আগেই সতর্ক করেছিলেন গোয়েন্দারা, ব্যবস্থা নেয়নি বিমানের কর্তারা
সোনা চোরাচালানে বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজে কর্মরতদের জড়িত থাকার বিষয়ে এক রকমের নিশ্চিতই ছিলেন শুল্ক গোয়েন্দারা। কারণ বিমানের যেসব স্থান থেকে একের পর এক সোনা উদ্ধার হচ্ছিল, সাধারণ কোনো যাত্রীর পক্ষে সেখানে সোনা রাখা সম্ভব না। আবার বিমানের লোকজনকে স্বাভাবিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা সম্ভব না। তাই বিষয়টি সকল বিমান কোম্পানিকে চিঠি দিয়ে অবহিত করা হয়েছিল।
কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ মুসফিকুর রহমান গত ১১ নভেম্বর চিঠিটি পাঠান। এ ঘটনার প্রায় দেড় মাস পর আজ (বৃহস্পতিবার) চট্টগ্রামে বিমানের বিজি-১৪৮ ফ্লাইটের ৯জে সিটের নিচ থেকে ২০টি সোনার বার উদ্ধার করা হয়। ফ্লাইটটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই থেকে উড়াল দিয়ে চট্টগ্রাম পৌঁছায়। সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা চট্টগ্রাম বিমানবন্দর টিম, বিমানবন্দর নিরাপত্তা শাখা এবং শুল্ক গোয়েন্দা বিমানটিতে যৌথ অভিযান চালায়।
এদিকে একের এক গোপন স্থান থেকে সোনার বার উদ্ধার হওয়ায় এবার নড়েচড়ে বসেছে শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার সোনা জব্দের পর আতিয়া সামিয়া নামে এক যাত্রীকে আটকের পাশাপাশি বোয়িং-৭৭৭-৩ই৯ (ইআর) মডেলের বিমানটি জব্দ করা হয়। তবে কাগজে-কলমে বিমানটি জব্দ করা হলেও যাত্রী নামিয়ে এটি রাজধানীর উদ্দেশ্যে উড়াল দেয়। এ বিষয়ে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
দেড় মাস আগে বিমান কোম্পানিগুলোকে দেওয়া চিঠিতে শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ উল্লেখ করে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অবতরণকৃত বিভিন্ন উড়োজাহাজের মাধ্যমে চোরাচালানের উদ্দেশ্যে আনা স্বর্ণ কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে আটক করা হয়ে থাকে। পরবর্তীতে আটককৃত স্বর্ণ কাস্টমস আইনের বিধান অনুযায়ী প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণসহ উক্ত ঘটনায় জড়িত ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে (যদি থাকে) এ দপ্তর কর্তৃক ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়। কিন্তু, যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ বিবেচনায় এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনানুগ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জাহাজসমূহ অন্তবর্তীকালীন ছাড় দেওয়া হয়।
‘চোরাচালানকৃত স্বর্ণ অনেক ক্ষেত্রেই উড়োজাহাজের সিটের নিচে, বাথরুমে, বাথরুমের পাইপের নিচে, কেটারিং এরিয়া, লাগেজ সংরক্ষণের স্থানসহ বিভিন্ন অভিনব কায়দায় লুকায়িত অবস্থায় থাকে। সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্সের নিজস্ব কর্মকর্তা বা কর্মচারীরা জড়িত না থাকলে এ ধরনের অপতৎপরতা সংঘটন সম্ভব নয়। এর দায় এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না। কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর বিশ্বাস করে এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট সচেতন ও কঠোর হলে এ ধরনের স্বর্ণ চোরাচালান প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।’
আরও পড়ুন
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, উড়োজাহাজের অভ্যন্তরে বিভিন্নভাবে লুকিয়ে এ ধরনের চোরাচালান যেন সংঘটিত হতে না পারে সে লক্ষ্যে সুস্পষ্ট, সুদৃঢ় এবং দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বিমান কোম্পানিগুলোকে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হল। ভবিষ্যতে, এ ধরনের চোরাচালানের ঘটনা সংঘটিত হলে এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিদ্যমান বিধি বিধান অনুযায়ী মামলা দায়েরসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. মিনহাজ উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা কিছুদিন আগেই বিমান কোম্পানিগুলোকে চিঠি দিয়ে সতর্ক করেছি। কিন্তু সবশেষ আজ (বৃহস্পতিবার) চট্টগ্রাম এয়ারপোর্টে বিমানের সিটের নিচে বিশেষ স্থান থেকে সোনার বার পাওয়া গেছে। বিমানের কর্মকর্তা বা কর্মচারীরা জড়িত না থাকলে কোনো যাত্রীর পক্ষে এ স্থানে সোনার বার রাখা সম্ভব না। তাই আমরা এবার অভিযুক্ত যাত্রীর পাশাপাশি বিমানটিও জব্দ করেছি। এ বিষয়ে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এমআর/এনএফ