ইবির ওয়েবসাইটে করা হয় না তথ্য হালনাগাদ
বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হলেও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) নিজস্ব ওয়েবসাইটে নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণাঙ্গ তথ্য। সেইসঙ্গে নিয়মিত হালনাগাদ হয়না ওয়েবসাইটের তথ্য।
দেশ চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের পথে এগিয়ে গেলেও শিক্ষা পদ্ধতির নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি বিশ্ববিদ্যালয়টিতে। ফলে সনদপত্র ও নম্বরপত্র উত্তোলনের সব কাজ করা হয় অ্যানালগ পদ্ধতিতে। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় শিক্ষার্থীদের। এসব কারণে বিদেশী শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কমছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেন সেল।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রশাসনিক পদ, বিভাগীয় সভাপতি ও অনুষদের ডিনসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক দপ্তরের তথ্য থাকার কথা ওয়েবসাইটে। তবে অনেক ক্ষেত্রে তথ্য থাকলেও সময়মতো তথ্য হালনাগাদ করেনি কর্তৃপক্ষ। এছাড়া কিছু দপ্তরের কোনো তথ্যই পাওয়া যায়না ওয়েবসাইটে। গত জানুয়ারিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, আইন প্রশাসক, আইকিউএসির পরিচালক নিয়োগ দেন কর্তৃপক্ষ। এর দেড় মাস পার হলেও ওয়েবসাইটে হালনাগাদ করা হয়নি তথ্য। এছাড়া আইন বিভাগ, ফাইন আর্টস বিভাগ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের সভাপতি এবং সামাজিক বিজ্ঞান, ব্যবসায় প্রশাসন, বিজ্ঞান এবং জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন নিয়োগ হলেও হালনাগাদ করা হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট দপ্তর ছাত্র উপদেষ্টা ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসের কোনো তথ্য নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে। ফলে শিক্ষার্থীদের তাৎক্ষণিক তথ্য প্রয়োজনে এ দপ্তরে যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে শিক্ষকদের তালিকা থাকলেও প্রয়োজনীয় অন্য কোনো তথ্য নেই। তাছাড়া আটটি আবাসিক হলের প্রভোস্ট ও আবাসিক শিক্ষকদেরও তথ্য নেই এখানে। এমনকি নেই কোনো গবেষণাপত্র ও জার্নাল। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগগুলোর নিজস্ব ওয়েবসাইট বা তথ্য ভাণ্ডার থাকলেও ইবির কোনো বিভাগেরই নেই কোনো স্বতন্ত্র ওয়েবসাইট। ফলে তথ্য না পাওয়ায় বিভিন্ন কাজে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন ছাত্র সাকিব জানান, তিনি যে বিভাগে ভর্তি হয়েছেন এ বিভাগ সম্পর্কে কোনো তথ্য তিনি ওয়েবসাইটে পাননি। তাছাড়া ওয়েবসাইটে বিভাগের কোনো তথ্য নেই, যা দেখে আমি বুঝতে পারব এ বিভাগে পড়লে কি কি জানব এবং চাকরির বাজারে এর চাহিদা কতটুকু।
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মাসুম আলভী জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের এমন কোনো ধরণের গবেষণাপত্র নেই, যা বিশ্ববিদ্যালয়টিকে দেশে ও দেশের বাইরে পরিচিত করে তুলবে। এছাড়া ওয়েবসাইটে ই-লাইব্রেরি নামে একটি ট্যাব রয়েছে। যার কোনো কাজই নেই। সেখানে নেই কোনো বই, যা শিক্ষার্থীরা পড়বে অথবা নতুন কিছু জানবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিদেশী শিক্ষার্থী জানান, বিশ্বায়নের যুগে একটি দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের যতটুকু ডিজিটাল হওয়া উচিৎ, ইবি ততটুকু নয়। পাশাপাশি একজন বিদেশী শিক্ষার্থী হিসেবে ওয়েবসাইটে সার্বিক তথ্যও তারা পান না।
এ বিষয়ে আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. রেবা মণ্ডল বলেন, একটি প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে যাবতীয় তথ্য থাকাটা জরুরি। এ তথ্যের মধ্যে একাডেমিক বিষয়গুলো বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। আইন বিভাগের যাবতীয় তথ্য পাঠানো হয়েছে। আশা করছি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেল বিভাগ সম্পর্কিত তথ্যগুলো হালনাগাদ করবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেল পরিচালক অধ্যাপক ড. আহসান-উল আম্বিয়া বলেন, আমরা আইসিটি সেলের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে যেসব তথ্য ঘাটতি রয়েছে, তা পূরণ করার চেষ্টা করছি। যেহেতু নিয়মিত তথ্য ও বিভিন্ন অফিস সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পরিবর্তন হয়েছে। তাই সেসব বিভাগ বা দপ্তর থেকে তথ্যগুলো না পাওয়ায় হালনাগাদ করতে দেরি হচ্ছে।
রাকিব হোসেন/এফকে