চুকুরগাছ থেকে মুখরোচক খাদ্য-পানীয় উদ্ভাবন করলেন বাকৃবি শিক্ষক
সম্ভাবনায়ময় একটি ঔষধি গুণসম্পন্ন উদ্ভিদ হলো রোজেল। আঞ্চলিক ভাষায় চুকাই বা চুকুর নামে পরিচিত। চুকাইগাছ তার পুষ্টিগুণ, স্বাদ ও ঘ্রাণের জন্য বিশ্বব্যাপী বিখ্যাত। আমেরিকা, জাপানসহ আফ্রিকার দেশগুলোতে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে বাংলাদেশে গাছটির পরিচিতি ও ব্যবহার বেশ কম। এ রকম একটি অপ্রচলিত গাছের ফুলের বৃতির অংশ প্রক্রিয়াজাত করে জ্যাম, জেলি, পুডিং, চাটনি, আচার, চকলেট, চা ও জুসসহ বিভিন্ন মুখোরোচক খাদ্য ও পানীয় উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের গবেষক ও অধ্যাপক ড. মো. ছোলায়মান আলী ফকির ও তার গবেষণা দল।
শুক্রবার (০৯ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে চুকুর বা রোজেলা গাছের নানাবিধ ব্যবহার সম্পর্কে এসব তথ্য তুলে ধরেন প্রধান গবেষক ড. মো. ছোলায়মান আলী ফকির।
গাছটি সম্পর্কে গবেষক বলেন, খাদ্য হিসেবে রোজেল ফুলের স্থায়ী ও মাংসল বৃতি ব্যবহৃত হয়। বৃতি থেকে জ্যাম, জেলি, চা, আচার, চাটনি, জুসসহ বিভিন্ন পানীয় প্রস্তুত করা যায়। বৃতির রং উজ্জ্বল লাল হওয়ায় জৈব খাদ্য রং হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব। এছাড়া রোজেলকে শুকিয়ে এবং ফ্রিজিং করে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। এ উদ্ভিদের কচি পাতা রান্না ও সবজি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। পরিপক্ব বীজে প্রচুর পরিমাণে আমিষ ও চর্বি থাকায় এটি প্রক্রিয়াকরণের পর পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
গাছের ঔষধি গুণাগুণ সম্পর্কে গবেষক বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে, এ গাছের পাতা ও বৃতি ঔষধি গুণে ভরপুর। রঙিন বৃতিতে অ্যান্থোসায়ানিন, ফ্লাভনয়েড, ক্যারোটিনসহ গুরুত্বপূর্ণ এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। এসব উপাদান থাকায় এ উদ্ভিদ থেকে তৈরি খাদ্য ও পানীয় ক্লান্তি দুর, হৃৎপিণ্ডের ব্যথা প্রশমন, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ও ক্যানসারে কেমোথেরাপির পরে দ্রুত সুস্থতার জন্য খুবই উপকারী।
গাছটির বাংলাদেশে বাণিজ্যিক সম্ভাবনা নিয়ে গবেষক বলেন, বাইরের দেশগুলোতে এই গাছটির ব্যাপক চাহিদা থাকলেও আমাদের দেশে এর ব্যবহার তেমন একটা হয় না। তবে দেশে গাছটির বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ করা সম্ভব। রোজেলের একটি গাছে ১২০-১৬০টি ফল ধরে। প্রতিটি উদ্ভিদ থেকে আধা কেজি থেকে দেড় কেজি পরিপক্ব কাঁচা ফল পাওয়া যায়। জাত অনুসারে ফলগুলো সবুজ অথবা লাল বর্ণের হয়।
বাড়ির আশপাশে রৌদ্রময় বা আংশিক ছায়াযুক্ত উঁচু জায়গাতে ৪-৫টি রোজেল উদ্ভিদ থেকে একটি পরিবারের জন্য চা, জ্যাম, জুস, আচার ইত্যাদির চাহিদা মেটানো সম্ভব।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- বাকৃবির ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মো. আলমগীর হোসেন, অধ্যাপক ড. এ. কে. এম. আজাদ-উদ-দৌলা প্রধানসহ বিভাগের অন্যান্য শিক্ষক ও গবেষণার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীরা।
মুসাদ্দিকুল ইসলাম তানভীর/এসপি