ম্যাগনাকার্টার সঙ্গে তুলনা করে ছয় দফাকে ছোট করা হয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক এবং বিইউপির বঙ্গবন্ধু চেয়ার ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেছেন, ঐতিহাসিক ছয় দফা ছিল বাঙালির মুক্তির সনদ। যার মধ্যে রাজনৈতিক, নৈতিক, সামরিক ও স্বায়ত্তশাসনের কথা বলা হয়েছিল। ম্যাগনাকার্টার সঙ্গে তুলনা করে ঐতিহাসিক ছয় দফাকে ছোট করা হয়।
সোমবার (১৩ মার্চ) ঢাকা কলেজের ইতিহাস বিভাগের আয়োজনে শহীদ আ.ন.ম. নজিব উদ্দিন খান খুররম অডিটোরিয়ামে ‘বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব ও বাংলাদেশের জন্ম’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, ১৯২০ সালে ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জ টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এই অজপাড়া গাঁয়ে জন্ম নিয়ে এই মানুষটি এত বড় মাপের নেতা হয়েছেন তা একটি বিমুগ্ধ বিস্ময়। ছোটবেলা থেকে তার অসামান্য ব্যক্তিত্ব আর নেতৃত্বের বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে। বাঙালির মুক্তির সনদ হিসেবে পরিচিত ছয় দফাও তার অগাধ দূরদর্শিতার অন্যতম একটি নমুনা।
তিনি বলেন, তবে মাঝে মধ্যে লেখা হয়, ছয় দফা বাঙালির ম্যাগনাকার্টা। কিন্তু বাস্তবে ম্যাগনাকার্টার প্রেক্ষাপট ও ছয় দফা প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। ম্যাগনাকার্টা ছিল রাজার ক্ষমতা খর্ব করার জন্য একটি ঐতিহাসিক দলিল। অপরদিকে ছয় দফা ছিল বাঙালির মুক্তির ঐতিহাসিক দলিল। এই ছয়টি দফায় ভিন্ন ভিন্ন বিষয় বলা হলেও ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বারবার স্বাধীনতার ইঙ্গিতই করা হয়েছে। তাই বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে জানতে হলে বঙ্গবন্ধুর লেখা অসমাপ্ত আত্মজীবনী, আমার দেখা নয়াচীন ও কারাগারের রোজনামচা বই পাঠ করতে হবে। তবেই বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস ও বঙ্গবন্ধুর দর্শন সম্পর্কে সঠিক তথ্য মানুষ জানতে পারবে।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ঢাকা কলেজের ছাত্র হিসেবে তোমাদের গর্ববোধ করার জায়গা রয়েছে। কেননা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি প্রথম ঢাকা কলেজের ছাত্রই চয়ন করেছিলেন। আগরতলা মামলার থেকে মুক্তি পাওয়ার পরে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবের সম্মানে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক সভার আয়োজন করে। লাখো লাখো মানুষের উপস্থিতিতে এই সম্মেলনে শেখ মুজিবকে বঙ্গবন্ধু উপাধি দেওয়া হয়। এই উপাধির ঘোষণা দিয়েছিলেন তোফায়েল আহমেদ। কিন্তু রেজাউল হক চৌধুরী মুশতাক ১৯৬৮ সালে ছাত্রলীগের প্যাডে ছোট্ট একটি রচনা লেখেন। তার মধ্যেই শেখ মুজিবের নামের আগে বঙ্গবন্ধু বিষয়টি জুড়ে দিয়ে ছিলেন। একইসাথে ১৯৬৮ সালের ডিসেম্বর মাসে ঢাকা কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব’ স্লোগান দেওয়া হয়েছিল।
ষাটের দশকের ছাত্রলীগ আর এখনকার ছাত্রলীগের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ষাটের দশকে ছাত্রলীগ নেতারা যে পরিমাণ পড়াশোনা করেছেন এখনকার ছাত্রলীগ তার ধারে কাছেও নেই। বঙ্গবন্ধু মাত্র ২৯ বছর বয়সেই তার সম্মোহন ও মেধার মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতার গতিপথ ত্বরান্বিত করেছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন বাঙালির স্বাধীনতা ছাড়া মুক্তি নাই। সেই চিন্তা থেকে ১৯৬১ সালের ২৫ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের কাউকে না জানিয়ে শেখ মুজিব ভারতের প্রধানমন্ত্রী নেহেরুর কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন। যেখানে আত্মমর্যাদা বজায় রেখে বাঙালির স্বাধীনতা অর্জনে ভারতের সহায়তার কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। এছাড়াও ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধুর কৌশলী ঘোষণায় দিশাহারা বাঙালি পথের খুঁজে পেয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
আলোচনা সভায় ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউসুফের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঢাকা কলেজের ইতিহাস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ফেরদৌসী আমিন। আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঢাকা কলেজ উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক এ. টি. এম মইনুল হোসেন ও ঢাকা কলেজ শিক্ষক পরিষদ সম্পাদক ড. মো. আব্দুল কুদ্দুস সিকদার।
আরএইচটি/ওএফ