রাবিতে শিক্ষার্থীদের বাকি খাইয়ে নিঃস্ব বাবু, কষ্টে আছেন শফিকুলও
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শহীদ জিয়াউর রহমান হলের সামনে খাবারের দোকান ছিল মানিক হোসেনের। শিক্ষার্থীদের কাছে তিনি বাবু ভাই নামে পরিচিত। ২২ বছর ধরে চলা দোকানটি গত ২১ ডিসেম্বর হঠাৎ বন্ধ করে দেন তিনি।
দোকান বন্ধের কারণ জানতে চাইলে বাবু জানান, ২২ বছর ধরে ব্যবসা করছেন তিনি। কিন্তু শিক্ষার্থীরা বাকি খেয়ে টাকা-পয়সা দিচ্ছে না। তিন লাখ টাকার মতো বাকি পড়ে গেছে। বাজার করার টাকাই নেই তার কাছে। ঋণের কারণে বাধ্য হয়ে দোকান বন্ধ করে দিয়েছেন।
শুধু বাবু নন, প্রায় একই অবস্থা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ খাবারের দোকান ও ক্যান্টিন মালিকের। তাদের অভিযোগ, ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্তরাই বেশি বাকি খান। এখন তারা বকেয়া টাকা দিচ্ছেন না। টাকা চাইতে গেলে উল্টো হুমকি শুনতে হচ্ছে। এতে ব্যবসা লাটে ওঠার উপক্রম। এ ছাড়া অনেক সাধারণ শিক্ষার্থীর কাছেও তাদের বকেয়া রয়েছে।
হোটেল মালিক বাবু ঢাকা পোস্টকে বলেন, শিক্ষার্থীরা বাকি খাচ্ছে, টাকা দিচ্ছে না। চাইলেই বলে কিছু দিন পরে দিব। তারা বিভিন্ন সমস্যা দেখিয়ে বাকি খেয়েছে। আড়াই লাখ টাকার মতো বাকি পড়ে গেছে। প্রতিদিন ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকার মালপত্র লাগে হোটেলে। টাকা না থাকায় বাজার করতে পারছি না। বাধ্য হয়ে দোকান বন্ধ করে দিতে হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মাঝে কিছু দিন ছাত্রলীগের নতুন কমিটি হওয়ার গুঞ্জন ছিল। তখন কর্মীরা বিভিন্ন ভাইয়ের নামে অনেক টাকা বাকি করেছে। অনেকেই নিয়মিত খেয়ে টাকা দিত না। কিছু বলাও যায় না। কেউ কেউ চাঁদাও নিয়েছে। কিছু বললে দোকান বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিতো।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ক্যান্টিন মালিক শফিকুল ইসলাম নোটিশ টানান, ‘বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না, আমার চলতে কষ্ট হয়, আমাকে ক্যান্টিন চালাতে সহযোগিতা করুন। বাকির খাতা পরিশোধ করুন, অনুরোধে শফি ভাই।’
শফিকুল জানান, ২০১০ সাল থেকে তিনি ক্যান্টিন চালাচ্ছেন। গত পাঁচ-ছয় মাসেই এক লাখ টাকার বেশি বাকি খেয়েছেন শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে এতো টাকা বকেয়া পড়ায় টিকে থাকাই কঠিন হয়ে পড়েছে তার।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শায়খুল ইসলাম মামুন জিয়াদ বলেন, এ বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো লিখিত অভিযোগ আসেনি। তবে আমরা শফিকুলের সঙ্গে কথা বলেছি। শিক্ষর্থীরা তার থেকে সময় নিয়েছে। আশা করি দ্রুত এটার সমাধান হয়ে যাবে।
জুবায়ের জিসান/আরএআর