বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে ঢাবি শিক্ষার্থীদের ভিন্নধর্মী ভাবনা
১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া দেশের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এ বছর প্রতিষ্ঠার ১০১ পেরিয়ে ১০২ বছরে পদার্পণ করেছে দেশসেরা এই বিদ্যাপীঠ। বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রতিটি অধ্যায়ের সঙ্গে এ বিশ্ববিদ্যালয় জড়িত। দেশের ইতিহাস, সমাজব্যবস্থা, অর্থনীতি-প্রতিটি ক্ষেত্রেই অনস্বীকার্য অবদান রেখেছে শীর্ষ এ বিদ্যাপীঠ।
অর্জনের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের আক্ষেপও কম নেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০২ তম বর্ষে পদার্পণ উপলক্ষে শিক্ষার্থীরা নিজেদের ক্যাম্পাস নিয়ে তাদের ভিন্ন ভিন্ন মনোভাব জানিয়েছেন। নিজেদের আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা ব্যক্ত করেছেন। তাদের ভাবনা তুলে ধরেছেন ঢাকা পোস্টের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক আমজাদ হোসেন হৃদয়।
বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আরাফাত চৌধুরী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমার কাছে এক অনির্বচনীয় ভালোবাসার আবেগ, এক চির অম্লান স্মৃতির মিনার, জ্ঞানের উজ্জ্বল দীপ্তিমান প্রদীপ। নিঃসন্দেহে এই বিদ্যাপীঠ মুক্তবুদ্ধি চর্চার এক অবারিত প্রতিষ্ঠান। এদেশের বহু জ্ঞানীগুণী, পণ্ডিত, শিল্পী-সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী, গবেষক ও রাজনীতিবিদের জন্ম হয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস, ভাষা আন্দোলন, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ দেশের সব ক্রান্তিকালে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে প্রাণের এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্বে ইতিহাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় যেটি একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশের মানচিত্র এঁকে দিয়েছে, জন্ম দিয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশের। শতবর্ষী এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে প্রত্যাশা থাকবে আগামীর টেকসই শিক্ষার উন্নয়নে, জাতি গঠনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হবে অগ্রনায়ক।
‘শিক্ষার চেয়ে সুস্থ থাকাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে’ উল্লেখ করে ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী তামান্না আক্তার বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের আবেগের জায়গা, হল আমাদের সেকেন্ড হোম। কিন্তু সেই সেকেন্ড হোম যখন খাদ্য নামক অখাদ্য গলধঃকরণ করায় তখন আফসোস করেই বলতে হয় আসলেই কী হল আমাদের সেকেন্ড হোম হতে পারে? একজন শিক্ষার্থীর জ্ঞানচর্চাকে বিকশিত করতে প্রয়োজন সুস্বাস্থ্য। অথচ প্রশাসনের সেদিকে কোনো ভ্রূক্ষেপই নেই। একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের দৈনিক কমপক্ষে যে ক্যালরি প্রয়োজন সেটাও হলের তিনবেলার খাবারে পূরণ হয় না। করোনা পরবর্তীকালে দফায় দফায় খাবারের দাম কয়েকগুণ বাড়ালেও, বাড়েনি খাবারের মান। এই অবস্থায় শিক্ষার চেয়ে সুস্থ থাকাই আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে খাবারের দাম কমানোর জন্য প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ এবং খাবারের দাম ও মান নিয়ন্ত্রণে বিশেষ মনিটরিং সেল গঠনের দাবি জানাই।
গবেষণামুখর বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি জানিয়ে মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আসাদুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিং নিয়ে খুব আলোচনা হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য র্যাংকিং উন্নয়নের সূচক নিয়েও কথা বলেছেন। যদিও অনেকেই সেই সূচকের বিষয়ে খুব সচেতন নয়। গবেষণার জন্য সেরকম পরিবেশ তৈরিও গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্য গবেষণার কাজে শিক্ষকদের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরাও অবদান রাখতে পারে। শিক্ষার্থীদের মাঝে গবেষণা সংস্কৃতি গড়ে তুলতে আমাদের গবেষণা সংসদ কাজ করছে। আবাসন সংকট, ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থা ও পর্যাপ্ত গবেষণার অভাবের বিষয়টি আমাদের ভীষণ পীড়া দেয়। তাই অন্তত শতবর্ষে এসে এ বিষয়গুলোতে কর্তৃপক্ষ নজর দেবে, সেই প্রত্যাশাই করছি।
ক্যাম্পাসে যানবাহনের গতিসীমা নির্ধারণ করার দাবি জানিয়ে পালি অ্যান্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী শারমিন খাতুন বলেন, দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। শতবর্ষ শেষে এ বিশ্ববিদ্যালয় আজও পুরোপুরি নিরাপদ ক্যাম্পাস হয়ে উঠতে পারেনি। ক্যাম্পাসে অনিয়ন্ত্রিত যানবাহন, হর্ন, শব্দদূষণ এখানকার নিয়মিত সমস্যা। সে সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সড়ক দুর্ঘটনাও। সেন্ট্রাল লাইব্রেরি, ভিসি চত্বর, রাসেল টাওয়ার প্রভৃতি জায়গায় শিক্ষার্থীদের নিরাপদ রাস্তা পারাপারের জন্য জেব্রা-ক্রসিংয়ের ব্যবস্থা থাকলেও গতির যেন নেই কোনো নিয়ন্ত্রণ! সুনির্দিষ্ট নীতিমালা এবং নজরদারির অভাবে টিএসসি, রাজু ভাস্কর্য, রোকেয়া হল, ভিসি চত্বর, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন দিকে দিনদিন গাড়ির বেপরোয়া গতি বেড়েই চলেছে। ফলে শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়েই রাস্তা পার হতে হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ, দ্রুত যানবাহন নিয়ন্ত্রণ ও গতিসীমা নির্ধারণ করে শিক্ষার্থীদের একটি নিরাপদ ক্যাম্পাস উপহার দিন।
অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া বিনতে হোসাইন বলেন, সব নৈতিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া এবং সংকটে পথ দেখানো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শততম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পেরোলেও এখনো সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজেশনে যুগে প্রবেশ করতে পারেনি। রেজিস্ট্রার ভবনের যে ভোগান্তির মুখোমুখি হতো শিক্ষার্থীরা, তা কিছুটা লাঘব হলেও পুরোপুরি হয়নি। এছাড়া এখনো আবাসন সংকটেরও সমাধান হয়নি। যেখানে বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আলাদা থাকা উচিত সেখানে একজনের খাটে থাকতে হয় দুজনকে। হলের খাদ্যের নিম্নমান, যানবাহন সংকট, গেস্টরুম কালচার এসব বিষয়েও নজর দেওয়া উচিত।
এইচআর/এসএম