যা শুরু হইছে তাতে বাজারে আসতেই ভয় লাগে। খাদ্যদ্রব্য থেকে শুরু করে পোশাক আশাক সবকিছুরই রাতারাতি দাম বাড়ছে। সবার চোখের সামনে দাম বাড়ানো হচ্ছে কিন্তু সবাই যেন চুপ হয়ে আছে। নিয়মিত বাজার মনিটরিং করে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম সহনশীলতায় আনা দরকার। তা না হলে সাধারণ মানুষ আরও বড় বিপদে পড়বে।
রংপুর চকবাজারের মুরগির মাংস ব্যবসায়ী মেনাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের বেশি দামে মুরগি কিনতে হয় তাই বেশি দামেই মাংস বিক্রি করি। কম দামে মুরগি কিনতে পারলে আমরাও কম দামে বেচতে পারবো।
তিনি জানান, মুরগির খামারির পর কয়েক হাত ঘুরে আমাদের কাছে আসে। সবাই কিছু লাভ করেই মুরগি ছেড়ে দেয়। আমরা মূল্য তালিকা টাঙ্গিয়ে দিয়েছি। ওই দামেই বিক্রি করছি।
লালবাগ বাজারের মাছ ব্যবসায়ী বাবু মিয়া জানান, এখন বৃষ্টি হচ্ছে না। পুকুর, খাল-বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। উত্তরাঞ্চলে মাছের সরবরাহ অনেক কমে গেছে। মাছের আড়ৎগুলোতেও চাহিদা মাফিক মাছ আসছে না। মাছের সংকট হওয়ায় দাম একটু বেশি। খাল বিলে পানি হলে বাজারে মাছের সরবরাহ বাড়বে তখন আবার মাছের দাম কমবে।
শিপন তালুকদার/এমএএস