তৃতীয় টার্মিনাল তৈরিতে দুর্নীতি হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হবে
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ বলেছেন, এখন পর্যন্ত ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল তৈরিতে ২৩ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। একটি কি-নোট পেপারে দেখলাম দুর্নীতি না হলে এত টাকা খরচ হওয়ার কথা না। নিশ্চয়ই আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব।
সোমবার (২ ডিসেম্বর) রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেল ল্যা মেরিডিয়ানে এভিয়েশন অ্যান্ড ট্যুরিজম জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ (এটিজেএফবি) আয়োজিত 'তৃতীয় টার্মিনাল : সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ' শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
হাসান আরিফ বলেন, সবকিছুতেই সংস্কারের একটি বিষয় আসছে। দুদকও সংস্কার করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিগত সরকারের ১৭ বছরে যা যা ঘটেছে, সেগুলোর শ্বেতপত্র আসছে। সেভাবে বিমানেরও শ্বেতপত্র আসবে। শ্বেতপত্র মানে শুধু অভিযোগই আনা না, এটি আত্মশুদ্ধির একটি প্রক্রিয়া।
আরও পড়ুন
তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিমানের তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের মতো সক্ষমতা আছে কী নেই, এটা প্রাথমিকভাবে পারসেপশনের একটি বিষয়। তার কারণ, বিমানের এতদিন যে সার্ভিস আমরা পেয়ে আসছি সেটা মনঃপূত না। একটি কমন অভিযোগ, আমি টিকিট পাই না কিন্তু ওঠে দেখি পুরো বিমান ফাঁকা। বিমান যেহেতু এখন আমার দায়িত্বে, সক্ষমতা বৃদ্ধির ব্যাপারে কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে সেগুলো নিয়ে গতকাল (রোববার) আলোচনা করেছি। শুধু আলোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ না, আমি এগুলোর ইনসপেকশনে যাই।
গোলটেবিল বৈঠকে নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও এভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এওএবি) সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান কি-নোট পেপারে বলেন, থার্ড টার্মিনাল ঘিরে বিগত দেড় দশকজুড়ে আমরা একাধারে সম্ভাবনা বা রঙিন স্বপ্নের বয়ান শুনে আসছি। আমরা হতাশাবাদী হতে চাই না, কিন্তু বাস্তবে থার্ড টার্মিনাল ঘিরে নানা অনিয়ম আর সমস্যা নিয়ে আমরা কি আশাবাদী হতে পারি? টার্মিনালটির কাজ শেষ হতে হতে নির্মাণ ব্যয় ২৫ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়াবে।
তিনি আরও বলেন, থার্ড টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং সেবা এবং টার্মিনাল অপারেশন উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে একাধিক কোম্পানিকে দেওয়া হোক। এখানে বিমান প্রসঙ্গ নয় বরং গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং সেবার মনোপলি ভাঙা সম্ভব হলে দেশ ও জাতি উপকৃত হবে।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া বলেন, শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনালসহ দেশের সব টার্মিনালগুলোকে উন্নত করার জন্য বেবিচক কাজ করছে। এসব টার্মিনালের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য উপদেষ্টার সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। এখন শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনাল চালু জাতির কাছে একটা স্বপ্ন। তবে এজন্য বেবিচক বসে নেই। সংশ্লিষ্ট সবাই কাজ করে যাচ্ছেন।
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ ও বিমান পরিচালনা বোর্ডের সাবেক সদস্য কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, বিশ্বের কোথাও রাজধানীর জনবসতির ভেতর বিমানবন্দর নেই। সেখানে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তথা তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের সময় তা বিবেচনা করা হয়নি। এমন অপরিকল্পিত কার্যক্রমের জন্য ৫৪ বছরেও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) অর্জন শূন্য। এয়ারলাইন্সদের বিমানের গ্রাহক, তাদের সমস্যা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সমাধান করতে হবে।
অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) সভাপতি আবদুস সালাম আরেফ বলেন, বাংলাদেশের যাত্রী পরিবহন করে বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো সন্তুষ্ট না। তারা জানিয়েছে— বিশ্বে অন্যান্য যে কোনো দেশের তুলনায় শাহজালাল বিমানবন্দরে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং চার্জ বেশি। শাহাজালাল বিমানবন্দরকে এভিয়েশন হাব করতে হবে।
ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের জিএসএ রিদম গ্রুপের হেড অব বিজনেস মাসুদুজ্জামান বলেন, বিমান বাংলাদেশের জাতীয় এয়ারলাইন্স প্রতিষ্ঠান। আমরা চাই বিমান গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং করুক। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো তাদের কাজের প্রক্রিয়া দীর্ঘ। বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনার আগে বিমান থেকে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং সেবার অনুমতি নিতে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের চার মাসের বেশি সময় ঘুরতে হয়েছে।
এয়ারলাইন্স অপারেটরস কমিটি ঢাকার (এওসি) চেয়ারপারসন দিলারা হোসেন বলেন, শাহজালাল বিমানবন্দরে আজ থেকে ৩০-৪০ বছর আগে যেসব অভিযোগ শুনেছি, এখনো একই ধরনের অভিযোগ আসছে। এই বিমানবন্দরে ক্রমেই বিদেশি এয়ারলাইন্স বাড়ছে। কিন্তু গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের সেবার মান বাড়ছে না।
এমএইচএন/এমজে