রাবিতে স্বাধীনতা দিবসের খাবার ছিনিয়ে নিল ছাত্রলীগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আবাসিক ছাত্রদের জন্য বরাদ্দকৃত খাবার ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।
শনিবার (২৬ মার্চ) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুজ্জোহা হলের ডাইনিংয়ে আবাসিক ছাত্রদের খাবার বিতরণকালে এ ঘটনা ঘটে। এসময় ১২০ প্যাকেট খাবার নিয়ে যায় সংগঠনটির নেতারা যা টোকেনের বিপরীতে পাওয়ার কথা ছিল শিক্ষার্থীদের। এ ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন, হলটির নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি চিরন্তন চন্দ ও সাধারণ সম্পাদক মোমিন ইসলামের নেতৃত্বাধীন বেশকিছু অনুসারী।
হল প্রশাসন ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ বিরতির পর এবার মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ৩০ টাকার টোকেনের বিপরীতে শুধুমাত্র আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য উন্নতমানের খাবারের আয়োজন করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শনিবার দুপুরে শিক্ষার্থীরা যখন খাবার নেয়ার জন্য হলটির ডাইনিংয়ের বাইরে অপেক্ষা করছিল তখন হল ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে বেশকিছু অনুসারী জোরপূর্বক ভেতরে প্রবেশ করেন।
এসময় হল প্রাধ্যক্ষ ও আবাসিক শিক্ষকদের উপস্থিতিতে ১২০ প্যাকেটের মতো খাবার ছিনিয়ে নিয়ে যায় তারা। এতে টোকেনধারী শিক্ষার্থীদের জন্য বিকল্প খাবার কিনতে বাধ্য হয় হল প্রশাসন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সারোয়ার বলেন, আমি যখন টোকেন নিয়ে খাবার নেয়ার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলাম তখন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের এমন আচরণ দেখে হল প্রাধ্যক্ষের কাছে আমার টোকেনটি জমা দিয়ে খাবার না নিয়েই চলে আসি। ছাত্রলীগের মতো এমন ঐতিহ্যবাহী এক সংগঠন আজকে স্বাধীনতা দিবসের মতো দিনে সামান্য খাবার নিয়ে যে আচরণ করেছে তা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোমিন ইসলাম বলেন, হল প্রাধ্যক্ষের কাছে আমরা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ১০০ প্যাকেট খাবার দাবি করেছিলাম। সেই হিসেবে কর্মীরা সম্মিলিতভাবে গিয়ে খাবার নিয়ে আসে। এতে কিছুটা খাবারের সংকট পড়ে। তবে যারা খাবার পায়নি, প্রাধ্যক্ষ স্যার তাদের জন্যও খাবারের ব্যবস্থা করেছেন। এখানে খাবার ছিনতাইয়ের মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, আমি খাবারে অনিয়মের বিষয়টি অবগত নই। আর এ রকম ঘটনা হওয়া সমীচীন নয়। যে বা যারা এ ঘটনায় জড়িত আমরা তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।
এ বিষয়ে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. একরামুল ইসলাম বলেন, আমাদের আয়োজনে কোনো ঘাটতি ছিল না। এ হলের যারা ছাত্রলীগের দায়িত্বে আছে তাদের ইন্ধনে নেতাকর্মীরা এসে জোরপূর্বক ১১২টিরও অধিক খাবার নিয়ে গেছে। এজন্যই খাবারের সংকট পড়েছে। শিক্ষার্থী হিসেবে তাদের যে আচরণ থাকা উচিত তা তারা আমাদের সঙ্গে করেনি। আমরা তাদের আচরণে দুঃখ পেয়েছি। যেসব শিক্ষার্থী টোকেন থেকেও খাবার পায়নি তাদেরকে আমরা বাইরে থেকে খাবার এনে দিয়েছি। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের খাবার ছিনিয়ে নেয়ার বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানিয়েছি। তারা যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, জোহা হলে খাবার ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনাটির ব্যাপারে শুনে আমরা প্রক্টরিয়াল টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিদর্শন করে এসেছি। এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সম্পর্কে হল প্রাধ্যক্ষ আমাদের কাছে রিপোর্ট পেশ করলে প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।
মেশকাত মিশু/এমএএস