প্রভাবশালী এক নারী আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন
বিশ্ববিদ্যালয়ের নোংরা শিক্ষক রাজনীতি ও ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেছেন গবেষণা প্রবন্ধে প্লেজারিজম বা চৌর্যবৃত্তির অভিযোগে শাস্তি পাওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সামিয়া রহমান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেট তাকে সহযোগী অধ্যাপক থেকে সহকারী অধ্যাপকে পদাবনতি দেওয়ার পর সোমবার (১ মার্চ) সংবাদ সম্মেলনে এসে তিনি দাবি করেন, ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মিথ্যা চিঠির ওপর ভিত্তি করে তাকে ফাঁসানো হয়েছে। এসময় তিনি তদন্ত কমিটির দুজন সদস্যের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ, ট্রাইব্যুনালে রায়ের প্রতিফলন সিন্ডিকেট মানেনি বলে অভিযোগ করেছেন। এছাড়াও ষড়যন্ত্রের সঙ্গে তার বিভাগসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক যুক্ত বলেও ইঙ্গিত দেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখেও তিনি কারো নাম উল্লেখ করেননি। সংবাদ সম্মেলনের পরপরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক তাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন বলে ফেসবুক স্ট্যাস্টাসে লিখেছেন সামিয়া রহমান।
তিনি লিখেছেন, ‘শুনলাম আমার এই প্রেস কনফারেন্সে চরম ক্ষুব্ধ, রাগান্বিত, এবং আমাকে একেবারে ধ্বংস করতে প্রতিশোধপরায়ণ হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন উচ্চপদস্থ ক্ষমতাধর নারী। যেহেতু তার নামটিও চলে এসেছে আমার বক্তব্যে প্রকাশ্যে বা অপ্রকাশ্যে বিভিন্ন ইন্টারভিউতে অথবা প্রেস কনফারেন্সে। তিনি এখন ভয়াবহ প্রতিশোধপরায়ন হয়ে গতকাল সকল সাংবাদিকদের ডেকে ডেকে আমার বিরুদ্ধে নিউজ করার জন্য উসকাচ্ছেন। বলছেন, যে কোনোভাবে সামিয়াকে ধ্বংস করে দিতে হবে। যে কোনো নিউজ দিয়ে, তা মিথ্যা হোক আর যাই হোক।’
‘সাংবাদিকদের কাছেই শুনলাম যাদের যাদের তিনি ফোন দিয়েছিলেন। বললেন, মিথ্যা সত্যের ধার ধারি না, যে কোনো মূল্যে সামিয়াকে শেষ করতে হবে। যে কোনো নিউজ করতে হবে সামিয়ার বিরুদ্ধে। প্রয়োজন হলে আমার সকল আর্টিকেলকে প্লেজারিজম বলে প্রমাণ করতে হবে। কারণ পদ ক্ষমতা তার হাতে, তিনি যদি বলেন, তবে এগুলো জনগণ মেনে নেবে। সাংবাদিকরা বললে জনগণ মেনে নেবে। যে করেই হোক সামিয়াকে টিকতে দেয়া হবে না। সামিয়ার এতো বড় সাহস, আমাদের বিরুদ্ধে প্রেস কনফারেন্স করে! এবার আমি তাকে শেষ মারটা দেব।’
‘উনার এতো ক্ষোভ কেন আমার বিরুদ্ধে? প্রথম থেকে উনি এবং উনার চামচারা কেন মিডিয়ার সামনে এতো সোচ্চার আমাকে নিয়ে? অ্যালেক্স মার্টিনের মিথ্যা চিঠির ষড়যন্ত্রের কি তিনিই তাহলে হোতা? প্রকাশ হয়ে যাবার ভয়ে আমাকে শেষ মার দেবার চেষ্টা? তার ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে যাচ্ছে তাই আমাকে নিয়ে সাংবাদিকদের নতুন করে উসকানোর চেষ্টায় তিনি এখন অতি ব্যস্ত।’
‘আচ্ছা যার নিজের বিরুদ্ধে প্লেজারিজমের অভিযোগ আসে, তার ক্ষমতার ভয়ে ২/৩টি বাদে আর কোনো মিডিয়া সাহস পায় না কাভারেজ দেবার, যিনি নিজে প্লেজারিজমের সাথে যুক্ত অন্তত ৫/৬ টি আর্টিকেলে, তিনি আবার কিভাবে অন্যকে নৈতিকথার কথা বলেন? বিচারক হবার যোগ্যতা তিনি আর রাখেন কি? ক্ষমতা পেয়ে কি তিনি এতোটাই করাপটেড হতে পারেন? তিনি এতোই প্রবল প্রতাপশালী যে দিনকে রাত করেন, কোনো সাংবাদিক তার বিরুদ্ধে লিখলে তার চাকরি চলে যায়, তার বিরুদ্ধে অনলাইনে লেখা এক ঘণ্টার মধ্যে ভ্যানিশ হয়ে যায়।’
‘আমার ফেসবুক বন্ধুদের জানিয়ে রাখলাম, এই মহিলা আবার আমার বিরুদ্ধে কাজ শুরু করেছেন সাংবাদিকদের ফোন দিয়ে, ডেকে ডেকে। তবে আমি এখন প্রায় নিশ্চিত আমার বিরুদ্ধে শিকাগো জার্নালের মিথ্যা চিঠির, পুরো ষড়যন্ত্রের হোতা কে? তিনি ছাড়া আর কি কেউ হতে পারেন?’
গত ২৮ জানুয়ারি একাডেমিক গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির দায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিয়া রহমান এবং অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজানের পদাবনতি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি পিএইচডি গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির অভিযোগে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুহাম্মদ ওমর ফারুককেও একই শাস্তি দেওয়া হয়।
সামিয়া রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে সামিয়া ও অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক সৈয়দ মারজানের যৌথভাবে লেখা ‘আ নিউ ডাইমেনশন অব কলোনিয়ালিজম অ্যান্ড পপ কালচার : আ কেস স্টাডি অব দ্য কালচারাল ইমপেরিয়ালিজম’ শীর্ষক আট পৃষ্ঠার একটি নিবন্ধ পাঁচ পৃষ্ঠা ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকোর ১৯৮২ সালে প্রকাশিত ‘দ্য সাবজেক্ট অ্যান্ড পাওয়ার’ শীর্ষক নিবন্ধ থেকে হুবহু নকল করেছেন।
২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে বিষয়টি জানায় ওই গ্রন্থের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো প্রেস নিবন্ধটিতে ফুকো ছাড়াও ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত মার্কিন বুদ্ধিজীবী অ্যাডওয়ার্ড সাঈদের ‘কালচার অ্যান্ড ইমপেরিয়ালিজম’ গ্রন্থের পাতার পর পাতা হুবহু কপি করা হয়েছে।
একই বছরের সেপ্টেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরীন আহমাদকে প্রধান করে একটি কমিটি করে সিন্ডিকেট। দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০১৯ সালে তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়। কমিটি কোনো শাস্তি দেওয়ার কথা বলেনি।
এরপর গত বছরের অক্টোবরে সিন্ডিকেট সভায় আইন অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন ও সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহকে চেয়ারম্যান করে তিন সদস্যের একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। ট্রাইব্যুনাল ইনক্রিমেন্ট কাটার মতো ‘লঘু শাস্তির’ সুপারিশ করলেও সিন্ডিকেট তা নাকচ করে তাদের পদাবনতি দিয়েছে।
এনএম/আরএইচ