কোনো বাবা যেন আর কোনো সনিকে না হারায়
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কেমিকৌশল বিভাগের ছাত্রী সাবেকুন নাহার সনির ২০তম মৃত্যুবার্ষিকী ও ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসবিরোধী দিবস যথাযথ মর্যাদায় পালন করেছেন বুয়েটের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (৮ জুন) সকালে বুয়েটের সাবেকুন নাহার সনি হলের সামনে স্থাপিত সনি স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন সনি মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন ও বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা।
এরপর সনি মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে সন্ত্রাসমুক্ত শিক্ষাঙ্গনের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে বক্তব্য দেন নাগরিক সমাজ ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা খবির উদ্দীন খান, সনির বাবা হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া, বড় ভাই মো. মামুন মোল্লা, সনির চাচী মালতী ফারুক, খালা রোকেয়া খানম, সনি মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান হাবিবুল্লাহ নিয়ামুল করিম, স্থপতি বিজয় তালুকদার, স্থপতি সুব্রত সরকার প্রমুখ।
মানববন্ধনে অংশ নেন বুয়েটের সাবেক ছাত্রনেতা প্রকৌশলী হাবিব আহমেদ হালিম মুরাদ, প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান মনির, প্রকৌশলী শফিউল আলম ডলার, প্রকৌশলী অমিত কুমার চক্রবর্তী, প্রকৌশলী রনক আহসান, প্রকৌশলী তন্ময় আহমেদ, প্রকৌশলী আবু হাসান মাসুদ, প্রকৌশলী আবু সাইদ কনক, প্রকৌশলী জয় প্রকাশ প্রমুখ। এতে যোগ দেন বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরাও।
মানববন্ধনে সাবেকুন্নাহার সনির বাবা হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, আমার সনিকে হারিয়েছি, কোনো বাবা যেন আর কোনো সনিকে না হারায়। শিক্ষাঙ্গন একদিন সন্ত্রাসমুক্ত হবে। তার জন্য অনেক দিন অপেক্ষা করতে হবে, এটা জানি। তবে আমি হতাশ নই। একদিন দেশে সুদিন আসবে। হাজারো বেঁচে থাকা সনিদের জন্য সুন্দর পরিবেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকার করতে হবে।
খবির উদ্দিন খান বলেন, আমরা আমাদের সন্তানদের যদি হিংসা-বিদ্বেষ ও পরশ্রীকাতরতার ঊর্ধ্বে রেখে মানবিক গুণাবলীতে গুণান্বিত করতে পারি, তাহলে দেশের সব শিক্ষাঙ্গন পুরোপুরি সন্ত্রাসমুক্ত হবে। দেশের মঙ্গলের জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ কাজ করার আহ্বান জানাই।
সনির বড় ভাই নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. মামুন মোল্লা বলেন, আমার বোনের মৃত্যু হলেও আমাদের চাওয়া-পাওয়া ছিল শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস থাকবে না। কিন্তু তার বহিঃপ্রকাশ আমরা দেখিনি। ছাত্ররাজনীতির সব জায়গায় সন্ত্রাসীদের আগ্রাসন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে প্রতিনিয়ত সিট নিয়ে মারামারি হচ্ছে। এসবের আমরা অবসান চাই।
মানববন্ধনে বক্তারা শিক্ষাঙ্গনকে সন্ত্রাসমুক্ত করার লক্ষ্যে কাজ করার জন্য সরকার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানান। একইসঙ্গে ৮ জুনকে ‘সন্ত্রাসমুক্ত শিক্ষাঙ্গন দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তারা। পাশাপাশি সনির হত্যাকারী সাজা পাওয়া পলাতক ছাত্রদল নেতা মুকি, টগরসহ সব আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের রায় কার্যকরের দাবি জানান।
মানববন্ধনে সনি মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ৬ দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো-
১. শিক্ষাঙ্গনে দলীয় লেজুড়বৃত্তি ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি আইন করে নিষিদ্ধ করা হোক;
২. রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে শিক্ষার্থীদের অপব্যবহার অবিলম্বে বন্ধ করা হোক;
৩. অঙ্গ সংগঠনের পরিচয়ে ছাত্র সংগঠনের ছত্রছায়ায় টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি বখাটেপনার বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক;
৪. শিক্ষার্থীদের সুস্থ সাংস্কৃতিক ও খেলাধুলার চর্চার পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক;
৫. শিক্ষাঙ্গনে মেয়েদের নির্বিঘ্নে চলাফেরা নিশ্চিত করাসহ সকল প্রকার নির্যাতনের বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা সময়ের দাবি;
৬. স্বাধীনতা পরবর্তী শিক্ষাঙ্গনে সংগঠিত সকল হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক।
২০০২ সালের এ দিনে বুয়েট চত্বরে টেন্ডারবাজিকে কেন্দ্র করে তৎকালীন সরকারি দলের ছাত্রসংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের দুই গ্রুপের বন্দুকযুদ্ধে বুয়েটের কেমিকৌশল বিভাগের ছাত্রী সাবেকুন নাহার সনি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এরপর থেকে দিনটিকে ‘সন্ত্রাস বিরোধী দিবস’ হিসেবে পালন করে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা।
এএজে/আরএইচ